Published On: Thu, Sep 5th, 2013

মেসির কাছে যে সাতটি জিনিস শিখতে পারেন নেইমার

Share This
Tags

নিজের ফুটবল প্রতিভার কথা জানান দিয়েছিলেন সান্তোসে থাকার সময়ই। পেয়েছিলেন ‘বিস্ময়-বালকের’ খেতাব। নেইমার ইউরোপের বৃহত্তর আঙ্গিনায় পা রেখেছেন বিশ্বসেরা হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই। বার্সেলোনার জার্সি গায়ে নেইমার যে সত্যিই নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারবেন, এমন বিশ্বাস অনেকেরই আছে। আর ন্যু ক্যাম্পে নেইমারের সবচেয়ে বড় সুবিধাটা হতে পারে লিওনেল মেসির নিবিড় সান্নিধ্য। এ সময়ের সেরা এই ফুটবলারের কাছ থেকে নেইমার শিখে নিতে পারেন নিজেকে বিকশিত করার বেশ কিছু কলাকৌশল।

a   
ইতিমধ্যেই একটি জায়গায় বেশ ভালো মিল পাওয়া যায় মেসি আর নেইমারের। রক্ষণভাগে ত্রাস সৃষ্টি করার ক্ষমতা থাকায় দুজনকেই কড়া নজরে রাখেন প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডাররা। নেইমার তাঁর নতুন সতীর্থ মেসির কাছ থেকে শিখে নিতে পারেন কীভাবে ডিফেন্ডারদের ট্যাকল থেকে নিজের পা দুটোকে রক্ষা করা যায়।

প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের আঘাতে মেসি যে খুব দ্রুত মাটিতে পড়ে যান না এটা সবারই জানা। চমত্কারভাবে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারেন এই আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। নেইমার এ ক্ষেত্রে বেশ খানিকটা পিছিয়েই আছেন। প্রায়ই মাটিতে পড়ে যান নেইমার। অনেকেই অবশ্য বলেন, নেইমার মাঝেমধ্যে মাঠে বাড়তি সুবিধা আদায়ের জন্যও এমনটা করে থাকেন। ইচ্ছা করেই ডাইভ দেন। আবার কারও মতে, নেইমারের শরীরের গড়নটাই শক্তপোক্ত নয়। ঘটনা যা-ই হোক, নিজের সেরাটা বের করে আনতে চাইলে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করার কায়দাটা শিখতেই হবে নেইমারকে। আর মেসির কাছ থেকে এটা বেশ ভালোই শিখতে পারেন ২১ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান তারকা।

বল পায়ে আসামাত্রই বিপজ্জনকভাবে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগে ঢোকার আপ্রাণ চেষ্টা করতে দেখা যায় নেইমারকে। বেশির ভাগ উদীয়মান তারকাই নিজেকে প্রমাণের জন্য এমনটা করে থাকেন। তবে সব সময়ই এটা ভালো ফল না-ও দিতে পারে। বিশ্বসেরার পর্যায়ে যাওয়ার জন্য নেইমারকে শান্তভাবে ধৈর্য ধরাটাও শিখতে হবে। মোক্ষম সময়ের অপেক্ষা করতে হবে।

মেসিও চরম আক্রমণাত্মক ফুটবলের শিল্পটা বেশ ভালোমতোই রপ্ত করেছেন। তার পরও খেলার গতিপ্রকৃতি বুঝে নিজের লাগাম টানার দক্ষতাটাও আছে চারবারের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের। বার্সেলোনার টিকি-টাকা ফুটবলের ক্ষেত্রে যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বল পায়ে ধরে রেখে কী হতে যাচ্ছে, সেটা আঁচ করার দক্ষতাটাও অর্জন করতে হবে নেইমারকে। বার্সেলোনার জার্সি গায়ে মেসির পাশাপাশি খেলতে খেলতে নেইমার হয়তো বুঝতে পারবেন যে, সব সময় নিজের সর্বোচ্চ গতিতে না ছুটে ধীরস্থির হওয়াটাও কতখানি গুরুত্বপূর্ণ।

মাঠে কে কতখানি পরিশ্রম করেন, এটা হয়তো পরিসংখ্যান দিয়ে বিচার করা যাবে না। কিন্তু ব্যাপারটা উড়িয়েও দেওয়া যাবে না। নেইমার বার্সেলোনায় যোগ দিয়েছেন ফরোয়ার্ড হিসেবে। হয়তো মনেই হতে পারে যে, প্রতিপক্ষের আক্রমণ রুখে দেওয়া বা প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের পা থেকে বল কেড়ে নেওয়ার লড়াইয়ে খুব বেশি ঘাম ঝড়ানোর প্রয়োজন নেই। বর্তমান ফুটবল বিশ্বের অনেক তারকা স্ট্রাইকারকেই শুধু নিজের অবস্থানটাতেই খেলতে দেখা যায়। প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নেওয়ার জন্য তাঁরা খুব বেশি পরিশ্রম করেন না। কিন্তু নিজেকে সেরাদের কাতারে নিয়ে যাওয়ার জন্য নেইমারকে আক্রমণ আর রক্ষণের মধ্যে ভারসাম্যটাও রক্ষা করতে হবে। যেটা তিনি খুব ভালোমতোই শিখতে পারেন মেসির কাছ থেকে। মেসি শুধু ভালো ফরোয়ার্ডই নন, তিনি দুর্দান্ত ‘স্ল্যাচার’ও। প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিতেও অসম্ভব দক্ষ মেসি।

