সহিংসতায় পরিনত হল কোটা বাতিলের আন্দোলন
বিসিএসসহ সরকারি চাকরি এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবির আন্দোলন গতকাল বৃহস্পতিবার সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। গতকাল দ্বিতীয় দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ৩০ জন আহত হন। পুলিশ ১২ জনকে আটক করে।
সংঘর্ষকালে আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের বাসভবন, প্রক্টরের কার্যালয়, প্রশাসনিক ভবন এবং অন্তত পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। রোকেয়া হলের সামনে একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। এটিএন বাংলা ও একাত্তর টেলিভিশনের গাড়িও ভাঙচুর করা হয়।
কোটা বাতিলের দাবিতে গতকাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে প্রতীকী অবরোধ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করেন। চট্টগ্রাম, খুলনা ও ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন।
৩৪তম বিসিএসের প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষার ফল ও কোটা বাতিলের দাবিতে গত বুধবার শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়ক বন্ধ থাকায় নগরে যানবাহন চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। মানুষকে পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। পরে বিকেলে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) ওই ফলাফল পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নেয়। এর পরও রাত ১০টা পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা শাহবাগে অবরোধ অব্যাহত রাখেন। গতকাল বেলা ১১টার দিকে তাঁরা আবারও শাহবাগে অবস্থানের ঘোষণা দেন।
বুধবারের ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে ও শাহবাগের কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন তাঁরা। পরে ‘বঞ্চিত শিক্ষার্থী’ ব্যানারে শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল ক্যাম্পাস থেকে শাহবাগের দিকে এগোতে থাকে। মিছিলটি চারুকলা অনুষদের সামনে পৌঁছালে পুলিশ বাধা দেয় এবং পুলিশের সঙ্গে মিছিলকারীদের বাগিবতণ্ডা হয়। কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিলে পুলিশ লাঠিপেটা করে তাঁদের সরিয়ে দেয়। তাঁরা পরে চারুকলার সামনে অবস্থান নিয়ে পুলিশের দিকে ইট ছুড়তে থাকেন। জবাবে পুলিশ অসংখ্য কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। শিক্ষার্থীরা কাঠ ও কাগজ এবং পয়লা বৈশাখে বানানো চারুকলার মোটিফ সড়কে এনে আগুন ধরিয়ে দেন। তাঁরা সব কোটা বাতিলের দাবিতে স্লোগান দেন।
একপর্যায়ে পুলিশ শাহবাগ থানার সামনে থেকে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে ছুড়তে এগোতে থাকে। শিক্ষার্থীরা টিএসসি থেকে কাজী নজরুলের সমাধি কমপ্লেক্সের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে ঢিল ছুড়তে থাকেন। শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন হল ও একাডেমিক ভবন থেকে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী টিএসসিতে জড়ো হন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আন্দোলনকারীরা রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ প্রথমে কাঁদানে গ্যাস ও পরে সাঁজোয়া যানে করে ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পালাতে গিয়ে বেশ কয়েকজন আহত হন। আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েন।
এদিকে শাহবাগে পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল নীলক্ষেতের দিকে যায়। তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশ পাল্টা কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। শিক্ষার্থীদের একাংশ স্যার এ এফ রহমান হলে ঢুকে পড়লে পুলিশ হলের মধ্যেও কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে।
পুলিশের হামলার প্রতিবাদে আন্দোলনকারীদের একাংশ সংগঠিত হয়ে উপাচার্যের বাসভবন এবং আরেকটি অংশ উপাচার্যের কার্যালয়ে ভাঙচুর করে। প্রক্টরের কার্যালয়েও ঢিল ছোড়া হয়।
এদিকে বেলা পৌনে একটার দিকে মধুর ক্যানটিন থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া করেন। এ সময় কয়েকজন আন্দোলনকারীকে বেধড়ক পেটান তাঁরা। কলাভবনেও কয়েকজনকে তাড়া করে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বেলা সোয়া একটার দিকে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আমজাদ আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুল কবিরসহ বিভিন্ন হল শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সঙ্গে নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে যান। তখন সেখানে অবস্থানরত আন্দোলনকারীদের ধাওয়া করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ছাত্রশিবিরের কর্মী আখ্যা দিয়েও কয়েকজনকে পেটানো হয়। ছাত্রলীগের কর্মীরা মল চত্বরেও আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হন। ছাত্রলীগের অভিযোগ, আন্দোলনকারীরা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিয়েছেন।