Published On: Thu, Oct 22nd, 2015

বিজয় দিবসে শুরু হবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কাজ

Share This
Tags

bangobondhu satelite

আগামী বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বরে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে। ফ্রান্সের কম্পানি থালেস অ্যালেনিয়া স্পেস বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে এই স্যাটেলাইট তৈরির কাজ করবে। এরই মধ্যে তাদের কার্যাদেশ দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকার। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে স্যাটেলাইটটি মহাকাশে উৎক্ষেপণ এবং সেটিকে বাণিজ্যিকভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কাজ যথারীতি এগিয়ে চলছে। বিজয় দিবসেই এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করতে চাই। আর এটা হবে আমাদের জন্য বড় অর্জন।’ তিনি বলেন, ‘স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে ডিজিটাল দেশ গড়ার ক্ষেত্রে আমরা আরো এক ধাপ এগিয়ে যাব।  দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় টেলিকম সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। স্যাটেলাইটটি কক্ষপথে স্থাপন করা হলে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ও টিভি সম্প্রচার ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। এতে নিজেদের ভাড়া যেমন বাঁচবে তেমনি ভুটান, নেপালসহ কয়েকটি দেশের কাছে তা ভাড়া দেওয়া যাবে।’

এদিকে প্রতিযোগিতায় ফ্রান্স জিতে যাওয়ায় হতাশ হয়েছে দরপত্রে অংশ নেওয়া যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা। কারণ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মতো বৃহৎ প্রকল্প কৌশলগত কারণেও গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রকল্পের কাজ পেতে ভারত, চীনও আগ্রহী ছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পশ্চিমা কূটনীতিক   বলেন, প্রতিযোগিতায় শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত ফল না পাওয়ায় তিনি কিছুটা হতাশ। কারণ তাঁর দেশের কম্পানি স্যাটেলাইট প্রকল্পের কাজটি পেলে বাংলাদেশের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক আরো বাড়ার সুযোগ সৃষ্টি হতো।

অন্য এক কূটনীতিক বলেন, তবু শেষ পর্যন্ত কাজটি পশ্চিমা একটি দেশই পেয়েছে। এ প্রকল্পের গুরুত্ব অনেক। এটি বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী দেশগুলোরও কাজে আসবে।

মন্ত্রণালয় জানায়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলে চীনের গ্রেটওয়াল ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশন, ফ্রান্সের থালেস অ্যালেনিয়া স্পেস, যুক্তরাষ্ট্রের অরবিটাল এটিকে এবং কানাডার এমডিএ কম্পানি এতে অংশ নেয়। দরপত্রগুলো কারিগরি মূল্যায়নের পর তা ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হয়। ওই কমিটি ফ্রান্সের থালেস অ্যালেনিয়া স্পেস কম্পানিকে কার্যাদেশ দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসির কর্মকর্তারা জানান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য অরবিটাল স্লট (১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) লিজ নিতে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। ইন্টারস্পুটনিক ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব স্পেস কমিউনিকেশনের সঙ্গে দুই কোটি ৮০ লাখ ডলারে এই চুক্তি হয়েছে। স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করতে খরচ হবে দুই হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দেবে এক হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। বাকি এক হাজার ৬৫২ কোটি টাকা দেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডার ক্যাপাসিটি থাকবে। এর মধ্যে ২০টি ট্রান্সপন্ডার বাংলাদেশ নিজের ব্যবহারের জন্য রেখে দেবে। বাকি ২০টি বিক্রি করা হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, রকেটের মাধ্যমে স্যাটেলাইট পাঠানো হয় মহাকাশে। অনেক সময় রকেট উৎক্ষেপণের আগে-পরে কিংবা অন্য যেকোনো কারণে বিগড়ে যেতে পারে। বিষয়টি মাথায় রেখে কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না বাংলাদেশ। এ জন্য বিকল্প আরেকটি রকেট মজুদ রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। একটি ব্যর্থ হলে আরেকটি দিয়ে উৎক্ষেপণ করা হবে। এ জন্য ওই প্রকল্পে ব্যয় কিছুটা বাড়ছে। এর পরও এটি করা হচ্ছে, কারণ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে বাংলাদেশসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি দেশ টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচার সেবা পাবে। এতে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে।

মহাকাশের বিভিন্ন রেখায় স্থাপন করা ৫৩টি দেশের এক হাজারের বেশি স্যাটেলাইট যোগাযোগ ও সম্প্রচার এবং গোয়েন্দাগিরির কাজ করে যাচ্ছে। যার অর্ধেকই যুক্তরাষ্ট্রের। বাংলাদেশ হবে ৫৪তম দেশ, যাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট হতে যাচ্ছে। নিজেদের স্যাটেলাইট না থাকায় বাংলাদেশের ওপর বিদেশি পাঁচটি স্যাটেলাইট ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্বের ১০টি দেশের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সক্ষমতা আছে। স্যাটেলাইটগুলো বিষুবরেখা, মেরুবিন্দু বা ক্রান্তীয় অঞ্চল অথবা বিভিন্ন কৌণিক পথে পরিভ্রমণ করছে। যোগাযোগ মাধ্যমের স্যাটেলাইটগুলো সাধারণত বিষুবরেখার ওপর স্থাপন করা হয়। কক্ষপথের এই স্থানে স্যাটেলাইট স্থাপন করলে পরিচালন ব্যয় অনেক কম হয়। তাই উন্নত দেশগুলো এই কক্ষে একটার পর একটা যোগাযোগ স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে।

Leave a comment

You must be Logged in to post comment.