Published On: Mon, Jan 20th, 2014

আমাদের ফেসবুকীয় জীবন

Share This
Tags

Facebook_2336015bডেস্ক রিপোর্টফারিয়া রিসতা

ঘুম থেকে উঠেই ফোন হাতে নিয়ে মিসড কলের লিস্ট চেক করেই অর্নব ঢু মারে ফেসবুকে, নোটিফিকেশন কমেন্ট লাইক আর ম্যাসেজ চেকিং এর মাঝেই কেটে যায় কিছু মুহুর্ত। এর মাঝেই সে জেনে যায় আর ১১ টার ক্লাস টা হবে না আর ক্লোজ এক  ফ্রেন্ডের জন্মদিন সম্পর্কে। জেনে যায় দেশ ও বিশ্বের সর্বশেষ নিউজ, জেনে যায় বান্ধবীর ব্রেক আপের গল্প। স্ট্যাটাস হিসেবে দিয়ে ফেলে দুই লাইনের কবিতার লাইন আর এভাবেই সকাল শুরু হল তার।

একই ভাবে হয়ত সকাল টা শুরু হয় মিঃ ইমতিয়াজের ও, কিন্তু ফেসবুকে সে খোজে বায়ার দের লিস্ট, প্রোডাক্টের ছবি আর পার্টনারদের হালহকিকত। হাজারটা কাজের মাঝে মজার স্ট্যাটাস গুলা তার ৯টা – ৫টার বোরিং জীবনে নিয়ে আসে একটু মজা, একটু বিনোদন।

সারাদিনের ক্লাস, আড্ডা আর নানা কাজের মাঝে চলতে থাকে মুঠোফোনের স্ক্রিনে ফেসবুকের দিকে নজর রাখা। জীবন নিজের গতিতে বয়ে চলে আর ফেসবুক টুকে রাখে সেই জীবনের গল্প, নানা স্মৃতি , হাজারটা ছবি। সোজা ভাষায় আমাদের জীবন আর ফেসবুকের সম্পর্ক কে এভাবেই বয়ান করা যায়।

কলেজ গার্ল থেকে হাউজ ওয়াইফ, কোর্পরেট অফিসার থেকে ছাত্র সবার জীবনেই একটি বড় অংশ দখল করে রেখেছে ফেসবুক। স্ট্যাটাস, কমেন্ট লাইক চ্যাট পোক ট্যাগ এর মাঝেই তৈরী হয়ে গেছে আমাদের আরেকটি দুনিয়া। কি দিয়েছে আমাদের ফেসবুক ?? বা কি পাস এই অনলাইন পৃথিবীতে?? এরকম হাজারটা প্রশ্ন আমাদের বাবা মা এর। আসলেই কি যে আছে এই নীল সাদা দুনিয়ায় তা একজন পাক্কা ফেসবুক ইউজার হিসেবে আমি নিজেও জানি না। শুধু বুঝি- ভালো লাগে।

নিজের রান্না করা অখ্যাদের কথা বলতে, বান্ধবীদের সাথে খুনশুটির গল্প লিখতে, বাড়ি ফেরার অনুভুতি জানাতে কিংবা পরীক্ষা খারাপ দেওয়ার বেদনা শেয়ার করতে ভালো লাগে। অন্যদের কথা জানি না কিন্তু এই ফেসবুক আমাকে দিয়েছে কথা বলার স্বাধীনতা, কথা শোনানর ক্ষমতা।

মফস্বল থেকে উঠে আসা একটি মেয়ে নিজের ইচ্ছা হোক বা রাজনৈতিক চিন্তা, সবটাই শেয়ার করতে পারছে এই স্ট্যটাস বক্সের মাধ্যমে। দুনিয়ার যেকোন প্রান্তের যেকোন মানুষের মনের কথা ভেসে আছে আমার কাছে। সহজ সরল ভাষায় এভাবেই বোধহয় ফেসবুক কে বর্ননা করা যায়। পরিচিত কিছু ফেসবুক ইউজারদের কাছে জানতে চেয়েছিলা তাদের জীবনে ফেসবুক কি?

উত্তর হিসেবে কাসাফাদৌজ্জা নোমান বলেছেন – “প্রথম কথা হলো ফেসবুকটা প্রায় লাইফ হয়ে গেছে। যেখানেই থাকি ফেসবুক পকেটে থাকে টাইপ অবস্থা। গুরুত্ব বললে অনেক কিছু হাতের কাছে পাওয়া যায়। আরও দীর্ঘ গুরুত্ব আছে। আর প্রভাব একদিকে খুব খারাপ। ফেসবুকটাকে সংসার বানালে যেমনটা হবার কথা তেমন হচ্ছে। অন্যদিকে বিভিন্ন প্রতিবাদ,মানববন্ধন,সামাজিক কাজ,সাহায্য সব মিলিয়ে ভালো প্রভাবের অভাব নেই।”

আরজু পনির মতে- “ফেসবুক হলো বন্ধুদের মিলনমেলা, ছবিরহাটের মতো…আবার স্টাডি সার্কেলের মতো।

এখন ফটো এডিটের কাজ শিখছি, ফেসবুক না হলে বাচ্চাদের রেখে বাইরে যেয়ে শেখার আগ্রহ আলাদা করে থাকতো কি না যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

