টেস্ট ক্রিকেটে থাকছে বাংলাদেশ
শঙ্কার মেঘ কেটে গেছে, টেস্ট পরিবারকে দুই ভাগ করার প্রস্তাব জায়গাই পাচ্ছে না আইসিসির দুই দিনব্যাপী চলমান সভায়! তাই র্যাংকিংয়ের কারণে দ্বিতীয় বিভাগে অবনমনের ঝুঁকি নেই, নিয়মিত টেস্ট খেলবে বাংলাদেশও। আজ দুবাইয়ে শুরু হওয়া আইসিসির নির্বাহী বোর্ডের সভায় দোদুল্যমানতা ঝেড়ে ফেলে ‘বিগ থ্রি’র প্রস্তাবের বিপক্ষে আরো তিনটি দেশের ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি)। তাতে শক্তিধর তিন দলের প্রস্তাবের কোনোটিই পাস হচ্ছে না আইসিসির এ সভায়। কারণ বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার দাবির সঙ্গে কাল সভা চলাকালে ঐকমত্য প্রকাশ করেছে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট ইউনিয়নও (জেডসিইউ)।
গত রাতে দুবাই থেকে টেলিফোনে বিসিবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন বলেছেন, ‘পজিশন পেপারের একটি ব্যাপারে আপত্তির কথা জানিয়ে আইসিসিকে চিঠি দিয়েছিলাম। আমাদের দাবি ছিল, কোনো অবস্থায় আমরা কন্টিনেন্টাল কাপ খেলব না, তার জন্য যেকোনো ধরনের ক্ষতি মেনে নিতেও আপত্তি ছিল না আমাদের।’ এই দাবির পক্ষে কোনো মোর্চা কিংবা লেনদেন নয়, প্রধান নির্বাহীর মতে এটা ছিল বিসিবির একক সিদ্ধান্ত, ‘অন্য কোনো কিছুর বিনিময়ে এটার সঙ্গে আপস করতে রাজি নয় বিসিবি। আমাদের দাবি ছিল পরিষ্কার।’ ভারতীয় একটি দৈনিকে প্রকাশিত এশিয়া কাপ কিংবা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দল না পাঠানোর হুমকি প্রসঙ্গে নিজাম উদ্দিনের বক্তব্য, ‘পক্ষে টানার জন্য একেকজন একেক রকম পদ্ধতি অনুসরণ করে। তবে বিসিবির সদ্ধিান্ত ছিল যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থাকা।’
এ দাবি আদায়ে বাংলাদেশের সাফল্যের স্বীকৃতি আছে গত সন্ধ্যায় প্রেরিত আইসিসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে, ‘সব সদস্য দেশই যোগ্যতার ভিত্তিতে সব ধরনের ক্রিকেট খেলতে পারবে।’ নিজাম উদ্দিনের দাবি, ‘এ কারণে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আইসিসির পূর্বনির্ধারিত ফিউচার টু্যরস প্রগ্রামও (এফটিপি) বহাল থাকবে।’ যদিও ‘পজিশন পেপারে’ এফটিপি সংক্রান্ত পরিবর্তনের ছায়া রয়েছে আইসিসি প্রেরিত বিজ্ঞপ্তিতে। আইসিসির পরবর্তী সম্প্রচার স্বত্ব ও এফটিপির মেয়াদ উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫-২০২৩ মেয়াদে। সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রি হবে নবগঠিত এক্সিকিউটিভ কমিটির অধীনে। আর এফটিপি তৈরি হবে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ভিত্তিতে। সে ক্ষেত্রে ‘অলাভজনক’ বলে তো বাংলাদেশকে অবজ্ঞা করতেই পারে শক্তিধর দলগুলো! এ-জাতীয় আশঙ্কা নেই বলেই দাবি নিজাম উদ্দিনের। আজকের সভায় ‘টেস্ট ফান্ড’ অনুমোদনের সঙ্গে বিসিবির প্রধান নির্বাহীর দাবির যোগসূত্রও থাকতে পারে। এ ফান্ড বরাদ্দ করা হবে টেস্ট পরিবারের অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী দলগুলোকে, যেন সিরিজ আয়োজনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে আয়োজক দেশ।
