Published On: Sun, Jul 6th, 2014

ছাঁটাই আতঙ্কে গার্মেন্টস কর্মীরা

Share This
Tags

bd-garments

সাভারে রানা প্লাজা ভবন ধসে বহু হতাহতের পর বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিরাপত্তায় ‘নৈতিক ফ্যাশন ও নৈতিক বাণিজ্যের’ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পোশাক পণ্যের ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ ও উত্তর আমেরিকার ক্রেতা জোট অ্যালায়েন্স ফর ওয়ার্কার্স সেফটি ইন বাংলাদেশ তৎপরতা শুরু করে। শ্রমিকদের উন্নত কর্ম-পরিবেশ ও নিরাপত্তার বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স বিভিন্ন কারখানা পরির্দশন করে। কর্ম-পরিবেশ ও নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে তারা হঠাৎ করে একের পর এক কারখানা বন্ধ করে দেওয়া শুরু করে। শ্রমিকদের মধ্যে এ নিয়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। মালিকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে পুঞ্জীভূত বিনিয়োগের নিরাপত্তাহীনতা।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহসভাপতি রিয়াজ-বিন মাহমুদ  বলেন, ‘অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের তৎপরতায় সরাসরি ৯টি কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। আরও ১১টির কার্যক্রম বন্ধ। ফলে ২০ হাজার শ্রমিক বেকার এবং এসব কারখানা মালিকের প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। যদিও সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, অ্যাকর্ড কারখানা সংস্কার ও স্থানান্তরে সময় ও অর্থ দেওয়ার কথা। এখন তারা অর্থ ও সময় না দিয়ে কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছে। তবে আশাবাদের বিষয় এই যে, গত বৃহস্পতিবার অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের সঙ্গে বৈঠকে তারা কিছুটা নমনীয় ভাব প্রকাশ করেছে। আমরা তাদের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থেকে কারখানা সরাতে এক থেকে দুই বছর পর্যন্ত সময় চেয়েছি।’ শ্রমিক নেতারা বলছেন, কারখানা পরিদর্শনে ওই দুই সংস্থার বাড়াবাড়ি যেমন আছে, তেমনি মালিকরাও নানা ছলচাতুরি করছেন। আর এই উভয় পক্ষের এমন তৎপরতায় চূড়ান্তভাবে বিপদে পড়ছেন শ্রমিকরা।

জানা গেছে, এখন পর্যন্ত অ্যাকর্ড ৫২৫টি ও অ্যালায়েন্স ৪৭৫টি কারখানা পরিদর্শন করেছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) মিলে পরিদর্শন করেছে ২৫২টি কারখানা। সব মিলিয়ে কারখানা পরিদর্শন হয়েছে এক হাজার ২৫২টি। তবে পরিদর্শনে একই নিয়ম মানা না হলে আরও অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সংস্থা দুটির বাংলাদেশে দুই হাজার ৩০০ কারখানা পরিদর্শনের কথা রয়েছে। এর মধ্যে অ্যাকর্ডের অধীনে এক হাজার ৭০০ ও অ্যালায়েন্সের অধীনে ৬০০টি।

সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘এর মধ্যে গভীর ষড়যন্ত্র আছে।’ কারখানা বন্ধ হলে শ্রম অসন্তোষ হবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। মন্ত্রী আরও বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়েছে পাকিস্তান। মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) হচ্ছে ভারতের সঙ্গে। চামড়াশিল্প নিয়ে বিদেশে অপপ্রচার হচ্ছে। এর অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লবি কাজ করছে, যাতে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়।’

তবে একাধিক পোশাক কারখানার মালিক এবং শ্রমিক সংগঠনের নেতা জানিয়েছেন, অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স শুরুতে কিছু না বুঝেই বেশ কয়েকটি কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-বিকেএমইএ এবং অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের মধ্যে একে অপরকে দোষারোপ ও ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। দুই পক্ষই নিজেদের অবস্থানে থাকায় এ শিল্প জটিলতার মুখে পড়েছে। মূলত উভয় পক্ষের বোঝার ঘাটতির কারণেই এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে যেমন পড়েছে, তেমনি পড়েছে বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যেও।

 

Leave a comment

You must be Logged in to post comment.