Published On: Thu, Aug 1st, 2013

তারেক কে হত্যা করা হল মিল্কি হত্যার নির্দেশদাতার নির্দেশেই!

Share This
Tags

imagesঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক মিল্কি হত্যাকাণ্ডের পেছনের ঘটনা ধামাচাপা দিতেই মিল্কির হত্যাকারী একই শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এইচএম জাহিদ সিদ্দিক তারেককে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, উপরের কারো নির্দেশেই মিল্কিকে হত্যা করেছে তারেক। হত্যাকাণ্ডের সময় তারেকের মোবাইলে কথা বলার ফুটেজ দেখে এমনটাই মনে হয়েছে।

যার নির্দেশে মিল্কিকে হত্যা করেছে তারেক, তার নাম যেন কোনোভাবেই প্রকাশ না হয় এটা নিশ্চিত করতে তারই নির্দেশে তারেককেও হত্যা করা হয়েছে বলেই মনে করছেন র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

গুলশানের শপার্স ওয়ার্ল্ডের ক্লোজ্ডে সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে রিয়াজউদ্দিন খান মিল্কি হত্যাকাণ্ডের ফুটেজে দেখা গেছে, ঘাতক তারেক ডান হাতে মিল্কির মাথা লক্ষ্য করে গুলি করছেন এবং বাম হাতে মোবাইল ফোনে কারো সঙ্গে কথা বলছেন।

এই ভিডিও দেখে মনে হচ্ছিল, গুলির শব্দ এবং অন্তিম মুহূর্তে মিল্কির আর্তনাদ মোবাইলের ওপাশের ব্যক্তিকে শুনাচ্ছে তারেক।

ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে সবার মনেই প্রশ্ন উঠেছে, কে বা কারা এই অলক্ষ্যের ইশারাকারী, যার সঙ্গে কথা বলতে বলতে তারেক গুলি করছিলেন। সম্ভবত সেই ছিল এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী অথবা নির্দেশদাতা।

এ ব্যাপারে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম ঢাকাবিডি24-কে বলেন, ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে যেন তারেক এই হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে না পারে সেজন্যই তাকে হত্যা করা হতে পারে।

বুধবারেই বেশ কিছু গণমাধ্যমে মিল্কি হত্যাকান্ডের সময় তারেকের মোবাইলে কথা বলা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এসব প্রতিবেদনে বলা হয়, মোবাইলে তারেক যার সঙ্গে কথা বলছিল, তারই নির্দেশে মিল্কিকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।

র‌্যাবেরও ধারণা, হত্যাকাণ্ডের সময় তারেক মোবাইলে কাউকে গুলির শব্দ বা মিল্কির আর্তনাদ শোনাচ্ছিলেন। এমনকি এই বিষয় নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে র‌্যাব।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক এটিএম হাবিবুর রহমান বুধবার বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘তারেক অসুস্থ থাকার কারণে এখনো এ বিষয়ে তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করা হয়নি। সে সুস্থ হলে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। তখন বেরিয়ে আসবে ফোনের ও প্রান্তে কে বা কারা ছিল।’

হাবিবুর রহমানের এই মন্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরপরই তারেককে হত্যা করা হল। এর ফলে এটাই প্রমাণিত হয়, মিল্কি হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী বা নির্দেশদাতার নাম যেন প্রকাশ না হয় একারণেই তারই নির্দেশে তারেককে হত্যা করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, রিয়াজুল হক মিল্কি হত্যার প্রধান আসামি এইচএম জাহিদ সিদ্দিক তারেক বুধবার রাত সোয়া ১০টার দিকে বিমানবন্দর থানাধীন কাউলা এলাকায় মাটিকাটা প্রকল্পের পাশে র‌্যাবের কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন।

এ সময় শাহ আলম নামে আরেকজন নিহত এবং ডিএডি আবুল কালাম আজাদ ও নায়েক আসাদুজ্জামান নামে র‌্যাবের দুই সদস্য আহত হয়েছেন।