কিছু দিয়ে আবার অনেকটা নিয়েও নিয়েছে ‘বিগ থ্রি’! যেমন-আইসিসির কর্তৃত্ব ভাগাভাগির ক্ষেত্রে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের নেতৃত্বে শক্তিধরদের প্রাধান্য অনুমোদন করেছে সংস্থার কার্যনির্বাহী পরিষদ। চার নয়, ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে নবগঠিত মহাপরাক্রমশালী এক্সিকিউটিভ কমিটির (এক্সকো) সদস্য হিসেবে যোগ দেবে আরো দুটি বোর্ড। আর এ পাঁচ সদস্যের হাতেই কার্যত অর্পিত হচ্ছে বিশ্ব ক্রিকেট পরিচালনার দায়িত্ব। জুনে কর্তৃত্ব পাওয়া এ কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পাচ্ছেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রতিনিধি। তিনি দায়িত্ব পালন করবেন দুই বছরের মেয়াদে।
বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের মূল দাবি, টেস্ট পরিবার থেকে মুশফিকুর রহিমদের অবনমন প্রতিরোধের ব্যাপারে শক্ত অবস্থান নেন বিসিবি প্রতিনিধিরা। ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ডের প্রস্তাবিত ‘পজিশন পেপারে’র আরো অনেক ইস্যু নিয়ে দেনদরবার শেষে বাংলাদেশের প্রাণের দাবি পূরণে সক্ষম হন নাজমুল হাসান। কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় গতকাল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ভারতীয় বোর্ডের (বিসিসিআই) সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছে যে মায়ের মৃতু্যর কারণে দুবাই যাননি সংস্থার প্রধান এন শ্রীনিবাসন। তবে পজিশন পেপারে সম্মতি আদায় করতে স্কাইপির মাধ্যমে বিসিবি প্রধানের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সে সময় শ্রীনিবাসন নাকি হুমকিও দিয়েছেন যে বিসিবি সম্মতি না দিলে এশিয়া কাপ এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দল পাঠাবে না ভারত। জবাবে সরকারি নির্দেশের কথা জানিয়ে বিসিসিআই প্রধানের নির্দেশ পালন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন নাজমুল হাসান।
তবে এ ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে ঢাকা ও দুবাইয়ে অবস্থানরত বিসিবির কোনো কর্মকর্তাই স্বীকার করেননি। অবশ্য এটা ঠিক যে পজিশন পেপার আইসিসির সভায় ওঠার আগেই সম্মতি আদায়ে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছিলেন ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট প্রতিনিধিরা। এ প্রস্তাব ফাঁস হওয়ার পরপরই এটিকে ‘গঠনতন্ত্রবিরোধী’ বলে আখ্যা দেওয়ায় একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড (সিএসএ) ছাড়া পালাক্রমে বাকি ছয়টি দেশের ক্রিকেট বোর্ড প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন ‘বিগ থ্রি’র প্রতিনিধিরা। সেসব সভায় নরমে-গরমে পজিশন পেপারের পক্ষে ‘ভোট’ আদায়ের চষ্টো করে ‘বিগ থ্রি’। সে চষ্টোয় তাদের সাফল্য বলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সমর্থন আদায়। আত্মসমর্পণ করেই দুবাইয়ে পা রাখা নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের সমর্থন পেতে সামান্যতম বেগও পেতে হয়নি ‘বিগ থ্রি’কে।
তবে কাল সভা শুরু হওয়ার আগের সন্ধ্যায়ও উদ্বেগ নিয়ে ঘুমাতে গিয়েছিলেন বিসিবির কর্মকর্তারা। কারণ বড় তিন দলের, বিশেষ করে ভারতীয় বোর্ডের প্রতিশ্রুতির ‘মুলা’ পেয়ে যদি সভায় উল্টো পথে হাঁটে সম্ভাব্য বিদ্রোহীরা! পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড আইসিসি বরাবর চিঠি লিখে পজিশন পেপার সংক্রান্ত আলোচনা পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানানোয় সে আশঙ্কা অবশ্য মুছে যায়। তাই অনেকটা নির্ভার হয়েই সে রাতে ঘুমিয়েছেন বিসিবির কর্মকর্তারা। আর কাল সকালে নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়ে আইসিসি বরাবর চিঠি দিয়েছেন বিসিবির প্রতিনিধি। এ অবস্থায় আগাম বিজয়ের ঘোষণা দিয়েই আইসিসির সভাকক্ষে ঢোকেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি জাকা আশরাফ, ‘বাংলাদেশ, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কা-আমরা সবাই ঐকমত্যে পৌঁছেছি। দেখা যাক, আমরা কোন দিকে ভোট দিই। আমাদের অবস্থানে কোনো নড়চড় হবে না।’ জিম্বাবুয়ে যোগ দেওয়ায় সভা শুরু হওয়ার আগেই অনেকটা পাল্টে যায় ‘বিগ থ্রি’র প্রস্তাবনা।
