মানসিক শক্তি বাড়ানোর অনুশীলন
মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে আমরা অনেক আলোচনা করলেও মানসিক শক্তি নিয়ে খুব কম মানুষই আলোচনা করি। মানসিক শক্তির অর্থ আপনার আবেগ, চিন্তা ও আচরণকে সংযত করে তার মাধ্যমে যে কোনো অবস্থাতেই গঠনমূলক আচরণ করার ক্ষমতা।
মানসিক শক্তি বাড়ানোর জন্য জীবনের যা আছে তা নিয়ে চলার মতো সাহস ও সাফল্যের নিজস্ব সংজ্ঞা নির্ধারণ করার মতো স্পর্ধা অর্জন করতে হয়। মার্কিন সাইকোথেরাপিস্ট অ্যামি মরিন মানসিক শক্তি বাড়ানোর জন্য পাঁচটি কার্যকর অনুশীলন করার পরামর্শ দিয়েছেন।
১. নিজের বিশ্বাসগুলো মূল্যায়ন
প্রত্যেকের নিজের ব্যাপারে কিছু বিশ্বাস ও উন্নয়ন তৈরি হয়। এর মধ্যে থাকে নিজস্ব জীবন ও পৃথিবী সম্পর্কে সাধারণ ধারণা। কেন্দ্রীয় বিশ্বাসগুলো সময় ও অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে। আপনার কেন্দ্রীয় বিশ্বাস নিয়ে সচেতন হন কিংবা না হন, এগুলো আপনার ধারণা, আচরণ ও আবেগের উপর প্রভাব বিস্তার করে।
কখনো কখনো কেন্দ্রীয় বিশ্বাস হয় ভুল ও নেতিবাচক। যেমন, আপনার ধারণা থাকতে পারে যে কখনো সফল হতে পারবেন না আপনি। এ কারণে আপনি পর্যাপ্ত সংখ্যক চাকরির আবেদন নাও করতে পারেন। আবার চাকরির ইন্টারভিউতে এ কারণে নিজের যোগ্যতা ঠিকভাবে তুলে ধরতে নাও পারেন। এভাবে মনের ভেতর রাজত্ব করতে পারে নিজের অপ্রিয় বিশ্বাসগুলো।
নিজের মনের বিশ্বাসগুলো নির্ণয় ও মূল্যায়ন করুন। ভালো কিংবা খারাপ যাই হোকনা কেন, নিজের বিশ্বাসগুলোর দিকে তাকান। এরপর এগুলোর ব্যতিক্রম খুঁজে বের করুন। মনে রাখতে হবে, জীবনে খুব অল্প বিষয়ই সবসময় অথবা কখনো সত্য থাকে। বিশ্বাসগুলো সংশোধন করার জন্য সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কঠিন পরিশ্রম করতে হয়। এ কাজে সফল হলে জীবনের আমূল পরিবর্তন সম্ভব।
২. মানসিক এনার্জি বাড়ান
সমস্যা সমাধান ও লক্ষ্য নির্ধারণের মতো উৎপাদনশীল কাজের জন্য মানসিক এনার্জি সংরক্ষণ করুন। আপনার চিন্তা যথেষ্ট উৎপাদনশীল না হলে ইতিবাচকভাবে এজন্য চেষ্টা করতে হবে। এজন্য যতো বেশি ইতিবাচকভাবে চেষ্টা করবেন, এগুলোতে ক্রমে ততোই অভ্যস্ত হবেন।
৩. নেতিবাচক চিন্তার বদলে আসুক ইতিবাচক চিন্তা
চিন্তা নিয়ে অধিকাংশ মানুষই খুব একটা ভাবেন না। তবে এ বিষয়ে সচেতনতা খুবই দরকার। “আমি কোনো কাজ ঠিকভাবে করতে পারি না”–এ চিন্তার বদলে ফেলা দরকার। নেতিবাচক চিন্তাগুলো নিজেকে গ্রাস করে ফেলার আগেই দরকার এগুলো থেকে বের হয়ে আসা। তবে ইতিবাচক চিন্তা হতে হবে বাস্তবসম্মত। যেমন চিন্তা করতে হবে, “আমার কিছু দুর্বলতা থাকলেও তার চেয়ে অনেক ক্ষমতা আছে।”
৪. সহ্য করার অনুশীলন
মানসিকভাবে শক্তিশালী হওয়া মানে মনের আবেগ দেখানো যাবে না, তা নয়। এছাড়া মানসিক সামর্থ মানে আপনার আবেগ বিষয়ে যথেষ্ট ধারণা থাকতে হবে। এভাবে কোন অবস্থায় কেমন আচরণ করতে হবে তা নির্ধারণ করতে পারবেন। মানসিক সামর্থ মানে আপনার অনুভূতির উপর নিয়ন্ত্রণ। অনুভূতি যেন আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে।
মানসিক সামর্থ মানে বিভিন্ন প্রভাবক বুঝে আপনার আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা। যদি আপনার উদ্বেগের কারণে নতুন কিছু করতে সমস্যা হয়, তাহলে তা থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আর এতে অনুশীলনেও কাজ হতে পারে।
৫. দৈনন্দিন উন্নতি পর্যবেক্ষণ
এখনকার ব্যস্ত পৃথিবী কোনো বিষয়ের সম্পূর্ণ ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করে না। এজন্য নিজের মানসিক অগ্রগতি ও অর্জন প্রতিদিন পর্যবেক্ষণ জন্য সময় বের করতে হবে। প্রত্যেক দিন শেষে নিজের চিন্তা, আবেগ ও আচরণ নিয়ে নতুন কী শিখলেন, তা নিয়ে চিন্তা করুন। নিজের ভবিষ্যৎ মানসিক উন্নতির আশা নিয়ে চিন্তা করতেও ভুলবেন না।
মানসিক উন্নতি সবসময়ই করা সম্ভব। কখনো কখনো এ কাজ অনেক কঠিন মনে হতে পারে। কিন্তু নিজের উন্নতিগুলো নিয়ে চিন্তা করলে এক্ষেত্রে অগ্রগতি তাড়াতাড়ি হবে, মানসিক সামর্থও বাড়বে।