Published On: Sun, Nov 3rd, 2013

অপরাধবোধ থেকে নারীদের মুক্তি

Share This
Tags
depressed ladyআপনি কি ডায়েট কন্ট্রোলের পদ্ধতি নিয়ে পড়াশোনা করতে করতে নিঃশেষ হয়ে পড়েছেন বা সন্তানদের সঙ্গে কীভাবে আরো বেশি সময় দিতে পারলে তাদের আত্মসম্মানবোধ আরো বাড়তো অথবা ঘরের বিশৃঙ্খলা কীভাবে আপনার যৌন জীবনকে বদলিয়ে দিতে পারে এসব নিয়ে? এরকম খুঁটিনাটি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খামোখাই দুশ্চিন্তায় ভোগা লোক আপনি একা নন। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের ৯৬ শতাংশই প্রতিদিন একবার হলেও কোন একটি বিষয়ে অপরাধবোধে ভোগেন। যা তাদের স্বাস্থ্যের ওপর খুবই ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি এর ফলে দীর্ঘ মেয়াদি বিষণ্নতায়ও আক্রান্ত হতে পারেন অনেকে। এখানে এরকম ১০ টি অপরাধবোধ থেকে মুক্ত থাকার উপায় বাতলে দেওয়া হল।

সন্তানদের যথেষ্ট সময় দিতে না পারা: কর্মজীবী মায়েদের অধিকাংশই মনে করেন তারা তাদের কাজ এবং সন্তানদের সময় দেওয়ার মধ্যে ব্যালেন্স করতে পারছেন না। যখন আপনি কাজে থাকেন তখন আপনি সন্তানদের বিষয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন। ফলে আপনি ঠিকমতো কাজে মনোযোগ দিতে পারেন না। এতে শুধু আপনার কাজেরই ক্ষতি হয়, আর সন্তানরাও কিছুই পায় না। সূতরাং আপনার উচিৎ হবে আপনি যখন যে কাজে থাকবেন তাতেই পুরো মনোযোগ ঢেলে দেওয়া। আপনি যখন অফিসের কাজে থাকবেন তখন তাতেই পুরো নিমগ্ন হওয়া। আবার যখন সন্তানদের সঙ্গে থাকবেন তখন তাদের প্রতি পুরো মনোযোগ দেওয়া। এতে করে সবাই উপকৃত হবে। সন্তানরাও তাদের ন্যায্য হিস্যা বুঝে পাবে আর আপনিও ক্যারিয়ারে উন্নতি করতে পারবেন।

ওজন কমাতে ব্যর্থতা: নারীদের ৭০ শতাংশেরও বেশি জীবনে কোনো না কোনো সময় ডায়েট কন্ট্রোল করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে সত্যিই তাদের বাড়তি ওজন আছে কি নেই তা বিবেচনা করা হয় না। তবে কথা হল, আপনি যদি নিজেকে দেখতে আরো গর্জিয়াস এবং স্লিম করে তুলতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই একটা নির্দিষ্ট সময় বের করে নিয়মিত কোন জিমে গিয়ে বা স্লিমিং গ্রুপের সঙ্গে শরীরচর্চা করতে হবে। আর ভাবুন যে এ ব্যাপারে দায়টা একান্তই আপনার। এর জন্য অন্যকে দায়ী করলে চলবে না।

নিজের পেছনে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা: প্রায়ই শপিংয়ে যাওয়াটা হয়তো আনন্দদায়ক। কিন্তু এর ফলে যে অতিরিক্ত ব্যয় হয় তাতে হয়তো পরক্ষণেই আপনার ওপর আত্মঘৃণা এবং অপরাধবোধ ভর করতে পারে। সূতরাং আপনি যদি স্পা বিরতিতে গিয়ে টাকা খরচ করাটাকে এই বলে যুক্তিযুক্ত বলে প্রতীয়মান করতে পারেন যে, আপনার একটা স্বস্তিদায়ক বিরতি জরুরি ছিল বা একটি নতুন বিজনেস স্যুট কেনাকে আপনার কাজে সহায়তা করবে বলে যুক্তিযুক্ত হিসেবে হাজির করতে পারেন তাহলে এ নিয়ে অপরাধবোধে ভোগার আর কোন কারণই অবশিষ্ট থাকবেনা।

