তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা
মাইক্রোবাসে গারো তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। এ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সংগঠনগুলো। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি জোরালো দাবি জানিয়েছে তারা। গতকাল শনিবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সরকারের কাছে এ দাবি জানিয়েছে সংগঠনগুলো। দাবি পূরণ না হলে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে তারা। সিপিবি-নারী সেল, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানায়। এক যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি কামাল লোহানী, সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সর্দার, সিপিবি-নারী সেলের আহ্বায়ক লক্ষ্মী চক্রবর্তী, যুগ্ম আহ্বায়ক মাকসুদা আক্তার লাইলী ও লুনা নূর, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সভাপতি ক্বাফি রতন, সাধারণ সম্পাদক হাসান হাফিজুর রহমান সোহেল, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হাসান তারেক, সাধারণ সম্পাদক লাকী আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
নারী সংহতির পক্ষে বিবৃতি দেন সংগঠনের সভাপতি শ্যামলী শীল ও সাধারণ সম্পাদক অপরাজিতা দেব। বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, ‘সারা দেশে নারীদের ওপর যৌন সন্ত্রাস ও নির্যাতন চলছে। ধর্ষণের ঘটনার পর গারো তরুণীটি উত্তরা ও গুলশান থানায় মামলা করতে গেলে তাঁকে সহযোগিতা করা হয়নি।’ তাঁরা রাষ্ট্রের এই নারী বিদ্বেষী আচরণের তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি অবিলম্বে ধর্ষকদের চিহ্নিত করে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।
গারো তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি অজয় রায়, সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ। বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, পহেলা বৈশাখ নারী লাঞ্ছনার ঘটনায় যখন দেশবাসী প্রতিবাদে মুখর, সেই সময়েই আবার রাজধানীতেই ধর্ষণের শিকার হলো এক গারো তরুণী। অতীতে এ ধরনের ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হওয়ায় ঘটনার ভয়াবহ পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।
ধর্ষণের ঘটনায় নিন্দা ও ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়ন। বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি রেবেকা সরেন, সাধারণ সম্পাদক রূপচান বর্মণ বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেই চলেছে। কিন্তু বিচার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। সরকারের কাছে অবিলম্বে সব ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তাঁরা।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা বলেন, ‘প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। দিন দিন নির্যাতনের মাত্রা বাড়ছে। ক্ষমতাসীন সরকার নারীর নিরাপত্তা, নারী অধিকারের কথা বললেও কার্যত নারীদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে সংখ্যালঘু জাতিসত্তার নারীদেরই সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন যাপন করতে হচ্ছে।’
সংসদীয় ককাসের প্রতিবাদ-বিবৃতি : গারো তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ, থানা কর্তৃপক্ষের গাফিলতির নিন্দা ও অপরাধীদের বিচারের দাবি জানিয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীবিষয়ক সংসদীয় ককাস। গতকাল প্রতিবাদ বিবৃতিকে ককাসের আহ্বায়ক সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘নারী নির্যাতন ও যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে যখন দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে, তখনই এই ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল। এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ও একই ধরনের অন্য ঘটনার সঙ্গে জড়িত দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। এদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়ে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ বিবৃতিতে গারো তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তাঁরা ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকার যেখানে নির্বিকার, সেখানে জনগণকে নিজের শক্তির ওপর নির্ভর করতে হবে। তাই জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে। ধর্ষণ, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক লড়াই তীব্র করতে হবে।
বিবৃতিতে নেতারা আরো বলেন, বিচারহীনতার ধারায় এখন দেশ চলছে। ধর্ষক-নিপীড়কদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ না করে কি সরকার দেশকে ধর্ষক-নিপীড়কদের ‘অভয়ারণ্যে’ পরিণত করতে চায়?
গারো তরুণীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে গতকাল বিকেল ৫টায় মানববন্ধন ও আলোক প্রজ্বালন করেছে যৌন-নিপীড়নবিরোধী নির্দলীয় ছাত্রজোট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও নারী নেত্রীরা অংশ নেন। ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ জানান উপস্থিত সবাই। মানববন্ধন থেকে অবিলম্বে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। না হলে আগামী মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় রাজু ভাস্কর্যে ছাত্র-জনতার সমাবেশ ও মশাল মিছিল হবে বলে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
গণধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র। গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সীমা দত্তের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মর্জিনা খাতুন, অর্থ সম্পাদক তছলিমা আক্তার বিউটি, নগর কমিটির সদস্য নাঈমা খালেদ মনিকা ও বাংলাদেশ হিল উইমেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নিরূপা চাকমা প্রমুখ।
সুত্র – কালের কণ্ঠ