রোদে পোড়া ত্বকের যত্ন
আজকাল আবহাওয়ায় তাপ কম হলেও শুষ্ক মৌসুমে ত্বক রোদে পুড়তে পারে। কারণ ত্বকে আদ্রতা কমে যায়। তাই রোদের অল্প তাপেও চামড়া তামাটে হতে সময় লাগে না। আবার রোদে পোড়ার কারণে আগে থেকেই অনেকে নানা সমস্যায় ভুগছেন।
এই রকম সমস্যার সমাধান দিয়েছেন অ্যারোমা থেরাপিস্ট ও আকাঙ্ক্ষা’স গ্লামার ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জুলিয়া আজাদ।
মানুষ বা প্রাণীর ত্বকে মেলানিন নামক এক ধরনের পিগমেন্ট বা রঞ্জক পদার্থ রয়েছে। যা সূর্যের ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট বা অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। সূর্যের আল্টাভায়োলেট রশ্মির ফলে মেলানিন ত্বকের উপরিভাগে চলে আসে। এর রং গাঢ় হওয়ায় ত্বকের রংও তখন কালো দেখায়। এই অবস্থাকেই সাধারণত বলা হয় ‘সানট্যান’ বা রোদে পোড়া ভাব।
সানট্যানের এর ফলে ত্বকে রিংকেলস বা চামড়ায় ভাজ দেখা দেয় তাড়াতাড়ি। যাকে বলে প্রিম্যাচিউর এইজিং, খাঁটি বাংলায়— অকালে বুড়ো হয়ে যাওয়া।
এছাড়া রোদে বেশি পোড়ার কারণে কারো কারো ত্বকে ফ্রেকলস্ অর্থাৎ তিল বা মেচেতার সমস্যাও দেখা দেয়।
অ্যালোভেরা এক ধরনের উদ্ভিদ। যা সানট্যান দূর করতে ভালো কাজ দেয়। বাজারে এই গাছের পাতা কিনতে পাওয়া যায়। দোকানে অ্যালো ভোরার জেলও পাওয়া যায়। সেটাতে সাধারণত প্রিজারভেটিভ দেওয়া থাকে।
অ্যালো ভেরার পাতা ফ্রিজে রেখে সপ্তাহখানেক ব্যবহার করা যায়। অ্যালো ভেরার জেল ত্বকে ময়শ্চারাইজ বা ত্বকের আদ্রতা ফিরিয়ে আনতে খুব ভালো কাজ করে। চুলের জন্যেও ভালো।
টাটকা অবস্থায় অ্যালো ভেরার পাতা থেকে রস বের করে সরাসরি ব্যবহার করলে কোনো ক্ষতি নেই। ১ ঘন্টা পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
তবে একসঙ্গে সব রস বের করে ফ্রিজে রাখা উচিৎ নয়। কারণ একবারে সব রস বের করে নিলে এর গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়।
সানট্যান সারাতে আরও একটি ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। ময়দা, দুধ, লেবুর রস, ডিমের সাদা অংশ ও মধু মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে ব্যবহার করুন। হাতে, পায়ে ও মুখে মাখতে পারবেন। ২০ মিনিট পর ভেজা হাতে অথবা স্প্রে করে মাস্ক ভিজিয়ে নিয়ে ভালো করে মালিশ করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে সপ্তাহে অন্তত ২ দিন করুন।
রোদে পোড়া সমস্যা বেশি হলে অবশ্যই এক্সফোলিয়েটিং করতে হবে। এই পদ্ধতিতে ত্বকের মরা চামড়া বিভিন্ন ক্রিম ব্যবহার করে উঠানো হয়। তবে মুখে যদি ব্রণ না থাকে এক্সফোলিয়েটিং না করাই ভালো।
বাড়িতে তৈরি স্ক্রাব দিয়ে এক্সফোলিয়েটিং করুন। মরা চামড়া উঠে গেলে এমনিতেই সানট্যান হালকা হয়ে ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
আরও একটি ভালো উপায় হল, ত্বক ভালো করে ভিজিয়ে শুকনা বেকিং সোডা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মালিশ করে লাগান। ৫ মিনিট পর ক্লকওয়াইজ এবং অ্যান্টি-ক্লকওয়াইজ মালিশ করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপর অবশ্যই টোনার ময়শ্চারাইজার লাগাবেন।
ড্রাই বেকিং সোডা হাত, পা বা শরীরের জন্য ভালো কাজ করে। এছাড়া আলফা হাইড্রোক্সিডোস সমৃদ্ধ লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যাবে।
সানট্যানের সমস্যা থাকলে বাইরে বের হওয়ার সময় ফুলহাতা ড্রেস পরুন। অবশ্যই ত্বক অনুযায়ী সান্সক্রিম লোশন ব্যবহার করার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। এই ধরনের ক্রিম ব্যবহার করার জন্য সময় একটা বড় বিষয়।
বাইরে বের হওয়ার অন্তত ১৫ মিনিট আগে সান্সক্রিম লাগান। যতই কষ্ট হোক যাদের ত্বকে মেলানিনের আধিক্য আছে তাদের এই কাজটুকু করতেই হবে। বাড়ি ফিরে অবশ্যই ধুয়ে ফেলুন।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ওয়াটার-বেইস ও শুষ্ক ত্বকের জন্য ময়শ্চারবেইস সান্সক্রিম ব্যবহার করুন। স্যান্সক্রিমের কৌটার গায়ে সাধারণত (SPF) লেখা থাকে। এর মানে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর। এই লেখা দেখে কিনুন।
সবশেষে সহজ এবং খুব ভালো একটি ঘরোয়া টিপস রইল।
ফ্রিজে রাখা ঠাণ্ডা দুধে একটু সেফরন অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে প্রতিদিন। এটা ক্লিনজিংয়ের কাজও করবে। আর রোদে পোড়া ভাবও হালকা করবে। তুলা দুধে ভিজিয়ে পুরো মুখে, হাতে লাগাতে হবে। পায়ের পাতা বা খোলা অংশে যদি সানট্যান হয়ে থাকে সেখানেও ব্যবহার করতে হবে। ৫ মিনিট রেখে একটু মালিশের মাধ্যমে পরিষ্কার করে নিন। এখন টোনার ও ময়েশ্চরাইজার ব্যবহার করলে সানট্যানের সমস্যা অনেকখানি কমে যাবে।
এইসব চর্চা নিয়মিত করতে পারলে ত্বক পূড়ে যাওয়া নিয়ে ভাবতে হবে না।