নেইমার আর মেসি, দুজনই ফুটবল বিশ্বে সুপরিচিত গোল করতে পারার দক্ষতার জন্য। কিন্তু মেসির থেকে নেইমার বেশ খানিকটা পিছিয়ে আছেন সতীর্থদের দিয়ে গোল করানোর বিচারে। গত পাঁচটি মৌসুমের অন্তত চারটির প্রতিটিতেই মেসির সহায়তায় সতীর্থরা করেছেন ১৮টি করে গোল। অন্যদিকে এক বছরে নেইমারের গোল সহায়তা ছিল সর্বোচ্চ ১৪টি। সতীর্থদের দিয়ে গোল করানোর দক্ষতাটাও নেইমারকে শিখে নিতে হবে খুব দ্রুতই। আর গোল করার দক্ষতার সঙ্গে যদি গোল করানোর দক্ষতাটাও যুক্ত হয়, তাহলে ব্রাজিলিয়ান এই ফরোয়ার্ড যে কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠবেন, প্রতিপক্ষের জন্য সেটা খুব সহজেই অনুমান করা যায়।

ফুটবল বিশ্বে মেসির পরিচিতিটা গড়ে উঠেছে শান্ত-ভদ্র-বিনয়ী একজন মানুষ হিসেবে। টানা চারটি বছর বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কারটা নিজের কাছে রাখলেও কখনো অহংকারী হয়ে উঠতে দেখা যায়নি মেসিকে। আর অসাধারণ এই গুণটি দিয়েই জয় করে নিয়েছেন লাখো মানুষের হূদয়। মেসির মতো সমর্থকদের মধ্যমণি হয়ে ওঠার জন্য নেইমারকেও শিখে নিতে হবে জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ পাঠটা। নিজের অবস্থা-অবস্থান-যোগ্যতা নিয়ে গর্বিত হতেই পারেন, কিন্তু সবার মন জয় করে নেওয়ার জন্য বিনয়ী হওয়াটাও যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটাও হয়তো নেইমার শিখতে পারবেন মেসির কাছ থেকে।
           গত পাঁচটি মৌসুমই অবিশ্বাস্য কেটেছে মেসির। এই পাঁচ মৌসুমের মধ্যে সবচেয়ে কম গোল যেবার করেছিলেন, সেবারও তাঁর নামের পাশে গোল ছিল ৩৮টি। এক মৌসুমে এতগুলো গোল করা যেকোনো ফরোয়ার্ডের জন্য একটা স্বপ্ন। কিন্তু মেসি এটিকে স্রেফ মামুলি এক বিষয় বানিয়ে ফেলেছেন। পরের চার মৌসুমে গোল করেছেন যথাক্রমে ৪৭, ৫৩, ৭৩ ও ৬০টি। মেসি এতটাই দুর্দান্ত ছিলেন, তাঁর আলোয় ফিকে হয়ে গেছেন সতীর্থরা। বার্সায় মেসির পর নিকটতম গোলদাতার গোলসংখ্যা ছিল খুব সামান্য। কখনো কখনো বার্সাকে ছাপিয়ে বেশি আলোচনায় এসেছেন মেসিই। তার পরও মেসি বারবার বলেছেন, ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে দলীয় সাফল্যটাই তাঁর কাছে বেশি জরুরি। মেসির সেরা সময় কেটেছে ২০১১-১২ মৌসুমে। ৬০ ম্যাচে করেছিলেন ৭৩ গোল। কিন্তু এই মৌসুমে কোপা ডেল রে ছাড়া আর কিছুই জেতেনি বার্সা। মেসি তখন বলেছিলেন, তিনি তাঁর সব কটি গোলের বিনিময়ে হলেও বার্সার জন্য ট্রফি চান। নিজের চেয়ে দল বড়—এটাও ভালোভাবে আত্মস্থ করতে হবে নেইমারকে।

কীভাবে সেরা হতে হয়, এটা হয়তো মেসির চেয়ে ভালো আর কেউই জানেন না। মাত্র ২৬ বছর বয়সেই টানা চারটি বর্ষসেরা পুরস্কার সেটারই সাক্ষ্য দেয়। বার্সেলোনার হয়ে তিনি জিতেছেনও অনেক শিরোপা। এবং সেখানে এমনভাবেই নিজের পদচিহ্ন এঁকে দিয়েছেন এবং এখনো দিচ্ছেন যে, দীর্ঘদিনই তিনি থেকে যেতে পারবেন ফুটবলপ্রেমীদের স্মৃতিতে।

নেইমার ইতিমধ্যেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন তাঁর প্রজন্মের অন্যতম প্রতিভাবান ফুটবলার হিসেবে। হয়তো ২১ বছর বয়সীদের মধ্যে সেরা ফুটবলার তিনিই। কিন্তু শুধু এটুকু দিয়েই নিজেকে সেরাদের কাতারে নিয়ে যেতে পারবেন না। কীভাবে নিজেকে আরও পরিপক্ব করে তুলতে হয়, কীভাবে নিজেকেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলতে হয়, কীভাবে নিজের আগের মৌসুমের পারফরম্যান্সকেও ছাপিয়ে যেতে হয়—তা শিখতে মেসির চেয়ে ভালো শিক্ষক নেইমার আর কোথায় পাবেন!

 

Leave a comment

You must be Logged in to post comment.