বাংলাদেশি যুবক যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার
যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৩ বছর বয়সী বাংলাদেশি বংশােদ্ভূত রাহাতুল আশিকিম খানকে গ্রেপ্তার করেছে এফবিআই। গত মঙ্গলবার সন্ত্রাসী তৎপরতা ও হিংসাত্মক জিহাদ অংশ নেওয়ার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার দায়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এফবিআই জানতে পেরেছিল যে, আশিকিম সোমালিয়ার আলকায়েদা সহযোগী আল শাবাবের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে পাসপোর্ট এবং সম্ভাব্য রুট নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। অস্টিনেও তার সঙ্গে এক এববিআই এজেন্টের বৈঠক হয়। আর তখন আশিকিম বলেন যে, বিদেশে মিশন সফল করতে তিনি একজন সহচরকে নিয়োগ দিতে চান। আর এবিষয়টি কেবল তারই জানা আছে। উল্লেখ্য যে, ২০১২ সালের অক্টোবরে এফবিআই এক স্টিং অভিযান চালিয়ে ২১ বছর বয়সী নাফিসকে গ্রেপ্তার করেছিল। নাফিস ১০০০ পাউন্ডের গাড়ি বোমা দিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল রবার্ট পিটম্যান এক বিবৃতিতে বলেছেন, টেক্সাসের জয়েন্ট টেরোরিজম টাস্ক ফোর্স এবং এফবিআই দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত চালিয়ে এই দুজনের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ আনতে সক্ষম হয়েছে। যদিও তা পৃথক ঘটনা।
আশিকিম ২০০২ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেন। তিনি অস্টিনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুল টাইম ছাত্র হিসেবে অধ্যায়নরত ছিলেন। আদালতে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে বলা হয়েছে তিনি একটি অনলাইন চ্যাটে অংশ নিতেন। এর মাধ্যমে তিনি সন্ত্রাসী কাজে অংশ নিতে লোক বাছাই করতেন। একজন ইনফরম্যান্টের সঙ্গে যোগাযোগকালে ২০১১ সালে এটা তাকে করতে দেখা যায়। সেই থেকে এফবিআই পিছু নেয় তাঁর। অশিকিম ওই ইনফম্যান্টকে বলেন যে, দুর্বল ও অভাগা বাঙালি জেহাদকে ভয় পায়। বাঙালিদের এই দুর্গতি দেখে তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটে। আশিকিমের কথায়, বাঙ্গালি জিহাদকে ভালোবাসে না। বাঙালি জিহাদের জন্য রক্ত দিতে জানে না। মার্কিন আদালতে পেশ করা নথিতে এসব কথা বর্ননা করা হয়েছে। উলফ সম্পর্কে আদালতকে জানানো হয়েছে যে, ২০১৩ সালের আগস্টে উলফের স্ত্রী একজন আরকাভার এফবিআই এজেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনিই এজেন্টকে বলেন যে, তিনি ও তার স্বামী একটি সহিংস জিহাদে অংশ নিতে সংকল্পবদ্ধ হয়েছেন। উলফ সিরিয়ায় ঝাঁপিয়ে পড়তে একেবারেই উতলা হয়ে পড়েছেন। তিনি তার দ্বীনের (ধর্ম) জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। কোনো কিছুর জন্য, কারো জন্য তিনি রক্ত দিতে রাজি আছেন। আরেক জন আন্ডারকাভার এফবিআই এজেন্টকে উলফ তাঁর বিদেশ সফরের পরিকল্পনা আলোচনা করেচিরেন। ওই বছরের জানুয়ারি মাসে উলফ জানতে পারেন যে, আল কায়েদা সিরিয়ায় মাটিতে বসে বিদেশী দ্বীনি ভাইদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এরপর তাদেরকে প্রত্যেকের নিজ নিজ দেশে জিহাদ সংগঠন করতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর পরপরই একজন এফবিআই এজেন্ট সিরিয়ার বিদেশি যোদ্ধাদের একটি ভিডিও ইউটিউিব দেখেন। আর সেই ভিডিওতে তিনি উলফ দম্পতিকেও লক্ষ্য করেন।
লস এঞ্জেলস টাইমস বলেছে, তাসকিন ও উলফের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের প্রত্যেকের অনধিক ১৫ বছর জেল এবং সর্বোচ্চ আড়াই লাখ পাউন্ড জরিমানা হতে পারে। টেক্সাসের রাউ-রকের পিবলস্টোনট্রেইলের একটি বাড়িতে থাকতেন আশিকিম। এফবিআই এজেন্টরা যখন তাঁকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালান তখন সেই দৃশ্য ভিডিও করেন তার এক প্রতিবেশী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি ওই ভিডিও ক্লিপ কেএক্সএএনকে সরবরাহ করেন। আশিকিমকে তার বাড়ি থেকে এবং উলফকে বিমান বন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। উলফ জর্জ বুশ হিউস্টন বিমানবন্দর থেকে ইউরোপের একটি দেশে পাড়ি জমাচ্ছিলেন।মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সহিংস জিহাদ সংঘটনসহ বিদেশে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালানোর জন্য লোক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় তিনি অন্যদের সঙ্গে চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছিলেন। উলফের বিরুদ্ধে আনা পৃথক অভিযোগে বলা হয়, সিরিয়ার জঙ্গি তৎপরতায় সহযোগিতা দিতে তিনি মধ্যপ্রাচ্য সফরের পরিকল্পনা করেছিলেন। তাস সেন্ট্রাল টেক্সাস জয়েন্ট টেরোরিজম টাস্ক ফোর্স উভয়ের গ্রেপ্তার অভিযানে নেতৃত্ব দেয়। তারা উভয়ের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী তৎপরতায় মেটেরিয়াল সাপোর্ট বা বস্তুগত সমর্থন প্রদানের অভিযোগ এনেছে বলে ১৮ জুন লস এঞ্জেলস টাইমস খবর দিয়েছে।