মনখারাপ, টেনশনগুলো ভাগ করে নিজেকে হালকা করতে ফেসবুকের জুরি নেই

অন্যের সমস্যাগুলো দেখে নিজের সাথে কমপেয়ার করতে পারি। ঘরের বাইরে না যেয়েও অনেককিছু শিখতে পাচ্ছি.. যেগুলো ফেসবুক না থাকলে এতো সহজে শিখতে পারতাম না। বাংলায় যে লিখতে পাচ্ছি এ ও ফেসবুকের বন্ধুদের কল্যাণে…ফটোগ্রাফী থেকে শুরু করে দৈন্দিন জীবনের অনেক প্রয়োজনীয় তথ্যই ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ, পেইজ থেকে পাই।”

ফেসবুক ব্যাবহারকারী একজন মায়ের কাছে প্রশ্ন করেছিলাম- কেন ফেসবুক ব্যাবহার করেন?

তারমতে- “ফেসবুক আমার কাছে একধরনের ডায়েরীর মত, নিজের স্মৃতিগুলো যেখানে সাজিয়ে রাখতে পারি। আর একজন মা হিসেবে জানতে পারি নিজের ছেলেমেয়ের মনের কথা গুলোকে, বুঝতে পারি তাদেরকে। যার কারনে যেমন প্রসংসা করতে পারি তেমনি তাদের ভুল গুলো ধরিয়ে দিতে পারি”

এরকম হাজার টা মন্তব্য হাজারো ফেসবুক ইউজারের হাজরটা মন্তব্য এই ফেসবুক সম্পর্কে।

“মনের জানালা” এই শব্দ টি হতে পারে ফেসবুকের আরেকটি অর্থ। এই ফেসবুকেই আজ মিলছে কাছের বন্ধু, খুজে পাই হারিয়ে ফেলা মানুষগুলোকে। এখানেই তৈরী হচ্ছে নতুন প্রেম কাহিনী। সৃষ্টি হচ্ছে কাব্য, গল্প, রাজনিতী কিংবা ব্যাবসার নতুন আইডিয়া। প্রেমিকা কে প্রেমের বাক্য শোনানো থেকে বস কে নতুন কাজের ডেমো দেখানো সব ই চলে এই দুনিয়াতে।

সেই সাথে আছে বিভিন্ন পেজ, ইভেন্ট, গ্রুপ যেখানে নিখাদ আড্ডার পাশাপাশি চলে পথশিশুদের জন্য কিছু করার প্ল্যান বা সাভার ট্রাজেডির শিকার বাবা মা হারা রিহানের ভবিষ্যত সুনিশ্চিত করার প্রত্যয় কিংবা অপরিচিত কোন মানুষ কে রক্ত দিয়ে সাহায্য করা।  এই ফেসবুক ই আমাদের সাহায্য করছে নিজের মাঝে থেকে বের হয়ে সবার জন্য কিছু করতে।

আফটার অল ফেসবুক ইজ এ সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইট !!!

বিভিন্ন মানুষ, বিভিন্ন মতবাদ, বিভিন্ন মন্তব্য, বিভিন্ন কমুনিটি, যেখানে কেউ রাজনৈতিক স্ট্যাটাস দিয়ে বাহবা কুড়াচ্ছেন তো কেউ গল্প লিখে বা কেউ ছবি আপলোড দিয়ে, আবার কারো – হেই ফ্রেন্ডস, গূড মর্নিং টাইপ স্ট্যটাসেও জমে উঠছে লাইক কমেন্ট এর ভীড়।

 “ফেসবুক অ্যাডিকশন” নামক নতুন রোগের কথা ইদনীং খুব কানে আসছে। এই অ্যাডিকশনের যেমন ভালো প্রভাব আছে তেমনি ব্যাড ইফেক্টের কথা ও না বললেও নয়। ছাত্রজীবনে ফেসবূক- এই বিষয়ে যদি লেখা শুরু করি তবে ভালর তুলনায় খারাপ প্রভাব টাই হয়ত বেশি চোখে পরবে। হয়ত এই কারনেই আমাদের বাবা মায়েরা এখনো ফেসবুক নামক এই জিনিস্টাকে ভালো চোখে দেখা শুরু করতে পারেন না। কারো উপর প্রতিশোধ নেওয়ার বিভিন্ন উপায়, বাজে বাজে পেজ, ফেক এক্যাউন্ট ইত্যাদি ফেসবুকের সাদা দেয়াল টাতে কালো দাগে ভরিয়ে দিচ্ছে। তবে সায়েন্স নিজেই যখন মুদ্রার দুই পিঠ ধারন করে চলছে সেখানে শুধু মাত্র একা ফেসবুক কে দোষারোপ না করলেও চলে। এই খারাপ রা আছে বলেই হয়ত আমরা ভাল হওয়ার সুযোগ পাই।

গত ৪ বছরের ফেসবুক জীবনে অনেক মানুষ দেখেছি, অনেকের সাথে পরিচয় হয়েছে, অনেকের সাথে ঝগড়া, আবার অনেকে পরিনত হয়েছে ভালো বন্ধুতে, স্ট্যাটাস, কমেন্ট, লাইক, শেয়ার, ফ্রেন্ডস, ফলোয়ারস এগুলো নিয়েই  চলছে এই ফেসবুকীয় জীবন, আমার আপনার সবার

Leave a comment

You must be Logged in to post comment.