আপনার সঙ্গী অসূখী: আপনি যদি এই অপরাধবোধে ভোগেন যে সঙ্গীকে সুখী করার জন্য আপনি যথেষ্ট সময় দিতে পারছেন না তাহলে আপনারা দুজনে একসঙ্গে বসে নিজেদের কাজকর্মের সময়সূচি দেখে সিদ্ধান্ত নিন যে কীভাবে আপনারা পরস্পরকে আরো বেশি সময় দিতে পারেন। এ বিষয়ে আপনারা মন খুলে আলোচনা করুন এবং নিজেদের অভ্যাসে পরিবর্তন আনুন তাহলে যুগল হিসেবে আপনারা দুজনেই সুখী হতে পারবেন।

সব সময়ই দেরি করে বাড়ি ফেরা: প্রায়ই এমন পরস্থিতি তৈরি হয় যে আমাদের বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে যায়। এমনকি আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারি না। এর ফলে বাড়ি ফিরতে গিয়ে আমাদের মধ্যে প্রায়ই একটা আতংক বিরাজ করে এবং অপরাধবোধ কাজ করে। আরো আগেই বাড়িতে পৌঁছতে পারলে আপনি কী কী করতে পারতেন গাড়িতে বসে তা ভেবে আক্ষেপ করে শক্তি ক্ষয় করে কোন লাভ নেই। তার চেয়ে বরং এই সময়টার সদ্ব্যবহার করা যায় কীভাবে তা ভাবুন।

আতিথ্যে গৃহীনি হিসেবে পটুত্ব প্রদর্শনে ব্যার্থতা: অনেক নারীকে প্রায়ই বলতে শোনা যায় যে তারা একটি পারফেক্ট ডিনার পার্টি বা ড্রিংকস ব্যাশের আয়োজন করতে চান। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তারা প্রায়ই এতটাই উঁচু মানদণ্ড নির্ধারণ করেন যে তারা তা পূরণ করতে পারেন না। সামাজিক চমৎকারিত্বের আকাঙ্ক্ষা আমাদের সব সময় নিখূঁত থাকার জরুরত থেকেই উদ্ভূত হয়। চালিয়ে যান, পার্টির আয়োজন করুন এবং একজন বাজে পার্টি আয়োজক হিসেবেই আখ্যায়িত হোন। যে মূহুর্তে আপনি মেনে নিবেন যে আপনি এটা করতে পারবেন কিন্তু তা হয়তো বাজে হবে, তখনই আপনার ভেতরের চাপটা অপসারিত হবে। ‘আমাকে সবচেয়ে পারফেক্ট ডিনার পার্টির আয়োজক হতে হবে’ এ ধরনের কথা ভেবে আমরা আসলে নিজেদের ওপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করি। আসেল সবারই সব কিছু সম্পর্কে আলাদা আলাদা বুঝ থাকে। সুতরাং আপনি নিজের মতো করেই একটি ডিনার পার্টির আয়োজন করতে পারেন। এতে কোনই সমস্যা নেই।