এদিকে যেকোনো কিছুর বিনিময়ে টেস্ট ফেলে কন্টিনেন্টাল কাপে খেলার ব্যাপারে সম্মতি দেওয়ার অবস্থায় ছিল না বিসিবি। কারণ ২৩ জানুয়ারি বিসিবি সভার ভোটাভুটির বিষয়ে দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকারের সর্বোচ্চ মহল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে জানা গেছে। তাই প্রস্তাবের পক্ষ-বিপক্ষকে ঘিরে ‘বিগ থ্রি’র সঙ্গে দেনদরবারে অন্য কোনো প্রলোভনের চেয়ে টেস্ট অবনমনের প্রস্তাব রোধ করাতেই বেশি মনোযোগী ছিলেন বিসিবির কর্মকর্তারা। নিজাম উদ্দিনের মন্তব্য, ‘বিষয়টি স্পর্শকাতর ও গোপনীয় বলেই এত দিন নীরব ছিল বিসিবি। যথাসময়ে আমরা আমাদের আপত্তির কথা জানিয়েছি।’
এদিকে আইসিসির অর্থ ও ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনেকটাই সফল ‘বিগ থ্রি’। এক্সকো গঠন এবং অনুমোদিত এ কমিটি প্রধানের পদে ভারতীয় প্রতিনিধির পদায়নের দাবি পূরণ হয়েছে। আইসিসির ভবিষ্যত্ বাণিজ্যিক চুক্তিও হবে এ কমিটির সঙ্গে। তাতে কার্যত ক্ষমতাহীনই হয়ে পড়ছে আইসিসি। এ পরিবর্তনে মোটেও বিমর্ষ নন আইসিসির বর্তমান সভাপতি অ্যালান আইজাক। উল্টো গতকাল অনুষ্ঠিত সভায় গৃহীত এ সদ্ধিান্তকে স্বাগতই জানিয়েছেন এ নিউজিল্যান্ডার। অবশ্য এক্সকো দায়িত্ব গ্রহণের সময় শেষ হয়ে যাবে আইজাকের মেয়াদ, আইসিসির সভাপতি পদে বসবেন বাংলাদেশের আ হ ম মোস্তফা কামাল।
এ নিয়ে সামান্য যে আক্ষেপ, সেটি ঢাকা পড়ে থাকছে কন্টিনেন্টাল কাপে খেলতে বাধ্য হওয়ার আশঙ্কা মুছে যাওয়ার খবরে। টেস্ট মাঠেই থাকবে বাংলাদেশ-আইসিসি সভার মাঝপথেই তাই স্বস্তির হাওয়া বইছে ১৬ কোটির দেশে।
গত রাতে দুবাই থেকে টেলিফোনে বিসিবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন বলেছেন, ‘পজিশন পেপারের একটি ব্যাপারে আপত্তির কথা জানিয়ে আইসিসিকে চিঠি দিয়েছিলাম। আমাদের দাবি ছিল, কোনো অবস্থায় আমরা কন্টিনেন্টাল কাপ খেলব না, তার জন্য যেকোনো ধরনের ক্ষতি মেনে নিতেও আপত্তি ছিল না আমাদের।’ এই দাবির পক্ষে কোনো মোর্চা কিংবা লেনদেন নয়, প্রধান নির্বাহীর মতে এটা ছিল বিসিবির একক সিদ্ধান্ত, ‘অন্য কোনো কিছুর বিনিময়ে এটার সঙ্গে আপস করতে রাজি নয় বিসিবি। আমাদের দাবি ছিল পরিষ্কার।’ ভারতীয় একটি দৈনিকে প্রকাশিত এশিয়া কাপ কিংবা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দল না পাঠানোর হুমকি প্রসঙ্গে নিজাম উদ্দিনের বক্তব্য, ‘পক্ষে টানার জন্য একেকজন একেক রকম পদ্ধতি অনুসরণ করে। তবে বিসিবির সদ্ধিান্ত ছিল যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থাকা।’
