Published On: Sat, Apr 13th, 2013

মোবাইল ফোনের জন্মদিন

Share This
Tags
মোবাইল ফোনের জন্মদিন

গত ৩রা এপ্রিল মোবাইল ফোনের ৪০ তম জন্মদিন পালিত হল। ১৯৭৩ সালের ৩ এপ্রিল মোবাইল ফোন থেকে প্রথমবার কল করা হয়েছিল। এক খবরে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।

মোবাইল ফোনের জনক মার্টিন কুপারকে মোবাইল ফোনের জনক বলা হয়। বর্তমানে তাঁর বয়স ৮৫ বছর। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে মার্টিন কুপার জানিয়েছিলেন, ‘চার দশক আগে মোবাইল উদ্ভাবনের পর এর দামও বেশি ছিল আর আকার ছিল বড়। তবে তিনি জানতেন একদিন মোবাইল ফোনের দাম আর আকার দুইই মানুষের হাতের মুঠোয় চলে আসবে।

প্রথম মোবাইল, প্রথম আলাপ আজ থেকে প্রায় চার দশক আগে মানুষের হাতে এসেছিল প্রথম মোবাইল ফোন সেট। সেটি ছিল মটোরোলার গবেষক মার্টিন কুপারের আবিষ্কৃত ডায়না টিএসি। কুপার সেই মোবাইল ফোন দিয়ে  প্রথম কথা বলেছিলেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বেল ল্যাবসের গবেষক জোয়েল এনজেলের সঙ্গে। মোবাইল ফোন সেট তৈরির জন্য তখন আলাদাভাবে কাজ করছিলেন মটোরোলার গবেষক মার্টিন কুপার ও বেল ল্যাবসের জোয়েল এনজেল। তবে শেষ পর্যন্ত বিজয়ের হাসি হেসেছিলেন কুপার।
মটোরোলা কোম্পানিতে কাজ করতেন মার্টিন কুপার। ওই সময় প্রতিষ্ঠানটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন প্রযুক্তিবিদ জন মিশেল। তিনি একদিন কুপারের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, বিশ্বের প্রথম মুঠোফোন তৈরি করবে মটোরোলা আর আবিষ্কারক হবেন কুপার। কুপার সেই চ্যালেঞ্জ  নিয়ে জয়ী হয়ে গর্বিত করেছিলেন জন মিশেল ও তাঁর প্রতিষ্ঠান মটোরোলাকে।
মার্টিন কুপার ডায়না টিএসি তৈরিতে সফল হয়েছিলেন ১৯৭৩ সালের ৩ এপ্রিল। সেটি বর্তমান সময়ের হালকা-পাতলা স্মার্টফোনের মতো ছিল না। সোয়া এক কেজি ওজনের সেই সেলুলার  ফোনটি লম্বায় ছিল ১০ ইঞ্চি। একবার ব্যাটারি চার্জ হলে ২০ মিনিট কথা বলা যেত। আর ব্যাটারি চার্জ করতেও লাগত অনেক সময়। একসময় এর পরিচিতি দাঁড়ায় ব্রিক ফোন বা ইট আদলের  ফোন। নিউইয়র্ক সিটির সিক্সথ অ্যাভিনিউতে হাঁটতে হাঁটতে প্রথমবারের মতো সেলুলার নেটওয়ার্কে ফোনকল করেন কুপার। টেলিফোনে বিশ্বের প্রথম ফোনকলটি গ্রহণ করেছিলেন বেল ল্যাবসের প্রধান গবেষক জোয়েল এনজেল। সেসময় সেলুলার নেটওয়ার্কে স্থানান্তরযোগ্য মুঠোফোন তৈরিতে কাজ করছিলেন জোয়েল এনজেল। জোয়েলের অফিসে সরাসরি ফোনকল করার এ ঘটনাটিই বিশ্বের প্রথম সেলুলার ফোন আলাপ।

