Published On: Sat, Jul 6th, 2013

এবার বিমানবন্দরে লাঞ্চিত হলেন ঋতুপর্ণা

Share This
Tags

image_50_8589বিমানবন্দরে ভারতীয় তারকাদের লাঞ্চিহ হবার কাতারে এবার যোগ হল ঋতুপর্ণের নাম। শাহরুখ খান, কমল হাসানের পরে এবার ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত টরেন্টোর পিয়ার্সন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হেনস্থার শিকার হলেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ভারতেরএই অভিনেত্রী।
উত্তর আমেরিকার বঙ্গ সম্মেলনে যোগ দিতে টরন্টো গিয়েছেন ঋতুপর্ণা। ওই বঙ্গ সম্মেলনের চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হচ্ছে তাঁর অভিনীত রেশমী মিত্রের ছবি ‘মুক্তি’ দিয়ে। ঋতুপর্ণার সঙ্গে ছিলেন তারা মাসি-শাশুড়ি, ৮০ বছর বয়সী নীলিমা চট্টোপাধ্যায়। তিনি কানাডারই নাগরিক।
গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে বারোটায় টরেন্টো নামার পর বিমানবন্দরেই প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা টানা জেরা করা হয় তাকে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত ভিসা থাকা সত্ত্বেও বলা হয়, তার ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। ব্যাগ খুলিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা হয় জিনিসপত্র, কেড়ে নেয়া হয় মোবাইল। এমনকী, অপমানিত ঋতুপর্ণা কেঁদে ফেললে তাকে মানসিক রোগীর তকমা দিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর হুমকিও দেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত তাকে কানাডায় ঢোকার অনুমতি দেয়া হলেও গোটা ঘটনায় অসন্তুষ্ট ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রণালয় কানাডা সরকারের কাছে কূটনৈতিক প্রতিবাদপত্র (ডিমার্শ) পাঠিয়েছে।

ফোনে ঋতুপর্ণা বলেন, “মুম্বাই থেকে লুফথানসার বিমানে আমরা টরেন্টো নামি। তারপরেই যেন বাঘের মুখে। অভিবাসন দফতরের কর্মীরা আমার ভিসা পরীক্ষা করে জানালেন, সেটির মেয়াদ শেষ, তাই আমাকে কানাডায় ঢোকার অনুমতি দেয়া যাচ্ছে না। আমি বলি, আমার ভিসা শেষ হবে ২০১৫- তে।” ঋতুপর্ণা বলেন, “অভিবাসন কর্মীদের  ফেরার টিকিটও দেখিয়েছিলাম। কিন্তু তারা তখন কোনো কথাই শুনতে নারাজ।  তারা বলেছিলেন, উপযুক্ত নথি না-দেখানো পর্যন্ত আমাকে বিমানবন্দরেই থাকতে হবে। প্রয়োজনে সে দিনই আমার ফেরার টিকিট কেটে দেয়া হবে। আর আমায় নাকি বলতে হবে, আমি স্বেচ্ছায় ফিরে যাচ্ছি!”

ঋতুপর্ণার অভিযোগ, এরপর অভিবাসন দফতরের একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে তাকে রীতিমতো জেরা শুরু করেন এক মহিলা। কেন এসেছেন, কোথায় থাকবেন, কোনো আত্মীয় আছেন কি না, কোন চলচ্চিত্র সংস্থায় কাজ করেন, অভিনয়ের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নেন কি না ইত্যাদি। ঋতুপর্ণার কথায়, “আমি এক এক করে সব প্রশ্নের উত্তর দিলেও ওরা যে সন্তুষ্ট নন, সেটা বুঝলাম যখন ওই মহিলা ফের ভিসা প্রসঙ্গে ফিরে গেলেন। কিছুক্ষণ কম্পিউটার ঘেঁটে এবার বললেন, কানাডা দূতাবাস আমার ভিসা অনুমোদন করেনি। তাই বিমানবন্দর থেকেই ফিরে যেতে হবে।

এ সবের মধ্যেই শুরু হয় ব্যাগ খুলে ঘাঁটাঘাঁটি। ঋতুপর্ণা জানান, ব্যাগের মধ্যে বেশ কিছু ভিজিটিং কার্ড, ক্রেডিট কার্ড ও চেকবই ছিল। সেগুলো নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় তাকে। ‘কেন এত ভিজিটিং কার্ড? চেকবই-ই বা কেন?’ ঋতুপর্ণা জানান, তিনি অভিনেত্রী। অনেক লোকের সঙ্গে আলাপ হয়, ভিজিটিং কার্ড দেয়া-নেয়া তো হয়ই। আর জরুরি দরকারের কথা ভেবে চেকবই তো যে কেউ সঙ্গে রাখতে পারেন।

গোটা জেরা-পর্বে বিমানবন্দরে হুইলচেয়ারে বসেছিলেন ঋতুপর্ণার মাসি-শাশুড়ি। ঋতুপর্ণার মতোই বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন তিনি। কাঁদতে শুরু করেন। ঋতুপর্ণা জানান, সেই কান্না দেখে অভিবাসন কর্মীরা কিছুটা হকচকিয়ে গেলেও জেরা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। তাকে প্রশ্ন করা হয়, ২০১২- তে ভিসা অনুমোদনের পরেও কেন তিনি কানাডায় আসেননি ? ঋতুপর্ণা জানান, সেই সময়ে শ্যুটিং বাতিল হয়ে গিয়েছিল। আবার কম্পিউটার ঘাঁটার পর প্রশ্ন আসে তা হলে ২০১০-এ কেন এসেছিলেন ?  ঋতুপর্ণা উত্তর দেন, মন্ট্রিল চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছিল তারই ছবি ‘আরোহণ’।

ঋতুপর্ণা জানান, জেরা চলাকালীন তার স্বামী সঞ্জয় চক্রবর্তী সিঙ্গাপুর থেকে তাকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু ফোন ধরতেই তার মোবাইল দুটি কেড়ে নেয়া হয়। এক অভিবাসন কর্মী বলেন, “ফোনে কথা বলা যাবে না।” লাইন কেটে যাওয়ার আগে এই কথাটুকুই শুনে ফেলেন সঞ্জয়। তিনি তৎক্ষণাৎ কানাডার ভারতীয় দূতাবাসে যোগাযোগ করেন। খবর যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও।

পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আকবরউদ্দিন বলেন, “ভারতীয় দূতাবাস বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হওয়ার পরে আগাগোড়া ঋতুপর্ণার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল। পরে আমরা কানাডার অভিবাসন দফতরের কাছে ক’টনৈতিক প্রতিবাদপত্র (ডিমার্শ) পাঠিয়েছি।” পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে খবর, দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কানাডা সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, ১১ বছর আগে টরেন্টোর এই বিমানবন্দরেই হেনস্থা হয়েছিলেন অভিনেতা কমল হাসান। শাহরুখ খান এবং ইরফান খানও একই ধরনের সমস্যার মুখে পড়েছেন মার্কিন বিমানবন্দরে। এবার হেনস্থা হলেন ঋতুপর্ণা।

Leave a comment

You must be Logged in to post comment.