Published On: Sat, Jun 22nd, 2013

বেসরকারি কলেজ ভর্তিতে গলাকাটা ফি আদায়

Share This
Tags

942793_658873257463205_726396967_nশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে টাকার পরিমাণ বেঁধে না দেয়ায় রাজধানীর বেসরকারি কলেজগুলো একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো টাকা আদায় করছে। রাজধানীর শীর্ষস্থানীয় ১০টি কলেজে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি হতে খরচ হচ্ছে আট থেকে ২৫ হাজার টাকা।
গত ১৭ জুন ভর্তির জন্য মনোনীতদের তালিকা প্রকাশের পর এখন কলেজেগুলোতে শিক্ষার্থীদের ভর্তি পর্ব চলছে। আগামী ১ জুলাই থেকে একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুন বলেছেন,
এখন পর্যন্ত বাড়তি ফি আদায়ের অভিযোগ নিয়ে কেউ আসেননি। অভিযোগ আসলে অবশ্যই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, সরকারের খামখেয়ালি আচরণের জন্য ছাত্রছাত্রীদের ভুগতে হচ্ছে। এবারের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নীতিমালা চূড়ান্ত হয় গত ২৭ মে। ওই নীতিমালায় শুধুমাত্র কয়েকটি খাতের জন্য ফি নির্ধারণ করে দেয়া হয়। কিন্তু ভর্তির সময় সর্বোচ্চ কত টাকা নেয়া যাবে তা বলে দেয়া হয়নি। নীতিমালা করার আগে কলেজের অধ্যক্ষদের নিয়ে মন্ত্রণালয়ে একটি সভা হয়। এ সভায় একজন অধ্যক্ষ ছাত্র ভর্তিতে সর্বোচ্চ কত টাকা নেয়া যাবে তা বেঁধে দেয়ার প্রস্তাব করলেও তা করা হয়নি। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিশ্বাস ‘কলেজগুলো দায়িত্বশীল আচরণই করবে’।
নীতিমালায় কেবল রেজিস্ট্রেশন, ক্রীড়া, রোভার বা রেঞ্জার, রেড ক্রিসেন্ট, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বার্ষিক ক্রীড়া ফি মিলে ছাত্রছাত্রীদের জন্য মোট ৩৯২ টাকা দেয়ার কথা।
রাজধানীর ১০টি কলেজে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভর্তিতে যে যার মতো করে টাকা নিচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ভর্তি ফি আদায় করেছে রাজধানীর ক্যামব্রিয়ান কলেজ। ক্যামব্রিয়ান কলেজের একজন কর্মকর্তা বলেন, ক্যামব্রিয়ানে পড়তে হলে জিপিএ ৫ পাওয়া একজন ছাত্রকে আড়াই লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। প্রথমে ২৫ হাজার টাকা এবং পরে ১৮টি কিস্তিতে বাকি টাকা দিতে হয়। যদি কেউ কলেজের হোস্টেলে থাকে তাহলে আলাদাভাবে ২০ হাজার টাকা দিতে হবে। এর বাইরে প্রতিমাসে আট হাজার টাকা করে থাকা-খাওয়ার খরচ দিতে হবে।
ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে যে টাকাটা নেয়া হচ্ছে সেটা বেশি বলে মনে করেন কি না, জানতে চাইলে কলেজের চেয়ারম্যান এম কে বাশার বলেন, এখনো তাকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কলেজ চালাতে হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের জন্য তিনি যা ব্যয় করেন, তার চেয়ে আয় কম। আড়াই লাখ টাকার মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের খাতা-কলমের ব্যয়ও ধরা আছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিভাবক বলেন, তিনি তার ভাগি্নকে ন্যাশনাল আইডিয়াল কলেজে ভর্তির সময় সাড়ে ১৬ হাজার টাকা দিয়েছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে রসিদ দিয়েছে। সেখানে ২১টি খাতের উল্লেখ আছে। তবে কোন খাতে কত টাকা নেয়া হয়েছে তার উল্লেখ নেই।
শীর্ষস্থানীয় কলেজগুলোর মধ্যে ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও মতিঝিল আইডিয়াল কলেজ এ বছর আট হাজার টাকা নিয়েছে, যা অন্যদের তুলনায় কম। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আগে যে কোনো ভর্তির সময়ে এই দুটি প্রতিষ্ঠান বাড়াবাড়ি করত। কিন্তু স্কুলে ভর্তির সময় বেশি টাকা নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফেরত বা সমন্বয় না করায় এই দুই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের বেতনভাতা বাবদ মাসিক সরকারি অনুদান (এমপিও) বন্ধ করে দেয়া হয়। এ কারণেই প্রতিষ্ঠান দুটি এবার বেশি টাকা নিচ্ছে না।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাইলস্টোন কলেজ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ২০ হাজার ৩৭০ টাকা, বাণিজ্য বিভাগে ১৫ হাজার ৩৫০ টাকা এবং কলা বিভাগে ১২ হাজার ৩৭০ টাকা নিচ্ছে, মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং উত্তরা রাজউক মডেল কলেজে ভর্তি খরচ পড়ছে ১২ হাজার টাকা, ঢাকা সিটি কলেজে ১৭ হাজার ৬১৭ টাকা নিয়েছে। এই কলেজগুলোর মধ্যে মনিপুর বাদে বাকিগুলো এমপিওভুক্ত নয়।
উল্লেখ্য এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতা বাবদ মাসে সরকার থেকে টাকা দেয়া হয়। কিন্তু বাকিগুলোতে সরকার থেকে টাকা না দেয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চায় না সরকার।

Leave a comment

You must be Logged in to post comment.