Published On: Fri, Aug 30th, 2013

প্রকাশ্য দিবালোকে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা খুন

Share This
Tags

fazlul karimরাজধানীতে এবার প্রকাশ্য দিবালোকে নিজ বাসায় খুন হয়েছেন পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সুপার ফজলুল করিম খান (৬৪)। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে পশ্চিম রামপুরার বাড়িতে ঢুকে স্ত্রীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।ফজলুল করিম সর্বশেষ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) কর্মরত ছিলেন। ছয় বছর আগে অবসরে যান। তিনি পশ্চিম রামপুরার ৭৫/২ ওয়াপদা রোডের পাঁচতলা বাড়ির মালিক। ওই বাড়ির তৃতীয় তলায় তিনি সপরিবারে থাকতেন। হত্যার কারণ সম্পর্কে গতকাল পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান।পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে অস্ত্রধারী তিনজন দুর্বৃত্ত ফজলুল করিমের বাসায় ঢোকে। এ সময় দরজা খোলা ছিল। ঘরে ঢুকেই দুর্বৃত্তরা প্রথমে ফজলুল করিমের স্ত্রীকে পায়। তাঁকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে একটি কক্ষে ও ওই বাসার দুই গৃহকর্মীকে আরেকটি কক্ষে আটকে রাখে। এ সময় ফজলুল পড়ার ঘরে পত্রিকা পড়ছিলেন। দুর্বৃত্তরা তাঁকে সেখান থেকে কলার ধরে বারান্দায় নিয়ে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে চলে যায়। যাওয়ার সময় দুর্বৃত্তরা ফজলুলের মুঠোফোন ও স্বর্ণের চেইন নিয়ে গেছে। এরপর স্বজনেরা ফজলুলকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।ফজলুলের স্ত্রী আফরোজা খান প্রথম আলোকে বলেন, খোলা দরজা দিয়ে এক যুবক বাসায় ঢুকতে গেলে তিনি পরিচয় জানতে চান। এ সময় যুবকটি রিভলবার ঠেকিয়ে তাঁকে একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখে। তিনি জানান, মুন্সিগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে তাঁর স্বামীর সঙ্গে জমি নিয়ে ভাতিজাদের দ্বন্দ্ব ছিল। তবে এটাকে হত্যার কারণ মনে করেন না।গৃহকর্মী সুমি আক্তার (১২) ও আজাদ (৮) জানায়, দুর্বৃত্তরা তাদের দুজনকে একটি কক্ষে আটকে রাখে। তারা ওই কক্ষের জানালার কাচ ফাঁক করে দেখতে পায় দুর্বৃত্তরা ফজলুলের জামার কলার ধরে টেনে বারান্দায় নিয়ে যাচ্ছে। তিন দুর্বৃত্তের পরনে জিনসের প্যান্ট, হাফ শার্ট ও টি-শার্ট ছিল। ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলার বাসিন্দা মো. রাব্বী বলেন, গুলির শব্দ শুনে তিনি বাসা থেকে দ্রুত নিচে নামেন এবং সেখান থেকে কিছু দূরে থাকা র‌্যাবের টহল দলকে এ ঘটনা জানান। র‌্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।

খবর পেয়ে পুলিশ, র‌্যাব ও সিআইডির কর্মকর্তারা দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে হাসপাতাল থেকে পুলিশ নিহতের গাড়িচালক লিটনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তার আগে হাসপাতালে লিটনের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি জানান, ১৫ দিন আগে তিনি গাড়িচালক হিসেবে যোগ দেন। গতকাল সকালে ফজলুল করিম ও তাঁর স্ত্রী তাঁদের একমাত্র সন্তান ফারজানা করিমের বাসায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। চালক লিটন বাসা থেকে একটি ব্যাগ গাড়িতে তুলছিলেন। এ সময় দেখেন তিন যুবক বাড়ির ভেতরে ঢুকছে। পরে গুলির শব্দে ওপরে ওঠার সময় দেখেন তিন যুবক অস্ত্র হাতে চলে যাচ্ছে। বাসায় গিয়ে দেখেন বারান্দায় ফজলুল গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ছটফট করছেন। দ্রুত তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান লিটন।

ফজলুল করিমের মেয়ে ফারজানা করিম অভিযোগ করেন, গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার রামকৃষ্ণাদিতে বসতবাড়ির জমি নিয়ে তাঁর বাবার সঙ্গে তাঁর চাচাতো ভাইদের বিরোধ ছিল। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঝগড়াঝাঁটিও চলছিল। তিনি বলেন, ‘ওদের ধরুন। তাহলেই হত্যার কারণ জানা যাবে।’

এ সময় ফারজানার স্বামী হাইকোর্টের আইনজীবী চৌধুরী মকিম উদ্দিন বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধ থাকলেও, সেটাই হত্যার কারণ তিনি মনে করছেন না।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে একই সময় কথা হয় নিহত ফজলুল করিমের চাচাতো ভাই মহসীন গাজীর সঙ্গে। তিনি বলেন, পুলিশ বিভাগে চাকরি করার সময় ফজলুল রামকৃষ্ণাদিতে ৫৪ শতাংশ জমি কিনে ২৪ শতাংশের ওপর দোতলা বাড়ি নির্মাণ করেন। ওই বাড়ির মালিকানা দাবি করে আসছিলেন ফজলুর মেজো ভাইয়ের ছেলে রুবেল ও শান্ত। গত বুধবার গ্রামে এ নিয়ে সালিস বৈঠক হয়। তাতে ফজলুলও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু এ নিয়ে ফজলুল খুন হয়েছেন, এটা মনে করেন না মহসীন গাজীও। তিনি বলেন, ফজলু এলাকায় একাধিক স্কুল, মাদ্রাসা ও মসজিদের তত্ত্বাবধানে যুক্ত ছিলেন। এ জন্য তিনি প্রতি সপ্তাহে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে যেতেন।

সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আরমান আলী বলেন, হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে তাঁরা এখনো নিশ্চিত নন। তিনি জানান, অবসরে যাওয়ার আগে চাকরির সর্বশেষ চার-পাঁচ বছরে তিনি চাঞ্চল্যকর কোনো মামলার তদন্ত করেননি।

ময়নাতদন্তের পর ফজলুল করিমের মাথা থেকে একটি রিভলবারের গুলি পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্ত শেষে গতকালই মরদেহ দাফনের জন্য গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়।

Leave a comment

You must be Logged in to post comment.