সকল দলের সমন্বয়ে সরকার গঠন – জাতির উদ্দেশে ভাষনে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব
জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা সকল দলকে সঙ্গে নিয়েই জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চাই।” এ বিষয়ে বিরোধীদের কাছে পরামর্শও চেয়েছেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “বিরোধীদলের কাছে আমার প্রস্তাব, নির্বাচনকালীন সময়ে আমরা সকল দলের সমন্বয়ে সরকার গঠন করতে পারি। আমাদের লক্ষ্য অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন।”
এ জন্য বিরোধী দলের সদস্যদের নাম চেয়ে তিনি বলেন, “তাই আমি বিরোধী দলের কাছে প্রস্তাব করছি যে, বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকেও আপনারা নাম দিতে পারেন যাদেরকে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে মন্ত্রিসভায় সদস্য করে সর্বদলীয় সরকার গঠন করতে পারি।”
“নির্বাচনে যাতে কারো কোন সন্দেহ না থাকে, সকল সন্দেহ দূর করে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারি যে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ ভোট দিয়ে তাদের মনমতো সরকার গঠন করতে পারবে।”
বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া তার এই প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেবেন বলেও আশাপ্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “আমি বিরোধী দলের নেতাকে অনুরোধ করছি যে, তিনি আমার এই ডাকে সাড়া দিবেন। আমার এ অনুরোধ তিনি রক্ষা করবেন এবং আমাদের যে সদিচ্ছা সেই সদিচ্ছার মূল্য তিনি দিবেন।”
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ সম্প্রচার করা হয়। ভাষণের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ঈদ ও পূজা ও প্রবারণা পূর্ণিমার শুভেচ্ছা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গণতন্ত্রকে একটি সুদৃঢ় এবং প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে বদ্ধপরিকর। গণতন্ত্র তখনই শক্তিশালী হবে যখন তা সাংবিধানিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হবে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিরা রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন।”
২০০৭ সালের সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের কথ মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১/১১-এর মতো কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন জগদ্দল পাথরের মতো জনগণের বুকের উপর চেপে বসে তখন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক-ছাত্র-পেশাজীবী, ব্যবসায়ীসহ সবার উপর নেমে আসে নির্মম নির্যাতন। এ ধরনের অসাংবিধানিক শাসনের পুনরাবৃত্তি আর কখনোই হবেনা – এটাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা।”
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের বড় এক পটপরিবর্তনে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। সেনা সমর্থন নিয়ে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ প্রধান হিসাবে দায়িত্ব নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমদ।
তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও ওই সরকার ক্ষমতায় থাকে দুই বছর। সে সময় দুর্নীতির মামলায় বহু রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এক পর্যায়ে গ্রেপ্তার হন শীর্ষ দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াও।
শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফেরে।
তার পাঁচ বছর পর দশম সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ আশঙ্কার মধ্যেই জাতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ।
তার এই ভাষণে সরকারের গত পাঁচ বছরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের পাশাপাশি আগামী নির্বাচন নিয়ে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।