ঈদের শপিং অনলাইনেই……….
পরিবর্তনের স্রোতে পৃথিবী নির্দিষ্ট কোনো একটি স্থানে আর আটকে নেই। প্রতিনিয়তই পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। বিশেষ করে গত এক দশক সময়ে প্রযুক্তির অগ্রগতি পরিবর্তন নিয়ে এসেছে জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই। দৈনন্দিন জীবনযাপনের সাথেই এখন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে প্রযুক্তির নানা অনুষঙ্গ। ই-কমার্সের কল্যাণে তাই কেনাকাটার ধরনটা বদলে গেছে অনেকটাই। ইন্টারনেট যাদের সহায়, তারা এখন কেনাকাটার জন্য অনলাইন শপিংকেই বেছে নিচ্ছেন প্রথম পছন্দ হিসেবে। ঈদের কেনাকাটাও তার ব্যতিক্রম নয়। রোজার প্রায় অর্ধেক পেরিয়ে যাওয়া এই সময়ে বিপণী বিতানগুলোতে যেমন বাড়ছে ভিড়, তেমনি অনলাইন শপগুলোতেও বাড়ছে মাউসের ক্লিক। প্রথাগত হাউসগুলোও এখন তাদের পণ্য বিক্রি করছে অনলাইনে।
উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি এখন বাংলাদেশেও ই-কমার্স জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অনলাইন শপিংকে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদন দেওয়ার পর থেকেই প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করে অনলাইন শপগুলো। এই সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। দৈনন্দিন জীবনে মানুষের ব্যস্ততা চারপাশে যেমন বেড়ে চলেছে, তাতে করে মানুষের প্রয়োজন হয়ে পড়ছে ঝামেলাবিহীন সেবা। কেনাকাটার ক্ষেত্রে ঝামেলা এড়াতে তাই অনলাইনে কেনাকাটাতেই ঝুঁকে পড়ছে মানুষ।
অনলাইন কেনাকাটার বর্তমান অবস্থা
বাসায় বসেই অনলাইন শপগুলোতে পছন্দের পণ্যগুলো অর্ডার করে ঘরে বসেই ডেলিভারি পাওয়ার সুযোগ গ্রহণ করছেন অনেকেই। এসব পণ্য ক্রয়ে আগে থেকে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধের সুবিধা ছাড়াও রয়েছে ডেলিভারি নেওয়ার সময় অর্থ প্রদানের সুবিধা। ফলে ক্রেতাদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ হিসেবেই কাজ করছে।
প্রতিদিন বাড়ছে প্রযুক্তিবান্ধব মানুষের সংখ্যা। এরাই বাজার সমপ্রসারণে ভূমিকা রাখবে। তবে সাধারণ মানুষকে অনলাইন লেনদেনে আগ্রহী করতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে মাসে অনলাইন শপিংয়ে লেনদেন হচ্ছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। সেই হিসেবে বছরে প্রায় বিশ কোটি টাকার লেনদেন রয়েছে এই খাতে। দেশে বর্তশানে তিন কোটি ইন্টারনেট গ্রাহক থাকলেও শীঘ্রই এই সংখ্যা আরও বাড়বে। সেই সাথে অনলাইন কেনাবেচায় খরচও বাড়বে বলেই ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঈদ শপিং অনলাইনে
বন্ধু-বান্ধব কিংবা পরিবারের সদস্য মিলে একসাথে শপিং মলগুলোতে গিয়ে ঈদ শপিংয়ের মজাই আলাদা। অন্তত এতদিন এটাই ছিল চিরচেনা চিত্র। তবে গত বছরেই এসে এই চিত্রটি কিছুটা বদলে গেছে। ঈদকে সামনে রেখে গত বছরেই অনলাইন শপগুলোতে নানা ধরনের অফার নিয়ে আসে। কর্মব্যস্ত রাজধানীবাসীর কাছে ঈদ শপিংয়ে এটি হয়ে ওঠে স্বস্তির খবর। শপিং মলে গিয়ে ঈদ শপিংয়ের মজাকে ফেলে ঘরে বসেই পছন্দের পোশাক কিংবা জুয়েলারি পাওয়ার সুযোগটা ট্রাফিক জ্যাম আর শপিং মলের ভিড় এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। সেই সুযোগটিই গত বছরে নিয়েছেন অনেকেই। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবারে অনলাইন শপগুলোতে চলছে জমজমাট ঈদ শপিং। ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন ধরনের অফারও রয়েছে ক্রেতাদের জন্য।
