Published On: Sun, Apr 13th, 2014

লাজুক মানুষের ছয়টি প্রতিভা

Share This
Tags
shy-womanলাজুক মানুষের বৈশিষ্ট্যগুলো সাধারণত নেতিবাচকভাবেই প্রকাশ পায়। কিন্তু এসব লাজুক মানুষের মাঝেই লুকিয়ে আছে সুপ্ত প্রতিভা। আর এ প্রতিভাগুলোকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করতে পারলে দ্বার খুলে যেতে পারে অসীম সম্ভাবনার।
লাজুক মানুষের যেসব নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য দেখা যায় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কারো চোখে চোখ রাখতে সমস্যা, মানুষের মাঝে বিব্রতবোধ ও বিচ্ছিন্নতাবোধ করা।
আপনি যদি লাজুক মানুষ হন তাহলে মনে রাখবেন আপনি একা নন। বহু মানুষই আপনার মতো লাজুক। আর লাজুক মানুষরা মোটেও ফেলনা নয়।
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর সি. বার টেইলর বলেন, ‘লাজুক হলে অনেক দিক দিয়ে তা আপনার জন্য উপকারী।’
তিনি আরও বলেন, ‘লাজুক মানুষের একটা স্বভাবত অনিচ্ছা কাজ করে (সামাজিক বিষয়ে)। এ কারণে তাদের মানুষের থেকে দূরে যাওয়ার প্রবণতা থাকে।’
লাজুকতাকে অনেকে নেতিবাচকভাবে দেখলেও তার অনেক ভালো বিষয়ও আছে। লাজুক মানুষদের ছয়টি ভালো গুণ নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হাফিংটন পোস্ট।
১. তারা চিন্তাশীল
লাজুক মানুষেরা অন্তর্মুখী স্বভাবের। তারা গভীরভাবে অনেক বিষয় চিন্তাভাবনা করতে পারে। এ বিষয়ে প্রফেসর টেইলর বলেন, লাজুক মানুষের সব বিষয় খারাপ নয়। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় লাজুকতাকে মনে করা হয় আপনি কোনো বিষয় করতে অসমর্থ বা অসম্মত হলে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় এ বিষয়টিকে অসমর্থ বলে বিবেচনা না করে কোনো বিষয়ের ভেতরে প্রবেশ করার জন্য চিন্তাভাবনা হিসেবে ধরতে পারেন।’
প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে গভীরভাবে চিন্তা করার বিষয়টি দখল করেছে দ্রুত কাজে সক্ষম প্রযুক্তি। কিন্তু চিন্তাভাবনার দ্বারা আচ্ছন্ন হওয়ার কিছু সুবিধা আছে। যেসব মানুষ ভালোভাবে চিন্তা করতে সক্ষম তারা বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
টেইলর জানিয়েছেন, গভীর চিন্তাভাবনা করা ও অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা করার মধ্যে পার্থক্য আছে। বিশেষ করে নির্দিষ্ট কোনো পরিস্থিতিতে এর পার্থক্য হয়। আমাদের মস্তিষ্ক অসাধারণ। তারা অনেককিছু গ্রহণ করতে পারে। আপনি যদি নিজেকে একটি ভীতিপ্রদ পরিস্থিতিতে নিয়ে যান তাহলে আপনার অনুভূতি হবে যে, তা আপনি করতে যাচ্ছেন। একটা অনুশীলনের পর এ পরিস্থিতিতেও সাফল্য আনা সম্ভব। ভয়কে আপনি জয় করতে পারবেন।’
২. তারা বিচক্ষণ
লাজুক মানুষেরা কথাবার্তা বলার সময় কিংবা আশপাশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে অনেক বিষয় অনুধাবন করতে পারে, যা অন্যরা করতে পারে না। টেইলর বলেন, ‘এটা অনেক সময় একটা শক্তির উৎস হিসেবেই কাজ করে। কারণ আপনি সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছেন।’
লাজুক মানুষদের পক্ষে অন্যদের মুখের অভিব্যক্তি বোঝার বেশি ক্ষমতা থাকে। এক গবেষণাতেও এ বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, কলেজ পড়ুয়া বয়সে লাজুক তরুণ-তরুণীরা অন্যদের মুখের দুঃখবোধ ও ভয় বোঝার ক্ষমতা বেশি থাকে।
গবেষক লরা গ্রেভস ও’হ্যাভার বলেন, ‘আমরা লাজুক মানুষকে একটা নেতিবাচক মোড়কে রাখি।’
তিনি বলেন, ‘তাদের মেধার বিষয়টিতে ফোকাস করাই ভালো।’
৩. তারা শ্রোতা
অধিকাংশ লাজুক মানুষই কোনো কথাবার্তা থেকে বাদ পড়ে। তবে এটাই একমাত্র বিষয় নয়। তারা শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো কথাটাই বলতে পারে। কারণ তারা কোনো গ্রুপের সবার কথাবার্তার দিকে নজর রাখে। সাইকোলজিস্ট ব্যারনান্দো কার্ডুচি ও ফিলিপ জিমবার্ডো ব্যাখ্যা করেছেন, কীভাবে লাজুক মানুষেরা অন্যের কথাবার্তা লক্ষ্য করে তা থেকে সবচেয়ে ভালো বিষয়টি তুলে আনতে পারে। কারণ হিসেবে উঠে এসেছে তাদের মনযোগের সঙ্গে সবকিছু শোনার প্রবণতা।
৪. অন্যরা তার সম্বন্ধে কী ভাবল, তা লক্ষ্য করে
অনেক মানুষের মাঝে লাজুকেরা কেন অস্বস্তি বোধ করে তার একটা কারণ হলো- অন্যরা তার সম্বন্ধে কী ভাবছে তা লক্ষ্য করে তারা। এ কারণে তারা খুবই সচেতন থাকে। এ বিষয়টিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে অনেকে সামাজিক দিক থেকে সাফল্য পায়।
এ বিষয়ে টেইলর বলেন, ‘আমাদের সমাজে একজন পর্যবেক্ষকের তুলনায় অভিনেতারাই ভালো করেন। কিন্তু অন্যরা আপনাকে নিয়ে কী ভাবছে, সে বিষয়টির চিন্তা আপনার জন্য একটি ভালো বিষয় হতে পারে।’
৫. তারা চিন্তাশীল
আপনি যদি কোনো লাজুক মানুষকে হাত কচলাতে, আঙুল ফুটাতে কিংবা পা নাচাতে দেখেন তাহলে বুঝবেন, তা তাদের গভীর চিন্তার কারণেই ঘটছে। এসব বিষয়ের নিউরোলজিক্যাল বহু বিষয় এখনো জান না গেলেও গবেষণায় দেখা গেছে, এ ধরনের ‘নার্ভাস অভ্যাস’ মানসিক চিন্তাভাবনার সঙ্গে সংযুক্ত।
৬. তারা সব সময় অন্তর্মুখী নয়, দুর্লভও বটে
লাজুকতা ও অন্তর্মুখী স্বভাব প্রায়ই একসঙ্গে ব্যবহৃত হয়। সমাজে অনেকেই এ বিষয়গুলো একসঙ্গে ধরলেও বাস্তবে এ দুটো এক নয়। নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে সুসান কেইন এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। সামাজিকভাবে অন্তর্মুখী স্বভাবকে অস্বাভাবিকভাবে দেখতে তিনি নারাজ। তার বদলে তিনি বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখেন।

Leave a comment

You must be Logged in to post comment.