Published On: Sun, Apr 20th, 2014

আজ শুভ ইস্টার সানডে

Share This
Tags
easterআজ রোববার শুভ ইস্টার সানডে। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করার পর এ দিনে খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্টের পুনরুত্থান হয়েছিল। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ও দিনটি যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় উদ্‌যাপন করছে। প্রতিটি চার্চ অপরূপ সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। আজ রোববার সকালে দেশের সব চার্চেই বিশেষ খ্রিস্টযোগ ও প্রার্থনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রার্থনা অনুষ্ঠান ছাড়াও বিভিন্ন খ্রিস্টীয় সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এ বিশেষ দিনটি উদ্‌যাপনের জন্য নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ইস্টারের চেতনা বিশ্বশান্তি ও নির্মল আনন্দ আনতে বিশেষ ভূমিকা রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করে বিভিন্ন সংগঠন বিবৃতি দিয়েছে।

খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্টকে বিপথগামী ইহুদী শাসকগোষ্ঠী তাদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন শাসন ব্যবস্থা অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করেছিল। কিন্তু মৃত্যুর তৃতীয় দিবসের এই দিনে যিশুখ্রিস্টের পুনরুত্থান হয়। যিশুখ্রিস্টের পুনরুত্থানের রোববারটিই ইস্টার সানডে নামে পরিচিত।

চল্লিশ দিনের রোজা পালন শেষে এ দিনে বিশ্বের সব খ্রিস্টভক্তদের জীবনে বয়ে আনে নির্মল আনন্দ ও শান্তি। রাত থেকেই শুরু হয় ইস্টার সানডে উদযাপন। গভীর রাতে প্রতিটি চার্চে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠান। খ্রিস্টভক্তরা চার্চে গিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত অবস্থান করেন।তারা পরস্পরের সঙ্গে ইস্টার সানডের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। খ্রিস্টভক্তরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কীর্তন করে রাতের বাকি সময় পার করেন।

বিভিন্ন খ্রিস্টীয় সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এ দিনটি উদ্‌যাপনের জন্য নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ইস্টার সানডেতে সরকারি ছুটি ঘোষণা করার জন্য বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস)। ইস্টার সানডে উপলক্ষে শনিবার পাঠানো এক শুভেচ্ছা বিবৃতিতে সংগঠনের নেতারা এ দাবি জানান।

এক যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন, মহাসচিব নির্মল রোজারিও, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হেমন্ত কোড়াইয়া এবং চার্চ অব বাংলাদেশের কুষ্টিয়া ডায়োসিসের বিশপ রাইট রেভা শ্যামুয়েল সুনীল মানখিন খ্রিস্টান সম্প্রদায়সহ দেশবাসীকে ইস্টার সানডের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, ইস্টার সানডে অস্থিতিশীল বিশ্বে শান্তি ও নির্মল আনন্দ বয়ে আনবে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মঙ্গল কামনা করেন তারা।

ফাদার প্রশান্ত এল গমেজ  জানান, ইস্টার সানডে গোটা বিশ্বের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য একটি আনন্দের বিষয়। দিনটি প্রভু যিশুর পুনরুত্থান উৎসব হিসেবে উদযাপন করা হয়। প্রত্যেক খ্রিস্টভক্ত মহাসমারোহে প্রভু যিশুর পুনরুত্থান ও তার মহা গৌরবের প্রতাপ স্বীকার করে নিচ্ছেন।

প্রভু যিশু পাপীতাপীর নিমিত্তে ক্রুশে সমর্পিত হয়েছিলেন।শত্রুদের দ্বারা প্রহারিত, লাঞ্ছিত, অপমানিত, যন্ত্রণাভোগ এবং সর্বোপরি ক্রুশের ওপর জীবন সমর্পণ করে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।কিন্তু তার এ মৃত্যু ছিল ক্ষণস্থায়ী। মাত্র তিনদিন পরেই মহা গৌরব ও অসীম শক্তির পরিচয় দান করলেন। তিনি বেঁচে উঠলেন। বলাবাহুল্য, প্রভু যিশুর এ পুনরুত্থান উৎসব উদ্‌যাপন পটভূমিতে রয়েছে খ্রিস্টভক্ত অনুসারীদের আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি।

প্রভু যিশুর এ পুনরুত্থান উৎসবে ভক্তরা শুধু আনন্দের সহভাগী হন না, আনন্দের সঙ্গে সঙ্গে নতুন জীবনের দিক নির্দেশনা খুঁজে পান। এ নতুন জীবনের মধ্যে আছে পরম শান্তি, সৌহার্দপূর্ণ ভালবাসা, পারস্পরিক মিলন, একে অপরকে ক্ষমাদান এবং ক্ষমার মনোভাব নিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাজ ও পরিবারে সুন্দর জীবন যাপন করার প্রতিশ্রুতি।

সারাবিশ্ব পেতে চায় শান্তি। যিশুর এ পুনরুত্থান মানুষের পরিত্রাণের পথকে সুগম করে তোলে। জীবনের পরিবর্তন, আচার-আচরণ, স্বভাব পরিবর্তন করেও যেন ঐশ্বর্যমণ্ডিত এবং অনন্ত জীবন পাওয়ার প্রত্যাশায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে মানুষ। ইস্টার সানডে যিশুর পুনরুত্থান একটি আনন্দের সংবাদ। ইস্টার সানডে অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষের জীবনে বয়ে আনবে শান্তি, ক্ষমা, ভালবাসা, পারস্পরিক মিলন, আনন্দ ও ভ্রাতৃত্ববোধ।

Leave a comment

You must be Logged in to post comment.