Published On: Tue, Jul 8th, 2014

বন্ধুত্বের ইতি কখন হয়

Share This
Tags

aদুজন মানুষের মধ্যে অন্যতম সুন্দর সম্পর্কের নাম বন্ধুত্ব। বন্ধুর মতো বন্ধু হলে আজীবন সে সম্পর্ক টিকে থাকে। কিন্তু প্রিয় বন্ধুটির মধ্যে অপ্রত্যাশিত কিছু আচরণ লক্ষ করলে বন্ধুত্বের সম্পর্ককে বিদায় জানানো ভালো। কী ধরনের বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে না রেখে ইতি টানাটাই আপনার জন্য শ্রেয় হবে, সম্প্রতি তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মুম্বাই মিরর।

১ স্কুলে আপনার কাছের বন্ধুটিই হয়তো পরীক্ষায় ভালো করার জন্য আপনার অগোচরে নানা পন্থা অবলম্বন করত। আপনি তা বুঝেও চুপচাপ থাকতেন। পড়ালেখার গণ্ডি পেরিয়ে কর্মজীবনেও আপনারা বন্ধুত্ব ধরে রেখেছেন। দুজনই যার যার মতো করে ঘর-সংসার করছেন। এ অবস্থায় আপনার সন্তানের সঙ্গে যদি ওই বন্ধুটি তাঁর সন্তানের তুলনা শুরু করেন, তাহলে বুঝতে হবে কোথাও কোনো একটা গোলমাল হচ্ছে। চোখ বন্ধ করে ধরে নিতে পারেন, আপনাকে জীবনের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন আপনার ওই বন্ধু। দুজন বন্ধুর মধ্যে প্রতিযোগিতা মোটেও খারাপ কিছু নয়। বিষয়টি দুজনকেই জীবনের পথে সামনে এগিয়ে যেতে উত্সাহ জোগায়। কিন্তু যদি বুঝতে পারেন আপনার সঙ্গে বাড়াবাড়ি রকমের প্রতিযোগিতা করে যাচ্ছেন আপনার বন্ধুটি, তাহলে সেই সম্পর্ককে আজই বিদায় জানিয়ে দিন।
২ বার বার আপনার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে ভুলে যাচ্ছেন আপনার প্রিয় বন্ধুটি! কিংবা তিনি আপনার নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুর পরও আপনাকে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে আসছেন না! যখনই তাঁকে ফোন দিচ্ছেন, ব্যস্ততার কথা বলে আপনাকে এড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি! বন্ধুকে খুদে বার্তা পাঠানোর এক সপ্তাহ পর জবাব মিলছে! দুজন মিলে কোনো কাজ করার পরিকল্পনা করলেও শেষ মুহূর্তে পিঠটান দিচ্ছেন বন্ধুটি! এসব বিষয় লক্ষ করলে আপনাকে ধরে নিতে হবে, আপনার ওপর থেকে বন্ধুটির শ্রদ্ধা উঠে গেছে। এমন বন্ধুত্ব ধরে রাখার কোনো মানে নেই।
৩ কর্মক্ষেত্রে কাজ করতে গিয়ে দুজন মানুষের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠতেই পারে। কাজের ফাঁকে আড্ডা দেওয়াটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু আপনার বন্ধুটি যদি ঘন ঘন আপনার ডেস্কে আসেন এবং মাত্রাতিরিক্ত খোশগল্পে মেতে ওঠেন, তাহলেই সমস্যা। আর বন্ধুটি যদি বিপরীত লিঙ্গের হয়, তাহলেতো কথাই নেই! এ অবস্থায় আপনাকেই লাগাম টেনে ধরার উদ্যোগ নিতে হবে। নইলে অফিসে আপনাদের দুজনকে নিয়ে নানা কানাঘুষা উঠতে পারে। এতে করে উর্ধ্বতনের বিরাগভাজনও হতে পারেন আপনি। শেষমেষ বন্ধু এবং চাকরি দুটিই হারাতে হতে পারে আপনাকে। অযথা এসব ঝামেলায় জড়িয়ে লাভ কি!

৪ দুজন মানুষের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক দৃঢ় হলে যেকোনো উপায়ে বন্ধুকে দেওয়া কথা রাখার চেষ্টা করেন দুজনই। কিন্তু আপনার প্রিয় বন্ধুটি কি প্রায়ই কথা দিয়ে কথা রাখছেন না! শুনতে কষ্ট লাগলেও সত্যটা হলো, বন্ধুটির কাছে আপনি আপনার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছেন। তার পরও যদি বন্ধুত্বটা আপনি ধরে রাখেন, তাহলে ধীরে ধীরে তা আপনার আত্মবিশ্বাসে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে শুরু করতে পারে। এ অবস্থায় ওই বন্ধুকে বাদ দিয়ে এমন কাউকে বেছে নিন, যিনি আপনাকে গুরুত্ব দেবে, আপনার পেছনে সময় ব্যয় করবে।
৫ আপনি শত চেষ্টা করেও বন্ধুটির মন রক্ষা করতে পারছেন না! আপনার পোশাক, চুল, মুখের দুর্গন্ধ নিয়ে প্রায়ই কটু-কাটব্য শুনতে হচ্ছে প্রিয় বন্ধুটির কাছ থেকে! একজন সত্যিকারের বন্ধু কখনোই এমন তাচ্ছিল্য দেখাতে পারে না। আপনি শুধু শুধু কেন ছোট হবেন তাঁর কাছে! এতে করে কাজের কাজ কিছুই হবে না। কেবল আপনার ওই বন্ধুটির দম্ভ বাড়বে। আর আপনি ভুগতে থাকবেন অনিশ্চয়তায়। এমন বন্ধু থাকার চেয়ে না থাকাটাই কি ঢের ভালো না!
৬ কথায় বলে, ‘সত্ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসত্ সঙ্গে সর্বনাশ’। বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে সব সময় এই প্রবাদটি মেনে চলতে হবে। যদি দেখেন আপনার বন্ধুটি মজা করার কথা বলে আপনাকে আজেবাজে কাজে উত্সাহিত করার চেষ্টা করছেন, তবে যত দ্রুত সম্ভব তাঁর সঙ্গ ত্যাগ করুন। নইলে তাঁর এলোমেলো জীবন আপনার জীবনকেও এলোমেলো করে দিতে পারে। একসঙ্গে পথ চললে খুব সহজেই একজন মানুষ আরেকজন মানুষের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। উচ্ছৃঙ্খল বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুত্বের ইতি না টানলে একদিন হয়তো আপনিও উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়বেন। কাজেই এ ধরনের বন্ধুকে দ্রুত বিদায় জানানোটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
৭ আপনার বন্ধুটি কি ফেসবুক, টুইটার কিংবা এ ধরনের সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার ওয়েবসাইটে মাত্রাতিরিক্ত আসক্ত! আপনার চেয়ে ভারচুয়াল বন্ধুদেরই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি! এ অবস্থা হলে সমস্যাটা বেশ গুরুতর। আপনাকে বুঝতে হবে, বন্ধুত্বের ইতি টানার সময় এসে গেছে। ফেসবুক কিংবা টুইটারে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার চেয়ে সামনা-সামনি আড্ডা দেওয়াটা অনেক বেশি জরুরি। সত্যিকারের বন্ধু চিরকাল আপনার সুখ-দুঃখের সঙ্গী হবে। কিন্তু অসংখ্য ভারচুয়াল বন্ধু আপনাকে মুহূর্তের মধ্যে ছেড়ে চলে যেতে পারে। এটাই বাস্তবতা।

Leave a comment

You must be Logged in to post comment.