প্রিয়জনের জন্মদিন ভুলে যাওয়া: মনের ভুলে এরকমটা প্রায়ই ঘটে থাকে। আমাদের অনেকেই প্রায় প্রতিদিনই ১৮ ঘণ্টা ব্যস্ত থাকি। কাজের যেন কোন শেষই আর থাকে না। ফলে আপনি যদি কোন প্রিয়জনের জন্মদিন ভুলে যান তখন মনে মনে অপরাধবোধে না ভুগে আপনি বরং নিজেকে এই বলে স্বান্তনা দিন যে আপনি সর্বোচ্চ চেষ্টাটিই করছেন। এবং যার জন্মদিন ভুলে গেছেন সে প্রিয়জনটির কাছে গিয়ে ক্ষমা চান এবং পরিষ্কার করে বলেন যে আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে বা সচেতনভাবে এটা করেননি। কিন্তু এরপরও যদি সে প্রিয়জনটি ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাহলে আপনার আর কিছুই করার নেই।

প্রায়ই কিছুটা সময় একান্তই নিজের জন্য ব্যয় করা: অনেক নারীই সব সময়ই নিজের একটা ‘সুপারওমেন’ ভাব বজায় রাখতে চান। যেনবা, তাকে ছাড়া বুঝি দুনিয়া অচল হয়ে পড়বে। ফলে তারা যদি কখনও চুল আঁচড়াতে গিয়ে বা একটা বই পড়তে গিয়ে কিছুটা সময় ব্যয় করে ফেলেন এতে করে তাদের মধ্যে এক ভয়াবহ অপরাধবোধ ভর করে। কিন্তু শারিরিক এবং মানসিকভাবে রিচার্জ হওয়ার জন্য কখনো কখনো আমাদের উচিৎ একদমই কোন কাজ না করা। এবং এটা খুবই জরুরি। সূতরাং লোককে সত্যি কথাটা বলেন যে আপনি কোন ‘সুপারওমেন’ নন। আপনারও বিরতির দরকার আছে। এবং এটা মেনে নিন যে আপনি না থাকলে দুনিয়া একেবারেই ধ্বংস হয়ে যাবে না।

পিতামাতার সূখের জন্য যথেষ্ট করতে না পারা: বড়দের জন্য যথেষ্ট করতে না পারার কারণে এবং কোন কারণে পিতা-মাতার জন্য যথেষ্ট কাজ করতে না পারার কারণে অনেক সময় নারীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই অপরাধবোধে ভূগতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আপনাকে এটা মেনে নিতে শিখতে হবে যে আপনি যেরকমই হোন না কেন আপনার পিতামাতা আপনাকে ভালোবাসবেই এবং আপনাকে খারাপ চোখে দেখবে না। তবে আপনাকে অবশ্যই তাদের ব্যপারে সংবেদনশীল হতে হবে এবং তাদের ভালো করার জন্য আরো বেশি বেশি চেষ্টা করতে হবে। এতে তারা যদি সভ্য মানুষ হন তাহলে তারা সুখী হবেন এবং আপনার ওপর দোষারোপ করবেন না।

কাউকে কোন বিষয়ে ‘না’ বলা: কাউকে কোন বিষয়ে ‘না’ বলাটা আসলেই খুব কঠিন কাজ। আমরা নারীরা সাধারণত নিজেদেরকে খারাপ হিসেবে উপস্থাপন করতে চাই না কারণ আমাদেরকে ছোটবেলা থেকেই ‘অন্যের’ পছন্দকে প্রাধান্য দিতে শেখানো হয়। এ ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমেই যেটা করতে হবে তা হল প্রতিটি অনুরোধের ব্যপারেই আপনাকে একটু সময় নিয়ে ভাবতে হবে। এরপর ঠিক প্রতিজ্ঞা করা হয় না এমন ভঙ্গিতে কিছু একটা বলুন। যেমন, ‘বিষয়টাতো ইন্টারেস্টিং! আমাকে আধা ঘণ্টা সময় দিন এরপরই এ বিষয়ে আমি আপনার সাথে আবার কথা বলবো’। আর আপনি যদি কারো কোন অনুরোধ একদমই পছন্দ না করে থাকেন তাহলে খুবই বিনয়ের সাথে অনুরোধকারীকে সমস্যাটি সমাধানে অন্য কোন পথ বাতলে দেন।

Leave a comment

You must be Logged in to post comment.