বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী
নেপাল: ২০ ওভারে ১২৬/৫
বাংলাদেশ: ১৫.৩ ওভারে ১৩২/২
ফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী
আলোচনাটা হচ্ছিল আফগানিস্তানকে নিয়ে। সেই আফগান-বাধাই যখন হেসে-খেলে পার হওয়া গেছে, তখন নেপাল আর কী বাধার দেয়াল তুলবে! অথচ কাল নেপালই কিনা বাংলাদেশ দলকে দিল ১২৭ রানের লক্ষ্য!
আফগানিস্তানকে ৭২ রানে অলআউট করে দেওয়ার পর নেপালের ১২৬ রান একটু বেশি মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। যদিও সেটি টপকে যাওয়া কোনো ব্যাপারই হয়নি। ২৭ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ শেষ! শেষ হতে পারত আরও এক বল আগেই। কিন্তু ছক্কা দিয়ে শেষ করবেন ঠিক করে রেখেছেন বলে সাকিব সিঙ্গেল নিলেন না। শেষ পর্যন্ত টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ছক্কাতেই এল জয়সূচক রান। ১৮ বলে ৩৭ রানের ঝোড়ো ইনিংসে সাকিব চার মেরেছেন মাত্র ১টি, ছক্কা ৪টি।
দুই ওপেনারও ঝোড়ো সূচনাই করেছিলেন। বাঁহাতি স্পিনার বসন্ত রেগমিকে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে ইনিংসের অষ্টম ওভারে তামিম ক্যাচ দিয়েছেন শর্ট থার্ডম্যানে। ২২ বলে ৩০ রান করে তামিম আউট হয়ে যাওয়ার তিন ওভারের মধ্যেই সাব্বিরের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হয়ে যান এনামুলও। আগের ম্যাচে ৪৪ রান করে অপরাজিত ছিলেন, কালও ৮ রানের জন্য পেলেন না ফিফটি।
সম্পাল কামির করা ইনিংসের প্রথম ওভারেই এনামুল ম্যাচটা যত দ্রুত সম্ভব শেষ করে দেওয়ার ইচ্ছাটা বুঝিয়ে দেন। পঞ্চম বলে ডিপ স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে ছক্কা, পরের বলে পয়েন্ট দিয়ে চার। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেও প্রায় একইভাবে ছক্কা মেরে সম্পালকে ‘স্বাগত’ জানিয়েছেন এনামুল। তবে তামিম জ্বলে ওঠার আগেই নিভে গেছেন। ৩০ রানের ইনিংসে ঘরের দর্শকদের যা একটু বিনোদন দিয়েছেন নেপালের অধিনায়ক পরশ খাড়কাকে লং অন দিয়ে বিশাল এক ছক্কা মেরে। আউট হওয়ার আগে অবশ্য এনামুলের সঙ্গে গড়েছেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৩ রানের উদ্বোধনী জুটি। আগের সর্বোচ্চ জুটিটা ছিল ৬২ রানের। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে মোহাম্মদ আশরাফুলের সঙ্গে সেই জুটিরও অংশীদার ছিলেন তামিম।
বাংলাদেশকে ‘দেখিয়ে দেব’জাতীয় কথা না বললেও অধিনায়ক পরশ খাড়কার আগের দিনের কথাবার্তাতেই বোঝা যাচ্ছিল, নেপাল আগেই পরাজয় মেনে নেওয়ার দল নয়। কাল খেলাতেও সেটা স্পষ্ট করে দিল। ৩৯ রানে ৩ উইকেট হারানোর পরও ইনিংসের নিয়ন্ত্রণটা বাংলাদেশের বোলারদের হাতে তুলে দেননি ব্যাটসম্যানরা। বরং বাংলাদেশের বোলারদের যখন নেপালকে আরও চেপে ধরার কথা, তখনই দারুণ পরিণত ক্রিকেট খেলে মাথার ওপর থেকে চাপটা সরিয়ে দিয়েছেন অধিনায়ক পরশ খাড়কা ও শারদ ভেসাওকার।
খাড়কা-ভেসাওকারের চতুর্থ উইকেট জুটি একটু অস্বস্তিই ছড়িয়ে দিয়েছিল। খুব বেশি শট খেলছিলেন না কেউই, তাই আউটের সুযোগও তৈরি হয়নি সেভাবে। নেপালি ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং দেখে অবশ্য বাংলাদেশের অতীতের ব্যাটিংটাই মনে পড়ছিল বারবার। একটা সময় বাংলাদেশ ব্যাটিং করত পুরো ওভার খেলার উদ্দেশ্যে। রান যা হওয়ার হবে। কাল নেপালও যেন পুরো ২০ ওভার ব্যাটিং করার জন্যই খেলল। ওই দুজনের হাত ধরে উদ্দেশ্যটা সফল হয়েছে ভালোভাবেই। ১২ ওভার ৩ বল একসঙ্গে থেকে ৮৫ রানের জুটি গড়েছেন দুজনে, সঙ্গে নেপালের রানটাকেও নিয়ে গেছেন এক শর ওপরে। শেষ পর্যন্ত খাড়কাকে বোল্ড করে মাশরাফি ভেঙেছেন সেই জুটি।
নেপালি ব্যাটসম্যানরা যে একেবারেই বাংলাদেশি বোলারদের ওপর চড়াও হননি, তা নয়। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে আক্রমণে আসা সাকিব আল হাসানের শেষ দুই বলে যেমন কাভার আর ফাইন লেগ দিয়ে দুই চার মেরে দিলেন জ্ঞানেন্দ্র মাল্লা। ওই ওভারে ১০ রান দেওয়ার পর সাকিবকে আবার বোলিংয়ে আনা হয়েছে ১২তম ওভারে। শেষ তিন ওভারে কোনো বাউন্ডারি দেননি সাকিব, তবে মেলেনি উইকেটও।
কাল হঠাৎই পেস বোলার হয়ে যাওয়া নাসির হোসেনের করা ইনিংসের ১৩তম ওভারেও খাড়কার দুই বাউন্ডারিসহ রান এসেছে ১১। আর ইনিংসের ১৭তম ওভারে ফরহাদ রেজা দিয়েছেন ১৪ রান, যাতে ছিল ৩টি চার।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সফলতম আল আমিন। নিজের প্রথম ওভারে ৮ রান দিয়েছিলেন, ওয়াইড করেছিলেন তিনটি। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরেই তিন বলের মধ্যে দুই উইকেট। তবে পুরো ২০ ওভার বল করেও নেপালের ৫ উইকেটের বেশি ফেলতে না পারা বাংলাদেশের বোলারদের জন্য হতাশারই। খাড়কা-ভেসাওকারের জুটির সময় বোলার-ফিল্ডারদের শরীরী ভাষায়ও কেমন যেন একটা গা-ছাড়া ব্যাপার ছিল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে যে আক্রমণাত্মক মানসিকতাটা দেখা গিয়েছিল, সেটা ঠিক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে ব্যাটিংয়ে সেই অভিযোগ করার কোনো সুযোগ নেই।