এ দাবি আদায়ে বাংলাদেশের সাফল্যের স্বীকৃতি আছে গত সন্ধ্যায় প্রেরিত আইসিসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে, ‘সব সদস্য দেশই যোগ্যতার ভিত্তিতে সব ধরনের ক্রিকেট খেলতে পারবে।’ নিজাম উদ্দিনের দাবি, ‘এ কারণে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আইসিসির পূর্বনির্ধারিত ফিউচার টু্যরস প্রগ্রামও (এফটিপি) বহাল থাকবে।’ যদিও ‘পজিশন পেপারে’ এফটিপি সংক্রান্ত পরিবর্তনের ছায়া রয়েছে আইসিসি প্রেরিত বিজ্ঞপ্তিতে। আইসিসির পরবর্তী সম্প্রচার স্বত্ব ও এফটিপির মেয়াদ উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫-২০২৩ মেয়াদে। সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রি হবে নবগঠিত এক্সিকিউটিভ কমিটির অধীনে। আর এফটিপি তৈরি হবে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ভিত্তিতে। সে ক্ষেত্রে ‘অলাভজনক’ বলে তো বাংলাদেশকে অবজ্ঞা করতেই পারে শক্তিধর দলগুলো! এ-জাতীয় আশঙ্কা নেই বলেই দাবি নিজাম উদ্দিনের। আজকের সভায় ‘টেস্ট ফান্ড’ অনুমোদনের সঙ্গে বিসিবির প্রধান নির্বাহীর দাবির যোগসূত্রও থাকতে পারে। এ ফান্ড বরাদ্দ করা হবে টেস্ট পরিবারের অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী দলগুলোকে, যেন সিরিজ আয়োজনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে আয়োজক দেশ।
কিছু দিয়ে আবার অনেকটা নিয়েও নিয়েছে ‘বিগ থ্রি’! যেমন-আইসিসির কর্তৃত্ব ভাগাভাগির ক্ষেত্রে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের নেতৃত্বে শক্তিধরদের প্রাধান্য অনুমোদন করেছে সংস্থার কার্যনির্বাহী পরিষদ। চার নয়, ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে নবগঠিত মহাপরাক্রমশালী এক্সিকিউটিভ কমিটির (এক্সকো) সদস্য হিসেবে যোগ দেবে আরো দুটি বোর্ড। আর এ পাঁচ সদস্যের হাতেই কার্যত অর্পিত হচ্ছে বিশ্ব ক্রিকেট পরিচালনার দায়িত্ব। জুনে কর্তৃত্ব পাওয়া এ কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পাচ্ছেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রতিনিধি। তিনি দায়িত্ব পালন করবেন দুই বছরের মেয়াদে।
বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের মূল দাবি, টেস্ট পরিবার থেকে মুশফিকুর রহিমদের অবনমন প্রতিরোধের ব্যাপারে শক্ত অবস্থান নেন বিসিবি প্রতিনিধিরা। ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ডের প্রস্তাবিত ‘পজিশন পেপারে’র আরো অনেক ইস্যু নিয়ে দেনদরবার শেষে বাংলাদেশের প্রাণের দাবি পূরণে সক্ষম হন নাজমুল হাসান। কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় গতকাল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ভারতীয় বোর্ডের (বিসিসিআই) সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছে যে মায়ের মৃতু্যর কারণে দুবাই যাননি সংস্থার প্রধান এন শ্রীনিবাসন। তবে পজিশন পেপারে সম্মতি আদায় করতে স্কাইপির মাধ্যমে বিসিবি প্রধানের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সে সময় শ্রীনিবাসন নাকি হুমকিও দিয়েছেন যে বিসিবি সম্মতি না দিলে এশিয়া কাপ এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দল পাঠাবে না ভারত। জবাবে সরকারি নির্দেশের কথা জানিয়ে বিসিসিআই প্রধানের নির্দেশ পালন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন নাজমুল হাসান।
