Published On: Tue, Jul 29th, 2014

ঈদ মুবারাক সবাইকে

Share This
Tags

bangladesh-eid_1983765iবছর ঘুরে আবার এসেছে খুশির ঈদ। এক মাস সিয়াম সাধনার পর মঙ্গলবার খুশির ঈদ উদযাপনের জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলিম সম্প্রদায়। বাংলাদেশের প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ে অনুরণিত হচ্ছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই কালজয়ী গান ‘রমজানের ওই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’।

সোমবার  বিকেল থেকে এক ফালি বাঁকা চাঁদের আশায় পশ্চিমাকাশে বারবার তাকিয়েছে সবাই। শাওয়াল মাসের চাঁদের খবর নিতে বৈঠকে বসেছিল  জাতীয় চাঁদ দেখা দেখা কমিটিও। সবার কাঙ্ক্ষিত বাঁকা চাঁদ দেখা গেছে অবশেষে। সরকারও তা ঘোষণা করেছে আনুষ্ঠানিকভাবে। মঙ্গলবার উদযাপিত হবে আনন্দের ঈদ।
মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় এই আনন্দ-উৎসব  সামাজিক সম্প্রীতি আর সাম্যচেতনায় ভাস্বর। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই ঈদের আনন্দে শামিল হবে- এটাই এই উৎসবের মূল মর্মবাণী। মাসজুড়ে রোজা পালনের মাধ্যমে সংযম আর ত্যাগের শিক্ষা অর্জন এই আনন্দের জন্য প্রস্তুত করেছে প্রতিটি মুসলমানকে। ধনী-গরিব সবাই সাধ্যমতো চেষ্টা করছে স্বজন-পরিজন নিয়ে দিনটি উদযাপনের।  ঈদের কেনাকাটা সেরে তাই সবাই ছুটেছে মাটির টানে নাড়ির টানে শহর ছেড়ে গ্রামে।  স্বজন-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মিলনের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস দেখা গেছে পথে পথে।
ইতিমধ্যে রাজধানী ছেড়ে গেছে বেশিরভাগ নাগরিক মানুষ। মহানগরে এখন নেই নিত্যদিনের কোলাহল। সড়কগুলো গতিশীল, যেন হঠাৎ জড়তা ভেঙেছে আধুনিক ঢাকা শহরের। এদিকে আবার নগরজুড়ে যেন ক্লান্তি নেমেছে। দোকানপাট বন্ধ হচ্ছে। কিছু এলাকা ছাড়া ফুটপাতে নেই বিক্রেতার হাঁকডাক। ক্রেতার আনাগোনা কম। তবে বিপণিবিতান আর তার ফুটপাত ঘিরে চাঁদরাতের কেনাকাটায় ব্যস্ত রাজধানীবাসী জানান দিচ্ছে, নগরীর ঘুমানোর এখনো কিছুটা বাকি।
এখন ঘরে ঘরে চলছে পিঠা-পায়েস বানানোর তোড়জোড়। শিশু-তরুণ-বৃদ্ধ সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছে ঈদগায়ে গিয়ে নামাজ আদায়ের। কিশোরী-তরুণীরা বসছে মেহেদিতে হাত রাঙাতে।
ঈদের সাজে বাদ যায়নি রাজধানী ঢাকাও। আলোকমালায় সেজেছে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন। সড়কের পাশে ও সড়কদ্বীপে ওড়ানো হয়েছে জাতীয় পতাকা ও ‘ঈদ মোবারক’ খচিত নিশান। ঈদ উপলক্ষে ঘোষিত তিন দিনের ছুটি চলছে সরকারি-বেসরকারি অফিসে।
ঈদ সামনে রেখে দেশের রেডিও ও টিভি চ্যানেলগুলো সাত দিনব্যাপী নানা ঢঙের নানা বর্ণের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। চাঁদরাত থেকেই শুরু হয়েছে তাদের বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার। বিনোদনকেন্দ্রগুলো প্রস্তুত দর্শনার্থীদের আগমনের অপেক্ষায়।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাতের জন্য প্রস্তুত রাজধানীসহ দেশের ঈদগাহগুলো। বরাবরের মতো দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। রাজধানীর ৩৩২টি স্থানে ঈদ জামাতের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন। রাজধানীতে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। এ ছাড়া বায়তুল মোকাররমসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মাঠ ও মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
ঈদের দিন সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপির চেয়ারপাসন বেগম খালেদা জিয়া।
গণভবনে সকাল সাড়ে নয়টা থেকে রাজনীতিক, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে এবং সকাল সাড়ে ১১টায় কূটনীতিক ও বিচারপতিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিদেশি কূটনীতিক ও সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে  শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। ঈদের দিন দুপুর পৌনে ১২টায় রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের সঙ্গে  এবং সোয়া ১২টায় বিশিষ্ট নাগরিক ও সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন খালেদা জিয়া।
সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ সকাল ১১টায় দলীয় কার্যালয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
ঈদ উপলক্ষে দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহর অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, মুসলিম জাহানের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আমি দেশবাসী ও বিশ্বের সকল মুসলমানকে জানাই ঈদ মোবারক। তিনি বলেন, ঈদ শান্তি, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের অনুপম শিক্ষা দেয়। সাম্য, মৈত্রী ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করে সব মানুষকে। তিনি ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে ঈদুল ফিতরের শিক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ঈদ সব শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে গড়ে তোলে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ঐক্যের বন্ধন। এদিন ধনী-গরীব, আশরাফ-আতরাফ নির্বিশেষে সবাই এক কাতারে শামিল হন এবং ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন। শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যময় সমাজ গঠনে ঈদুল ফিতরের আবেদন তাই চিরন্তন। ঈদুল ফিতরের শিক্ষা সুন্দর ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে উদ্বুদ্ধ করবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার বাণীতে বাংলাদেশসহ মুসলিম উম্মাহকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেছেন।
খালেদা জিয়া বলেন, হানাহানি, হিংসা-বিদ্বেষ ও তিক্ততার গ্লানি থেকে মানুষের মনকে এক স্বর্গীয় শান্তি ও সম্প্রীতির চেতনা দান করে ঈদুল ফিতরের উৎসব। ঈদুল ফিতর নির্মল আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণী মানবজাতির কাছে পৌঁছে দেয়, তা হলো সকলের তরে সকলের আমরা। এর প্রেরণায় উদ্দীপ্ত হয়ে সমাজের অপেক্ষাকৃত দরিদ্র, অবহেলিত ও বঞ্চিত মানুষের প্রতি সাহায্য ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া মুসলমান হিসেবে আমাদের কর্তব্য।

Leave a comment

You must be Logged in to post comment.