
যদি মনে করেন দিনে অসংখ্য ‘এসএমএস’ পাঠিয়ে আপনার প্রেমময় জীবনকে মধুর করে তুলবেন তাহলে আপনি ভুল করছেন। একটা সময় ছিল যখন প্রিয়মানুষের একটু কণ্ঠ শোনার আগ্রহে ব্যাকুলতার সাথে টেলিফোন লাইনের জন্য অপেক্ষা করতে হতো। এমনকি এক্সচেঞ্জে ফোন দিয়ে ট্রাঙ্কল সংযোগ নিতে হত। সেই প্রেম কিন্তু কম রোমান্টিক ছিল না। এখন তরুণ-তরুণীরা প্রেমটাকে যন্ত্রের মাঝে নিয়ে গেছে। প্রেমও কেমন যেন ফিকে হয়ে এসেছে। এখন অনেকেই রিলেশনশিপটাকে ‘এসএমএস’ এর মত যান্ত্রিকতার ফাঁদে ফেলতে চাইছেন না। সম্প্রতি বিগহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে প্রেমের সম্পর্কে যেন ‘এসএমএস’-ই সম্বল। এবং তারা এটার ওপর প্রচণ্ড নির্ভরশীল। ২৭৬ জন তরুণ-তরুণীর ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে যে এদের মধ্যে ৮২ ভাগ তরুণ-তরুণীই সারাদিন অসংখ্য ‘এসএমএস’ আদান-প্রদানের মাধ্যমে সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে। দুর্বল সম্পর্কই ‘এসএমএস’র মাধ্যমে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয় বলে মন্তব্য করেছেন গবেষকদের অন্যতম লরি শেড। তিনি বলেন, মেয়েরা সিরিয়াস মুহূর্তে ‘এসএমএস’ পাঠালেও ছেলেরা কিন্তু এটাকে মোটেও সিরিয়াসলি নেয় না। এটা তাদের কাছে নিছকই একটি তামাশার ব্যাপার। শেড বলেন, ছেলেরা ‘এসএমএস’ পাঠিয়ে দায় সারেন এমনকি তারা ‘এসএমএস’ নেতিবাচক অর্থেই পাঠান। তবে তিনি এ ব্যাপারগুলো আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরো গবেষণা প্রয়োজন বলে এক ই-মেইল ইন্টারভিউয়ে জানিয়েছেন । ‘এসএমএস’ বলা যায় এখন চিঠির বিকল্প কিংবা চিঠির আপডেট ভার্সন। তাই কোন মেয়ে যখন একটা ‘এসএমএস’ পাঠায় তখন সে যত্ন করে লেখার চেষ্টা করে। যতটা সম্ভব অন্তরঙ্গ বাক্য ব্যবহার করে। এ ছাড়াও কাটানো সুন্দর মুহূর্তের কথা গুলোও ‘এসএমএস’ চলে আসে। ছেলেরা কখনোই ‘এসএমএস’এ আবেগ অনুভূতির প্রকাশ ঘটায় না। কারণ তারা কখনোই ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলো প্রকাশে আনতে চায় না। আবার কোনো কোনো তরুণ-তরুণী মনে করে তাদের সম্পর্ক আর ব্যক্তিগত বিষয় দুটি আলাদা ব্যাপার। ব্যক্তিগত বিষয় এড়িয়ে গিয়ে নিজেরাই নিজেদের দুর্ভোগ ডেকে আনে। এ ব্যাপারে চিরন্তন ভাট (৩০) বলেন ‘এই ‘এসএমএস’র মাধ্যমেই তার স্বামী রণধীরের সাথে সম্পর্কের যাত্রা শুরু হয়। অনেক সময় এই ‘এসএমএস’ই আমাদের অনেক না বলা কথাই বলে দিতে সহায়তা করে। তাই বলে দিনে ৫০ এর বেশি ‘এসএমএস’? মোটেই নয়’ দম্পতিদের জন্য ‘এসএমএস’র মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষাই ভালো মাধ্যম বলে মনে করেন ভারতের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সামির পারিখ । ২০১২ সালে টসন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে ‘এসএমএস’ প্রেরণ এখন শুধু সস্তা রোমান্টিসিজম আর নষ্টামিরই প্রতীক। অনেক না বলা কথা বলতে গিয়ে ছেলেমেয়েরা বাঁধ ভেঙে ফেলে। নির্লজ্জভাবে যৌনতার কথা উল্লেখ করে বসে। ফলে প্রেমের সম্পর্কটা ধীরে ধীরে ফিকে হতে শুরু করে। অতিরিক্ত ‘এসএমএস’র আদান প্রদান একে অপরের দৃষ্টিভঙ্গিকে খারাপ দিকে প্রবাহিত করে। ‘এসএমএস’র মাধ্যমে আমরা মনের মধ্যে যা আসে তাই লিখে দেই। এর প্রতিক্রিয়া আমাদের দেখতে হয় না বিধায় আমরা দ্বিধা করি না কি লিখতে হবে। কিন্তু যখন কণ্ঠের সাথে কণ্ঠের যোগাযোগ হয় তখন আমরা নিজেদের সংযত রাখতে বাধ্য হই। ২৬ বছর বয়সের লেখক রুহি ত্রিবেদি বলেন, ‘আমি নিজেও এসএমএস এর ভক্ত, আমি আমার কাজে সব সময় ‘এসএমএস’র সহায়তা নিই। তার মানে এই নয় এই যে একজনের সাথে সারা দিনে একের পর এক ‘এসএমএস’ যোগাযোগ করবো। এটা মোটেও সুখকর ব্যাপার নয়। কারণ কণ্ঠের অনুপস্থিতির কারণে এটা নেতিবাচক দিকে প্রবাহিত হয় যা সম্পর্ককে নষ্ট করে দেয়।’ অভিজ্ঞরা হয়তো আপনাকে বলবে একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে ‘এসএমএস’ মোটেও প্রযোজ্য নয় । এ কথা তখনি অকার্যকর হবে যখন আপনার কথা বলার দরকার আছে। ‘এসএমএস’র প্রয়োজন আছে, তবে সেটা প্রয়োজনে ব্যবহার করাটাই শ্রেয়। প্রেমিক-প্রেমিকাদের দিনের এই অযাচিত ‘এসএমএস’ আদান-প্রদান থেকে বিরত থাকা উচিত। প্রেমের সম্পর্ক সব সময়ই একটা মধুর সম্পর্ক, এই সম্পর্ককে গাঢ় করতে গিয়ে আপনি নিজের অজান্তেই নষ্ট করে ফেলছেন। ‘এসএমএস’ আসক্তি যেমন আমাদের ক্ষতির কারণ তেমনি স্কাইপ, মুখোমুখি ভয়েস চ্যাট এসবই সম্পর্ককে খারাপ দিকে নিয়ে যায়।
একটা সম্পর্কের মৃত্যুর জন্য এই কয়েকটা ব্যাপারই যথেষ্ট।