তবে এ ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে ঢাকা ও দুবাইয়ে অবস্থানরত বিসিবির কোনো কর্মকর্তাই স্বীকার করেননি। অবশ্য এটা ঠিক যে পজিশন পেপার আইসিসির সভায় ওঠার আগেই সম্মতি আদায়ে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছিলেন ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট প্রতিনিধিরা। এ প্রস্তাব ফাঁস হওয়ার পরপরই এটিকে ‘গঠনতন্ত্রবিরোধী’ বলে আখ্যা দেওয়ায় একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড (সিএসএ) ছাড়া পালাক্রমে বাকি ছয়টি দেশের ক্রিকেট বোর্ড প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন ‘বিগ থ্রি’র প্রতিনিধিরা। সেসব সভায় নরমে-গরমে পজিশন পেপারের পক্ষে ‘ভোট’ আদায়ের চষ্টো করে ‘বিগ থ্রি’। সে চষ্টোয় তাদের সাফল্য বলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সমর্থন আদায়। আত্মসমর্পণ করেই দুবাইয়ে পা রাখা নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের সমর্থন পেতে সামান্যতম বেগও পেতে হয়নি ‘বিগ থ্রি’কে।
তবে কাল সভা শুরু হওয়ার আগের সন্ধ্যায়ও উদ্বেগ নিয়ে ঘুমাতে গিয়েছিলেন বিসিবির কর্মকর্তারা। কারণ বড় তিন দলের, বিশেষ করে ভারতীয় বোর্ডের প্রতিশ্রুতির ‘মুলা’ পেয়ে যদি সভায় উল্টো পথে হাঁটে সম্ভাব্য বিদ্রোহীরা! পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড আইসিসি বরাবর চিঠি লিখে পজিশন পেপার সংক্রান্ত আলোচনা পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানানোয় সে আশঙ্কা অবশ্য মুছে যায়। তাই অনেকটা নির্ভার হয়েই সে রাতে ঘুমিয়েছেন বিসিবির কর্মকর্তারা। আর কাল সকালে নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়ে আইসিসি বরাবর চিঠি দিয়েছেন বিসিবির প্রতিনিধি। এ অবস্থায় আগাম বিজয়ের ঘোষণা দিয়েই আইসিসির সভাকক্ষে ঢোকেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি জাকা আশরাফ, ‘বাংলাদেশ, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কা-আমরা সবাই ঐকমত্যে পৌঁছেছি। দেখা যাক, আমরা কোন দিকে ভোট দিই। আমাদের অবস্থানে কোনো নড়চড় হবে না।’ জিম্বাবুয়ে যোগ দেওয়ায় সভা শুরু হওয়ার আগেই অনেকটা পাল্টে যায় ‘বিগ থ্রি’র প্রস্তাবনা।
এদিকে যেকোনো কিছুর বিনিময়ে টেস্ট ফেলে কন্টিনেন্টাল কাপে খেলার ব্যাপারে সম্মতি দেওয়ার অবস্থায় ছিল না বিসিবি। কারণ ২৩ জানুয়ারি বিসিবি সভার ভোটাভুটির বিষয়ে দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকারের সর্বোচ্চ মহল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে জানা গেছে। তাই প্রস্তাবের পক্ষ-বিপক্ষকে ঘিরে ‘বিগ থ্রি’র সঙ্গে দেনদরবারে অন্য কোনো প্রলোভনের চেয়ে টেস্ট অবনমনের প্রস্তাব রোধ করাতেই বেশি মনোযোগী ছিলেন বিসিবির কর্মকর্তারা। নিজাম উদ্দিনের মন্তব্য, ‘বিষয়টি স্পর্শকাতর ও গোপনীয় বলেই এত দিন নীরব ছিল বিসিবি। যথাসময়ে আমরা আমাদের আপত্তির কথা জানিয়েছি।’
এদিকে আইসিসির অর্থ ও ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনেকটাই সফল ‘বিগ থ্রি’। এক্সকো গঠন এবং অনুমোদিত এ কমিটি প্রধানের পদে ভারতীয় প্রতিনিধির পদায়নের দাবি পূরণ হয়েছে। আইসিসির ভবিষ্যত্ বাণিজ্যিক চুক্তিও হবে এ কমিটির সঙ্গে। তাতে কার্যত ক্ষমতাহীনই হয়ে পড়ছে আইসিসি। এ পরিবর্তনে মোটেও বিমর্ষ নন আইসিসির বর্তমান সভাপতি অ্যালান আইজাক। উল্টো গতকাল অনুষ্ঠিত সভায় গৃহীত এ সদ্ধিান্তকে স্বাগতই জানিয়েছেন এ নিউজিল্যান্ডার। অবশ্য এক্সকো দায়িত্ব গ্রহণের সময় শেষ হয়ে যাবে আইজাকের মেয়াদ, আইসিসির সভাপতি পদে বসবেন বাংলাদেশের আ হ ম মোস্তফা কামাল।
এ নিয়ে সামান্য যে আক্ষেপ, সেটি ঢাকা পড়ে থাকছে কন্টিনেন্টাল কাপে খেলতে বাধ্য হওয়ার আশঙ্কা মুছে যাওয়ার খবরে। টেস্ট মাঠেই থাকবে বাংলাদেশ-আইসিসি সভার মাঝপথেই তাই স্বস্তির হাওয়া বইছে ১৬ কোটির দেশে।