র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক ক্যাপ্টেন মাকসুদুল আলম ঢাকাবিডি24কে বলেন, ‘উত্তরার একটি হাসপাতাল থেকে হত্যা মামলার আসামি জাহিদ সিদ্দিক তারেককে গুলশান থানায় হস্তান্তর করতে যাওয়ার পথে বিমানবন্দরের কাছে কাউলায় এই ঘটনা ঘটে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে র‌্যাব-১ এর এক কর্মকর্তা ঢাকাবিডি24-কে জানান, হাসপাতাল থেকেই একটি সাদা রঙের প্রাইভেটকার এবং তিনটি মোটরসাইকেল র‌্যাবের গাড়িটি অনুসরণ শুরু করে। র‌্যাবের গাড়িটি কাউলা পার হওয়ার পরপরই প্রাইভেট কারটি হঠাৎ সামনে এসে র‌্যাবের মাইক্রোবাসটির পথরোধ করে দাঁড়ায়।

এ সময় ৭/৮ জন সন্ত্রাসী র‌্যাবের গাড়ি থেকে তারেককে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। তাদের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় তারা গাড়ি লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি করে। এতে তারেকের মাথা ও পেটে গুলিবিদ্ধ হলে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়।

ঘটনার পর দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে চারজন পালিয়ে যায় এবং বাকিরা গাড়ি এবং আরেকটি মোটরসাইকেল ফেলে অন্ধকারের ভেতর দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে।

এসময় র‌্যাব সদস্যরা পিছন থেকে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লে শাহ আলম নামের এক সন্ত্রাসী নিহত হন।

এই ঘটনার পরপরই খবর পেয়ে র‌্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সাদা রঙের একটি প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো-গ ১২৭২৭৩) রাস্তার বামপাশে আড়াআড়ি করে দাড়িয়ে আছে। গাড়িটির সামনের এবং বামপাশের কাঁচ ছিল ভাঙা।

এর পিছনে ধূসর রঙের র‌্যাবের মাইক্রোবাসটি দাঁড়ানো ছিল। এই মাইক্রোবাসে করেই তারেককে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। একটু দূরে সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত একটি নম্বরপ্লেট বিহীন মোটরসাইকেলও পড়ে ছিল।

র‌্যাবের মাইক্রোবাসটির দ্বিতীয় সারির একটি সিটে ছাই রঙের টি-শার্ট ও সাদা পাজামা পরা অবস্থায় তারেকের গুলিবিদ্ধ লাশ মুখথুবড়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তারেকের মাথার ডানদিকে একটি এবং পেটে দুটি গুলির দাগ দেখা যায়।

র‌্যাবের মাইক্রোবাসের ডান দিকের কাঁচে ছয়টি এবং সামনের কাঁচে একটি গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়। এছাড়া যে সিটে তারেক বসেছিল তার সামনের সিটে দুটি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্য, গত সোমবার রাত ১টার দিকে গুলশানের ‘শপার্স ওয়ার্ল্ডের’ সামনে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক মিল্কিকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

শপার্স ওয়ার্ল্ডের সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা চিত্রে দেখা যায়, প্রাইভেটকার থেকে মিল্কি নামার পর সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি ও টুপি পরা এক যুবক বাম কানে মোবাইলে কথা বলতে বলতে মিল্কির সামনে এসে ডান হাতের আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে প্রথমে একটি গুলি ছোড়ে।

গুলিবিদ্ধ মিল্কি বাম দিকে হেলে মাটিতে পড়ে হামাগুঁড়ি দিতে থাকেন। এ সময় ওই যুবক মিল্কিকে লক্ষ্য করে সাত/আটটি গুলি ছোড়েন। এ সময় আরো এক যুবক এসে পেছন থেকে আরো কয়েক রাউন্ড গুলি করে। মিশন শেষে পাশে দাঁড়ানো মোটর সাইকেলের পেছনে উঠে পালিয়ে গেলেন গুলি করা ওই যুবক।
পরে র‌্যাব কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের জানান, পাঞ্জাবি পরা ওই যুবক যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক তারেক। তাকে মঙ্গলবার ভোরে উত্তরার একটি হাসপাতাল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয়।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে গুলশান থানায় মামলা করেন নিহতের ভাই মেজর রাশিদুল হক খান। এতে তারেকসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরো কয়েকজনকে আসামি করা হয়।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। তারা হলেন- তুহিনুর রহমান (২৫), সৈয়দ মোস্তফা আলী রুমি (৩৩), মোহাম্মদ রাসেদ মাহামুদ (২৫), সাইদুল ইসলাম ওরফে নুরুজ্জামান (২২), মোহাম্মদ সুজন হাওরাদার (২২) ও মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর (২৩)।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই সাব্বির রহমান বুধবার ছয়জনকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক মো. রেজাউল করিম সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

Leave a comment

You must be Logged in to post comment.