রক্ষা করতে হবে প্রত্নসম্পদ
যে কোনো একটি দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরতে প্রাচীন পুরাকীর্তি ও প্রত্নসম্পদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অথচ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মসজিদ-মন্দির-প্রাসাদসহ বিভিন্ন প্রাচীন স্থাপনা সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরই উদাসীন। এটা খুবই দুঃখজন। এই অবস্থা চলতে থাকলে অযত্নে-অবহেলা আর দখল-দুর্বৃত্তায়নের কবলে পড়ে ভবিষ্যতে হারিয়ে যাবে কালের সাক্ষী আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাস ঐতিহ্যের স্মারক স্থাপনাগুলো।
সম্প্রতি একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, লালমনিরহাটে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভাণ্ডার রাজবাড়ির ভগ্ন দশার কথা। এক সময়ের রাজবাড়ি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কালের সাক্ষী হিসেবে এখনো ভবনটি দাঁড়িয়ে থাকলেও অযত্ন-অবহেলার শিকার হয়ে এর অধিকাংশ কারুকাজ নষ্ট হয়ে গেছে। কিছুদিনের মধ্যেই এটি ব্যবহার অযোগ্য হয়ে যাবে। সবার অগোচরে একদিন এটি ভেঙে ফেলার কাজটিও সম্পন্ন হবে। এর মধ্য দিয়ে হারিয়ে যাবে একটি প্রাচীন শিল্প নিদর্শন। একটি ঐতিহাসিক স্মারক। এ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বহু প্রাচীন মসজিদ, মন্দির, জমিদার বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা ছড়িয়ে রয়েছে যেগুলোর প্রত্নমূল্য এবং ঐতিহাসিক মূল্য অসামান্য। প্রত্নঐতিহ্য হিসেবে চিহ্নিতকরণ ও প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এগুলো ক্রমশ ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের প্রাচীন ভবনগুলোর অনেকগুলো পারিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। কতকটিতে স্কুল-কলেজ-অফিস-আদালত চলছে। হয়ত সময়ের প্রয়োজনে সংস্কারও করা হয়েছে। কিন্তু সংস্কারের ক্ষেত্রে এগুলোকে স্থাপত্যকীর্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি বলে এগুলোর মূল নকশা, কারুকাজ অবিকৃত রাখার চেষ্টা করা হয়নি। ফলে টিকে থাকলেও এগুলো প্রত্নমূল্য হারাতে বসেছে।
গ্রাম-গঞ্জের অচিহ্নিত স্থাপনার কথা বাদ দিয়ে আমরা যদি সংরক্ষিত নিদর্শনগুলোর দিকে তাকাই তাহলেও হতাশাজনক চিত্রই ভেসে আসে। কিছুদিন আগেই সংবাদ মাধ্যমে একটি খবর হয়েছে যে, জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষিত সোনারগাঁর ঐতিহাসিক পানাম নগরের বিভিন্ন স্থাপনা বিক্রি করে দেয়ার পাঁয়তারা করছে প্রভাবশালীরা। পানাম নগরী সংরক্ষণ এবং অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে সচেতন নাগরিকদের উদ্যোগে। হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অধিকারী বগুড়ার মহাস্থানগড় আজ প্রায় ধ্বংসের পথে। লোভী ও প্রভাবশালী কিছু মানুষ সংরক্ষিত এলাকা দখল করে বাড়িঘর নির্মাণ করছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞাও মানছে না তারা। খোদ রাজধানীতে ঐতিহ্যবাহী পুরোনো ভবনগুলো ভেঙে ফেলার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। নগর সংরক্ষণ কমিটি কর্তৃক ২০০৯ সালে ঢাকার সংরক্ষণযোগ্য ঐতিহ্যবাহী ভবনের তালিকা করা হলেও সেগুলো সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য ইতিহাসপ্রেমী ও বিশেষজ্ঞদের তাগিদ এবং ক্ষেত্রবিশেষে সরকারি প্রচেষ্টা সত্ত্বেও পুরোনো স্থাপত্য ভাঙার হার কমেছে বলে মনে হচ্ছে না। এটা একেবারেই অনাকাক্সিক্ষত।