ডায়না টিএসি এ ঘটনার প্রায় ১০ বছর পর প্রথমবারের মতো বাজারে আসে মটোরোলার তৈরি ডায়না টিএসি। এ মুঠোফোনটিতে বড় বড় ২০টি বাটন বা বোতাম ছিল, সঙ্গে বিশাল একটি বড় অ্যানটেনাও ছিল। বর্তমান যুগের তারবিহীন চার্জার ছিল না তখন। একবার চার্জ হওয়ার পর কিছুক্ষণ কথা বলেই আবারও ১০ ঘণ্টা চার্জ দিতে হতো। এখন হয়তো মুঠোফোন, স্মার্টফোনের দাম হাতের নাগালেই। তবে প্রথমবারের মতো সেলুলার ফোন কেনার খরচ কম ছিল না। ডায়না টিএসির দাম ছিল চার হাজার ডলার। এত দাম সত্ত্বেও এ মুঠোফোন দ্য ব্রিক নামে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আর এ ফোনের জনপ্রিয়তার ফলেই সূচনা ঘটেছিল সেলুলার যুগের। ১৯৯১ সালে দ্বিতীয় প্রজন্ম বা টুজি প্রযুক্তির সূচনা ঘটে। ফিনল্যান্ডের রেডিওলিনিয়া এ প্রযুক্তির সূচনা করে। ‘সো দ্যাট ফিনস ক্যান টক মোর’ স্লোগানে বাজারে আসে টুজি প্রযুক্তি।
টুজির প্রায় এক দশক পর অর্থাত্ ২০০১ সালে বাজারে আসে থ্রিজি প্রযুক্তি। ২০০৯ সাল পর্যন্ত থ্রিজির চাহিদা বাড়তেই থাকে। বর্তমানে উন্নত মাল্টিমিডিয়া অ্যাপ্লিকেশন আর দ্রুতগতির ইন্টারনেট সম্ভাবনা নিয়ে চালু হয়েছে ফোরজি প্রযুক্তি। গবেষণা চলছে ফাইভজি নিয়েও। ২০০৮ সাল পর্যন্ত ধরা হতো বিশ্বের প্রতি দুজন মানুষের মধ্যে একজন মুঠোফোন ব্যবহার করেন। ১৯৯০ সালে যেখানে এক কোটির মতো মুঠোফোন ব্যবহারকারী ছিল, ২০১১ সালে সে সংখ্যা  ৬০০ কোটি পার হয়েছে। ২০১৩ সালে মুঠোফোন ব্যবহারকারী ৭০০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে।

মোবাইল ফোন, স্মার্টফোন মুঠোফোন উদ্ভাবনের পর থেকে ক্রমাগত পাল্টেছে মুঠোফোনের ধরন। একসময় যা ছিল ইটের মতো মোটাসোটা, এখন তা এতটাই হালকা-পাতলা হয়েছে যে সহজেই পকেটে ধরে যায়। এখন সাধারণ কথা বলার মুঠোফোন থেকে উন্নত হয়েছে স্মার্টফোন হিসেবে। একসময় যা ছিল দামি আর ব্যবসার উপকরণ, তা এখন মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় উপকরণে পরিণত হয়েছে।  প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা হিসাব করে দেখেছেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রাখছে মুঠোফোন।

একনজরে বিশ্বের প্রথম মুঠোফোন

মুঠোফোনের নাম : ডায়না টিএসি, যা পরে ব্রিক নামে পরিচিতি পায়
উদ্ভাবক: মার্টিন কুপার
নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান: মটোরোলা
উদ্ভাবনের সময়: ৩ এপ্রিল, ১৯৭৩
বাজারে আসে: ১৯৮৪
দাম: প্রায় চার হাজার ডলার
ওজন: ১.১৫ কেজি
চার্জ : ১০ ঘণ্টা
টকটাইম: ২০ মিনিটimages

Leave a comment

You must be Logged in to post comment.