Published On: Sun, Jun 2nd, 2013

আবার ঢাকায় আকসু

Share This
Tags
200px-Bangladesh_Cricket_Board_Logo.svgবিপিএলের ম্যাচ ফিক্সিং তদন্ত করতে কাল সন্ধ্যায় আবারও ঢাকায় এসেছেন আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগের (আকসু) দুই কর্মকর্তা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এ ব্যাপারে গোপনীয়তা বজায় রাখতে চাইলেও বিশ্বস্ত সূত্র এটি নিশ্চিত করেছে।
ম্যাচ ফিক্সিং ও স্পট ফিক্সিংয়ের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে এ নিয়ে গত আড়াই মাসে চতুর্থ দফা ঢাকায় এলেন আকসু কর্মকর্তারা। সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত-সংক্রান্ত ব্যাপারে আগামীকাল বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের সঙ্গে সভা করার কথা আছে তাঁদের। তার আগে আজ সন্দেহভাজন আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন আকসু কর্মকর্তারা। তবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বিসিবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন চৌধুরী, ‘আকসু কর্মকর্তাদের অবস্থান এবং তাঁদের গতিবিধি সম্পর্কে আমাদের পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে পারব না।’
আকসু বিসিবির কাছে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন কবে জমা দেবে, এ নিয়ে দুই রকম তথ্য পাওয়া গেছে। বিসিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, আকসুর কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাথমিক কিছু পেতেও আরও অন্তত সাত-আট দিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বোর্ড কর্মকর্তা আভাস দিয়েছেন, ‘সোমবার (আগামীকাল) বোর্ড সভাপতির সঙ্গে সাক্ষাতের সময়ও প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়ে দিতে পারে আকসু।’
ম্যাচ ফিক্সিং-বিতর্কে গোটা দেশের ক্রিকেট টালমাটাল হয়ে পড়লেও মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের বিসিবি কার্যালয় কাল একটু নিরুত্তাপই ছিল। আকসুর তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের অবশ্য কিছু করারও নেই। তবে যাঁদের বিরুদ্ধে মোহাম্মদ আশরাফুলকে বুকিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার এবং ফিক্সিংয়ে সম্পৃক্ত করার অভিযোগ উঠেছে, সাবেক সেই তিন ক্রিকেটার আবারও অস্বীকার করেছেন সব অভিযোগ।
গত পরশু নীরব থাকলেও গতকাল নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ। দুপুরে ধানমন্ডি ৪ নম্বর মাঠে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, ‘এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ক্রিকেটের কারণে আমরা অনেক দেশ ঘুরেছি এবং অনেকের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। সবাইকে মনে রাখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এমনকি বিভিন্ন সফরে যেসব লিয়াজোঁ কর্মকর্তারা থাকে, তাদের সঙ্গেও পরে আর যোগাযোগ থাকে না। কেউ যদি পরে এসব সম্পর্কের অপব্যবহার করে, সেটা দুঃখজনক।’ আরেক সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদও কাল এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, কখনোই কোনো ক্রিকেট জুয়াড়ির সাথে আমি ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুলকে পরিচয় করিয়ে দিইনি। আশরাফুলের সাথে সহকারী খেলোয়াড়/কোচ হিসেবে আমার সম্পর্ক। আমার সমৃদ্ধ খেলোয়াড় ও কোচিং ক্যারিয়ারে কখনোই এ ধরনের অভিযোগ ওঠেনি।’ এর আগে গত পরশু মোহাম্মদ রফিক সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, আশরাফুলকে তিনি কখনোই কোনো ফিক্সারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেননি।
তবে রফিক-মাসুদ দুজনই স্বীকার করেছেন, বিপিএলে পরিচ্ছন্ন ক্রিকেট হয় না। রফিক তো এটাও স্বীকার করেছেন, দ্বিতীয় বিপিএলে চিটাগং কিংসের কাছে ইচ্ছে করে হেরেছিল ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস এবং সেটা ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্মকর্তাদের ইচ্ছায়। এতে টিম ম্যানেজার সানোয়ার হোসেনের সম্পৃক্ততার কথাও বলেছেন সাবেক এই স্পিনার। বিপিএলে ম্যাচ ফিক্সিং নিয়ে মাসুদের মনেও সন্দেহ আছে, ‘আমার মনে হয়, বিপিএল পরিচ্ছন্ন নয়। আমার পক্ষে হয়তো কোনো প্রমাণ দেওয়া সম্ভব নয়। তবে এখানে যে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি কাজ করে, তাদের একটা ঠিকানাও নেই। বিপিএল অবশ্যই আমাদের ক্রিকেটের মর্যাদাহানি করছে।’
বাংলাদেশের ক্রিকেটে ফিক্সিং-বিতর্ক বর্তমান ও সাবেক ক্রিকেটার ও ক্রিকেট কর্মকর্তাদেরও খুব আক্রান্ত করেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আশরাফুল হক এখন ঢাকায়। কাল রাতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাম্প্রতিক বিতর্ক সম্পর্কে তিনি বললেন, ‘এটা খুব দুঃখজনক ব্যাপার। হতাশাজনকও। আমাদের ক্রিকেটাররা এমন করতে পারে, এটা ভাবলে আরও বেশি কষ্ট লাগে। কারণ আমাদের দেশে ক্রিকেটাররা আর্থিক ও সামাজিকভাবে অনেক মর্যাদা পায়। আমি মনে করি, এটির মূল্য না দেওয়া গর্হিত অপরাধ। কেউ দোষী প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। এটা ধামাচাপা দিলে এর মূল উৎপাটন করা যাবে না। কর্মকর্তাদের কারও কারও নামও শোনা যাচ্ছে, তাদের কেউ অন্যায় কিছু করে থাকলে আজীবন নিষিদ্ধ করতে হবে।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রশাসনে সৈয়দ আশরাফুল হক ‘অ্যাশ’ নামে পরিচিত। ফিক্সিংয়ের অভিযোগ ওঠা মোহাম্মদ আশরাফুলের ডাকনামও ‘অ্যাশ’। এক ‘অ্যাশ’-এর এমন বিতর্কে জড়িয়ে পড়া আরেক ‘অ্যাশ’-এর কাছে কি একটু বেশি বেদনাদায়ক? সৈয়দ আশরাফুল হক বললেন, ‘কোনো ক্রিকেটারের কাছ থেকেই এমন কিছু আশা করি না। টেস্ট ক্রিকেটে আবির্ভাবের পর বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রথম আইকন আশরাফুল। ওর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ শুনে তাই আরও বেশি খারাপ লাগছে।’

Leave a comment

You must be Logged in to post comment.