Published On: Mon, Dec 1st, 2014

চলে গেলেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী

Share This
Tags

kaium chowdhury

‘আমার আর একটি কথা আছে।’ কথাটি কী, তাঁর বলা হলো না। মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়ানো দেশের বরেণ্য শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ঢলে পড়লেন। গতকাল রোববার রাত তখন আটটা ৪০ মিনিট। স্থান রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়াম। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত উচ্চাঙ্গসংগীতের চতুর্থ দিনের উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সামনে হাজার হাজার মানুষ। উজ্জ্বল আলোকিত মঞ্চ। বিশেষ অতিথি কাইয়ুম চৌধুরীর চোখে ঘনিয়ে এল প্রগাঢ় অন্ধকার। চলে গেলেন তিনি পৃথিবীর সব সুর, সব রং-রূপের মায়া কাটিয়ে।
বড় আকস্মিকভাবে ঘটে গেল মর্মান্তিক চিরবিচ্ছেদ। বরাবরের মতোই অনুষ্ঠানের প্রথম অধিবেশনে স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনার পর ছিল উদ্বোধনী পর্ব। প্রধান অতিথি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং বিশেষ অতিথি শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ও স্কয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরীকে নিয়ে মঞ্চে এলেন বেঙ্গল গ্রুপের সভাপতি আবুল খায়ের। তপন চৌধুরীর বক্তৃতার পর মঞ্চে এলেন কাইয়ুম চৌধুরী। সাদা পাজামা-খয়েরি পাঞ্জাবির ওপর হাতাকাটা কোট। চমৎকার আলোচনা করলেন তিনি দেশের শিল্প আন্দোলন নিয়ে। তিনি বললেন, সেই ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হলো চারুকলা মহাবিদ্যালয়। তারপর গত ৭০ বছরে বাংলাদেশের চারুশিল্প আন্দোলন বিকশিত হয়েছে। বাংলাদেশের চারুশিল্প এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্থান করে নিচ্ছে। অথচ এ দেশে অনেক আগে থেকেই উচ্চাঙ্গসংগীতের ঐতিহ্য ছিল। কিন্তু উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে উচ্চাঙ্গসংগীতের বিকাশ ঘটেনি। এত দিন পর আবুল খায়েরের উদ্যোগে দেশে উচ্চাঙ্গসংগীতের নবজাগরণ হতে চলেছে। তিনি এই উদ্যোগের সাধুবাদ জানালেন। আশা প্রকাশ করলেন, এই আয়োজন অব্যাহত থাকবে। ধন্যবাদ জানালেন শ্রোতাদের। বক্তব্য শেষ করে তিনি ফিরে গেলেন মঞ্চে তাঁর আসনে।
সঞ্চালক ঘোষণা করলেন, এবার প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। তিনি উঠে এলেন মাইকের দিকে। এমন সময় শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী তাঁর আসন ছেড়ে আবার উঠে আসেন মাইকের সামনে। বলেন, ‘আমার আর একটি কথা আছে।’ এই বলেই ঢলে পড়েন।

 

এই আকস্মিক ঘটনায় শ্রোতারা হকচকিত হয়ে পড়েন। দ্রুত তাঁকে মঞ্চ থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার আগেই তিনি চিরতরে চলে গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিরউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাত নয়টায় শিল্পী মারা গেছেন। তিনি মারাত্মক হৃদ্রোগে (কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট) আক্রান্ত হয়েছিলেন। সিএমএইচে আনার পর তাঁকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হয়েছে। আসলে আর্মি স্টেডিয়াম থেকে তাঁকে যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, তখনই তিনি মৃত।’
আজ দাফন: রাতে মরদেহ স্কয়ার হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। আজ সোমবার সকাল ১০টায় তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় আনা হবে। এরপর বেলা ১১টায় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নেওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। বেলা একটা পর্যন্ত শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা হবে বাদ জোহর। এরপর আজিমপুর কবরস্থানে তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে।
সংক্ষিপ্ত জীবনী: শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর জন্ম ১৯৩২ সালের ৯ মার্চ ফেনীতে। বাবা আবদুল কুদ্দুস চৌধুরী কো-অপারেটিভ ব্যাংকের সহকারী রেজিস্ট্রার ছিলেন। বাবার বদলির চাকরির সুবাদে ঘুরেছেন দেশের বহু জায়গা।

 

সুত্র – প্রথম আলো

Leave a comment

You must be Logged in to post comment.