আজকের ডিল
২০১১ সালের অক্টোবর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে আজকের ডিল। শুধু প্রযুক্তিবান্ধব নয়, সব ধরনের মানুষের জন্যই রয়েছে আজকের ডিলের আয়োজন। আজকের ডিলের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর জানান, ঈদ উপলক্ষে পুরো রমজান জুড়ে থাকবে আজকের ডিলের ঈদ মেলা। এবারের ঈদ উপলক্ষে আজকের ডিল তাদের পণ্য নিয়ে অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইন গ্রাহকদের জন্যও আয়োজন করেছে ঈদ মেলা। রাজধানীর ধানমন্ডিতে ১১ নম্বর সড়কে সান্তুর রেস্তোরা প্রাঙ্গণে গত ১৯ ও ২০ জুলাই চলে আজকের ডিলের পণ্য প্রদর্শনী। আর আজকের ডিল গ্রাহকরা পুরো রামজান মাসেই উপভোগ করতে পারবেন আকর্ষণীয় সব সুযোগ।
কেক্র্যাফট
দেশিয় ফ্যাশন হাউস হিসেবে আরেক সুপরিচিত নাম কেক্র্যাফট। গত বছরের শেষের দিকে অনলাইনে পণ্য বিক্রি শুরু করে তারা। আর সময়ের সাথে সাথে এই পরিমাণ বাড়ছে। ফেসবুকের মাধ্যমেই মূলত গ্রাহক-ক্রেতাদের মাঝে প্রচারণার কাজটি চালিয়ে থাকে কেক্র্যাফট। দেশের বাইরে প্রবাসীদেরকেও যুক্ত করেছে কেক্র্যাফট। আর দেশের ভেতরে তো বটেই, দেশের বাইরেও আমরা আমাদের পণ্য সরবরাহ করে থাকি। আর আমাদের অনলাইন বিক্রির বড় একটি অংশই মূলত সম্পন্ন হয় দেশের বাইরের গ্রাহকদের মাধ্যমে। ঈদ উপলক্ষে আলাদা করে কোনো ছাড় বা অফার নেই কেক্র্যাফরেটর অনলাইন ক্রেতাদের জন্য। তবে ৪ আগস্ট দেশের মধ্যে যেকোনো স্থানে পণ্যের ডেলিভারি বিনামূল্যে করা হবে।
এখনি ডটকম
তরুণ উদ্যোক্তা শামীম আহসান ও তার বন্ধু ইমরান খান প্রতিষ্ঠা করেন এখনি ডটকম। বাংলাদেশে ই-কমার্সের সম্ভাবনাকে মাথায় রেখেই ২০১১ সালের জানুয়ারিতে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করেন এখনি ডটকম। বাংলাদেশের অনলাইন শপগুলোর মধ্যে অন্যতম শীর্ষে রয়েছে এই শপটি। ঈদ উপলক্ষে এখনি ডটকমে চলছে ডিজিটাল ঈদ মেলা। এখনি ডটকমে নিবন্ধনের মাধ্যমে যেকোনো ক্রেতা পেতে পারেন সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ছাড়। পাশাপাশি প্রথম অনলাইন বিপণী হিসেবে সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির আওতায় যাকাতের কাপড় বিতরণ করবে এখনি ডটকম। কেনা কাপড় ক্রেতার নির্ধারিত ব্যক্তি কিংবা পরিবারের কাছে পৌঁছে দেবে এখনি ডটকম। যদি কেউ ব্যক্তি নির্ধারণ করতে না চান ,তবে কাপড় ঈদ উপহার হিসেবে বিতরণ করা হবে সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের মাঝে।
অঞ্জন’স
দেশিয় ফ্যাশন হাউস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত অঞ্জন’স। রাজধানী জুড়ে যেমন তাদের রয়েছে বেশ কয়েকটি শোরুম, তেমনি রাজধানীর বাইরে বড় বড় শহরগুলোতেও রয়েছে তাদের উপস্থিতি। শোরুমের পাশাপাশি প্রযুক্তির এই যুগে এসে অনলাইনেও নিজেদের পণ্য বিক্রি শুরু করেছে অঞ্জন’স। অনলাইনেও ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছেন তারা। অনলাইন বিক্রিতে অবশ্য তারা ফেসবুকের মাধ্যমেই প্রচারণা চালিয়ে থাকে। সরাসরি বিজ্ঞাপন না দিয়ে বরং তারা তাদের টার্গেট কাস্টমারদের ইনবক্সে সরাসরি ম্যাসেজ পাঠিয়ে জানিয়ে দেয় তাদের সর্বশেষ পণ্যগুলোর কথা। আলাদা করে অনলাইন শপিংয়ে বিশেষ কোনো ছাড়ের ব্যবস্থাও নেই তাদের। তবে সময়ের সাথে সাথে অনলাইনে তাদের বেচা-বিক্রি বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্র্যান্ডস ডটকম
