বিদায় নকিয়া
সবাই বিরস বদনে নকিয়াকে বিদায় জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। বহু দিন ধরে আমাদের সঙ্গ দেওয়া প্রিয় এই মোবাইল ফোন প্রতিষ্ঠানকে বেশ কিছু দিন আগেই কিনে নিয়েছে মাইক্রোসফট। গত শুক্রবার ফিনল্যান্ডের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান নকিয়া নিশ্চিত করেছে, তারা তাদের যাবতীয় বিষয়াদি এবং যন্ত্রপাতি মাইক্রোসফটকে বুঝিয়ে দিয়েছে। যারা শিগগিরই মাইক্রোসফট মোবাইল ওওয়াই দেখবেন, জানবেন এটিই ছিল এক সময়ের দাপুটে নকিয়া।
নকিয়ার সাবেক সিইও স্টিফেন এলোপ এক ব্লগে জানান, আজ একটি বিশেষ দিন। আজ আমরা মাইক্রোসফট পরিবারের সদস্য হচ্ছি। নকিয়ার সাবেক এই সিইও মাইক্রোসফটের হেড অব ডিভাইস হয়েছেন। নকিয়াকে ৭.৫ বিলিয়ন ডলারে কিনে নেওয়ার এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, মহা শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানেরও পতন ঘটতে পারে। মটোরোলার পরই মোবাইল বানিয়েছিল নকিয়া। এই ইন্ডাস্ট্রিতে নকিয়ার মতো ব্যাপক নাম আর কেউ কামাতে পারেনি। বিগত ছয় বছরে নকিয়ার পতন এমনভাবে হয়েছে যে, অনেকে ভুলেই গেছেন নকিয়া এক সময়ের মোবাইল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের শীর্ষে ছিল। আজকের গ্লোবাল মোবাইল বাজার সৃষ্টির এক চতুর্থাংশ সময়ের মধ্যে স্যামসাং আজ শীর্ষস্থান দখল করে নিয়েছে। ২০০৭ সালে নকিয়া তার সেরা সময়ে মোবাইল বাজারের ৪১ শতাংশ দখল করে রেখেছিল।
স্ট্র্যাটেজি অ্যানালাইটিকসের বিশ্লেষক কেন হেয়ারস বলেন, বর্তমানে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য গ্লোবাল মার্কেটের ৪১ শতাংশ দখল করা রীতিমতো অসম্ভব ব্যাপার। তবে গত বছরের শেষ নাগাদ বাজারের ১৫ শতাংশ নকিয়ার দখলে ছিল। ২০১০ সালে মাইক্রোসফটের সঙ্গে উইন্ডোজ ফোন তৈরিতে নকিয়ার লুমিয়া বানানোর সিদ্ধান্তটি বেশ সাহসী ছিল।
তবে নকিয়া একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। মোবাইল ছাড়াও নকিয়ার টেলিকমিউনিকেশন বিষয়ে ব্যবসায়িক অবকাঠামো রয়েছে। এ ছাড়া এর ম্যাপিং সার্ভিস এবং অ্যাডভান্সড টেকনোলজি বিভাগ নকিয়া ব্র্যান্ড নিয়েই তাদের ব্যবসা পরিচালনা করবে।
নকিয়া মোবাইল অংশটি খুইয়ে আবার তাদের ১৫০ বছরের পুরনো ব্যবসায় ফিরে যাবে বলে ভাবছে। অনেকেই অবাক হবেন, নকিয়ার শুরু হয়েছিল রাবারের পাদুকা তৈরি করার মধ্য দিয়ে।
১৯৯২ সালে জরমা ওলিলা সিইও হওয়ার আগে নকিয়া একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে স্তূপ ছিল। তখন কাগজ সরবরাহকারীর কাজ করত নকিয়া। কিন্তু বড় ধরনের অর্থনৈতিক মন্দা আঘাত হানার পর নকিয়া ধ্বসে পড়ে। টিকে থাকতে ক্রমবর্ধমান মোবাইল ফোনের বাজার ধরার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ যে ব্যাপারে পুরোই অনভিজ্ঞ তারা। আশির দশকের প্রথম দিকে মোবাইল ফোন প্রস্তুতের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয় এবং ওলিলা নকিয়ার পুরো শক্তি ঢেলে দেন টেলিকমিউনিকেশন খাতে। আর তখন থেকেই ডালপালা মেলে ধরতে শুরু করে নকিয়া।
বর্তমানের মোবাইল ফোনের অন্যতম সেরা প্রযুক্তি জিএসএম ওয়্যারলেস সার্ভিস সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা রাখে নকিয়া