যৌন নিপীড়ক শিক্ষক চাকরি হারালেন

ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাইফুল ইসলামকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সভায় আরেকটি যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তেরও সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে।
সিন্ডিকেট সভা সূত্রে জানা গেছে, অধ্যাপক সাইফুলের বিরুদ্ধে নিজের বিভাগের এক ছাত্রীকে বাসায় ডেকে নিয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনটি সভায় উপস্থাপিত হওয়ার পর এই শিক্ষকের শাস্তির বিষয়টি আলোচনা করে ঠিক করা হয়।
এই বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘নৈতিক স্খলন ও ছাত্রীকে নিপীড়নের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর মিডটার্ম পরীক্ষার খাতায় নম্বর নিয়ে সমস্যা হয়েছে এমন কথা বলে থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের এক ছাত্রীকে বাসায় ডেকে নেন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। বাসায় ডেকে নিয়ে কুশলাদি বিনিময় শেষে তিনি ছাত্রীটিকে নির্যাতন করেন। পরদিন ওই ছাত্রী শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে।
অভিযোগ সম্পর্কে জানার পর বিভাগের শিক্ষার্থীরা অধ্যাপক সাইফুলের পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলনে নামেন। তবে অভিযোগের বিষয়ে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করার পাশাপাশি বলেছিলেন, এটা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
আন্দোলনের একপর্যায়ে ওই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর সাইফুল ইসলামকে বিভাগের নিজ কার্যালয়ে দিনভর অবরুদ্ধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। ওই দিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জরুরি সিন্ডিকেট সভা করে এবং সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে অধ্যাপক সাইফুল ইসলামকে সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি ও সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না কারণ দর্শাতেও বলা হয় এবং ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
এরপর অধ্যাপক সাইফুলকে চাকরিচ্যুত করার দাবি ওঠে। এই দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. সহিদ আখতার হুসাইনের নেতৃত্বাধীন কমিটি তদন্ত করে সাত মাস পর প্রতিবেদন দেয়, যা গতকাল সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান, ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোসাম্মৎ নীলিমা আকতার ও আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ এফ এম মেজবাহউদ্দিন।
চাকরিচ্যুত করার বিষয়ে অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁর ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
আরেকটি ঘটনায় তদন্ত কমিটি : গতকাল সিন্ডিকেট সভায় আরো এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উত্থাপিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের এই অভিযোগ তদন্তের জন্য ড. সহিদ আখতার হুসাইনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আগের কমিটিকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অধ্যাপক নুরুল ইসলাম গতকাল অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে (এলপিআর) গেছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু জানা যায়নি।