দেশের সুপরিচিত সব ব্র্যান্ডের পণ্য একটি একক অনলাইন স্টোরে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা থেকে যাত্রা শুরু বাংলাদেশব্র্যান্ডস ডটকমের। এই স্টোরের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে কেবল দেশি ব্র্যান্ডের পণ্যই মিলবে। পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে শুরু করে জীবনযাপন সংশ্লিষ্ট প্রায় সব পণ্যই রয়েছে এখানে। বর্তমানে এই শপে রয়েছে বাংলাদেশের ৩৭টি ব্র্যান্ডের ৬৪ হাজারেরও বেশি পণ্য। বাংলাদেশব্র্যান্ডস ডটকমের প্রাথমিক উদ্যোগটি ছিলো আমারদেশ-ইশপ ডটকম। আমার দেশ আমার গ্রাম প্রকল্পের আওতায় ২০০৯ সালে প্রত্যন্ত গ্রামের নারীদের হাতে তৈরি শৈল্পিক কারুপণ্য, কৃষকের উত্পাদিত শাক-সবজিসহ সারাদেশের উল্লেখযোগ্য পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যম হিসেবে শুরু করে এই শপটি। নানা ধরনের পণ্যের পাশাপাশি গত বছর এই অনলাইন শপ থেকে কুরবানির গরুও বিক্রি করা হয়। সেই উদ্যোগে সাড়াও মেলে গ্রাহকদের কাছ থেকে।
প্রিয়শপ ডটকম
এ বছরের শুরুতেই যাত্রা করে প্রিয়শপ। পোশাক, প্রসাধনীসহ সব ধরনের পণ্যই রয়েছে প্রিয়শপে। ঈদ উপলক্ষে প্রিয়শপ ডটকমে পুরো রমজান মাস জুড়ে চলছে ই-ঈদ মেলা। এতে ৫০০ টাকার পণ্য কিনলেই ক্রেতারা পাবেন ১ টি কুপন। রমজান মাস শেষে র্যাফেল ড্রয়ের মাধ্যমে ২ জনকে দেওয়া হবে মোবাইল ফোন, ১ জনকে দেওয়া হবে একটি ট্যাবলেট পিসি। এ ছাড়া প্রতিদিন একজন গ্রাহক পাবেন বিশেষ উপহার। রমজান উপলক্ষে বিভিন্ন পণ্যে রয়েছে ছাড়। শপের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আশিকুল আলম খান জানান, তাদের ক্রেতাদের বড় একটি অংশই রাজধানীর বাইরের। ঢাকার বাইরের ক্রেতাদের কাছেও হালফ্যাশনের সব পণ্য পৌঁছে দিতে প্রিয়শপ ডটকম ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন তিনি।
ঢাকাশাড়ি ডটকম
বাহারি সব শাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাকের সংগ্রহ নিয়ে যাত্রা শুরু করে অনলাইন শপ ঢাকাশাড়ি ডটকম। তবে তাদের শাড়িই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় বলে জানালেন ঢাকাশাড়ি ডটকমের চিফ অপারেশন্স অফিসার নাজনীন সুলতানা। দেশের বাইরে পণ্য সরবরাহে ফেডেক্স এবং সরকারি পোস্ট অফিসের ইএমএস সেবা ব্যবহার করে থাকে ঢাকাশাড়ি ডটকম। নাজনীন সুলতানা বললেন, ‘বিভিন্ন উপলক্ষেই আমাদের বিক্রির পরিমাণ বেশি। বিশেষ করে ভ্যালেন্টাইনস ডে, ফাদারস ডে, মাদারস ডে-তে ক্রেতাদের চাহিদা থাকে বেশি। তবে ঈদেই সবচেয়ে বেশি সাড়া পাওয়া ক্রেতাদের কাছে।’ আর ঈদ উপলক্ষে সরাসরি অফার না থাকলেও ভাউচার এবং কুপন রয়েছে ঢাকাশাড়ির।
কয়েকটি অনলাইন শপের ঠিকানা
http://www.anjans.com
http://www.akhoni.com
http://kaykraft.com
http://bangladeshbrands.com
http://punoh.com
http://priyoshop.com
http://www.evolvebd.com
http://www.dhakasharee.com
http://rang-bd.com
http://www.hutbazar.com
http://www.easybazar24.com
www.fac ebook.com/Biponycom
http://www.bdhaat.com
http://jemonkhushi.com
http://www.upoharbd.com