ফাইনালের স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের
প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার স্বপ্ন পূরণের থেকে এক ধাপ দূরে ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু হলো না। থামতে হলো সেমি-ফাইনালে। স্বাগতিকদের ৩ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে উঠে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখানে ১৪ ফেব্রুয়ারি মিরাজদের চোখের সামনেই ভারতের সাথে শিরোপার লড়াইয়ে নামবে তারা। বাংলাদেশের রানটা একটু কম হয়ে গিয়েছিল। ২২৬ রানে অল আউট তারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসারদের কাছেই তো হারল বাংলাদেশ! তারা নিল ৯ উইকেট। অন্যটি রান আউট। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলে উইকেট দিয়ে আসার জন্য নিশ্চয়ই আক্ষেপ করবে। শীর্ষ ব্যাটসম্যানরা আরেকটু দায়িত্ব নিলে বোলারদের ওপর তো এত চাপ পড়ত না! ফলও ভিন্ন কিছু হতে পারত। স্পিনারদের ওপর ছিল বড় দায়িত্ব। অফ স্পিনার মিরাজ প্রথম দুই উইকেট নিয়েছিলেন। থামিয়েছিলেন বিপজ্জনক গার্ডন পোপকেও (২৫ বলে ৩৮)। অধিনায়ক শিমরন হেটমায়ার এরপর খেলে গেলেন ৬০ রানের দারুণ ইনিংস। ওটাই বাংলাদেশের হাত থেকে ম্যাচটা অর্ধেক ছিনিয়ে নিল। কিসি কার্টির (২২) সাথে প্রথমে ৬২ রানের জুটি গড়লেন হেটমেয়ার। তারপর শামার স্প্রিঙ্গারের সাথে তার ২৯ রানের জুটি হলো। পেসার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন তুলে নিলেন হেটমায়ারকে। স্টেডিয়ামে ম্যাচে ফেরার উচ্ছ্বাস। এরপর স্প্রিঙ্গার ব্যক্তিগত ১৫ রানে সাইফুদ্দিনকে ফিরতি একটি ক্যাচ দিয়েছিলেন। সাইফুদ্দিন কঠিন ক্যাচটা ধরতে পারলেন না। বাংলাদেশের সর্বনাশ করলেন স্প্রিঙ্গারই। যদিও ম্যাচ জেতার একটি সম্ভাবনা তৈরি করে দিয়েছিলেন বাঁ হাতি স্পিনার সালেহ আহমেদ শাওন। ৩৮তম ওভারে জোড়া আঘাত হানলেন শাওন। ৪ উইকেটে ১৭৭ থেকে ৬ উইকেটে ১৮১ রানের দল হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৭৩ বলে ৪৫ রান দরকার ক্যারিবিয়ানদের। বাংলাদেশের দরকার ৪ উইকেট। দুই দলের সম্ভাবনা ৫০-৫০। চাপটা ধরে রাখল বোলাররা। কিন্তু মুঠি আলগা হয় সময়ের সাথে। ২১৭ রানের সময় আরেকটি উইকেট তুলে নিলেন সাইফুদ্দিন। কিন্তু স্প্রিঙ্গার ছিলেন। ৮ বল হাতে রেখে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতল। ৮৮ বল খেলে ৫৯ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচের নায়ক, ম্যাচের সেরা স্প্রিঙ্গার তখন দলের মধ্যমণি। তার আগে টস জিতে কেমন ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং? ভালো না। ওয়েস্ট ইন্ডিজ নতুন বলে চাপে ফেলতে চেয়েছে বাংলাদেশকে। পেরেছে। একপর্যায়ে ১১৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। পেসার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ব্যাট করতে জানেন। তার সাথেই মিরাজ গড়ে তোলেন জুটি। শেষ পর্যন্ত ষষ্ঠ উইকেটেই হয়েছে ম্যাচের সেরা ৮৫ রানের জুটি। এই জুটি পেয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিনারদের। যাদের হাতে ছিল ১০ ওভার। স্পিনেও খুব ভালো ব্যাট করা হয়নি। আসলে তখন চাপটাই খুব বেশি। একটি উইকেট পড়লেই বেরিয়ে আসবে লেজ। সেই ঝুঁকি অধিনায়ক নেবেন কিভাবে? সাইফুদ্দিনকে নিয়ে সতর্ক হয়ে ব্যাট করে গেছেন মিরাজ। ১৮.২ ওভার ব্যাট করেছেন দুজন এক সাথে। সাড়ে চারের একটু ওপরে এসেছে রান। পঞ্চম পেসার কিমো পল ৪৬তম ওভারে প্রথম বল হাতে নিলেন। ওই ওভারেই পর পর দুই বলে ফিরিয়ে দিলেন মিরাজ ও সাইফুদ্দিনকে। মিরাজ ৭৪ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৬০ রান করেছেন। সাইফুদ্দিন ৫৫ বলে ৩ চারে করেছেন ৩৬। তারা টিকে থাকতে পাররে আর কিছু রান হলেও পারত। শেষ ৫ উইকেটের বিনিময়ে মাত্র ২৮ রান তুলেছে বাংলাদেশ। মোসাব্বেক হোসেন ১৪ ও মেহেদি হাসান রানা অপরাজিত ১০ রান করেছেন। দলের সংগ্রহটা একটু বেড়েছে। তার আগে পিনাক ঘোষ ০, সাইফ হাসান ১০, নাজমুল হোসেন ১১, জয়রাজ শেখ ৩৫ ও জাকির হোসেন ২৪ রান করেছেন। যুব বিশ্বকাপে মিরাজের এই দলটি ইতিহাস গড়া দল। প্রথমবার দেশকে সেমিফাইনালে তোলা দল। কিন্তু তারা স্বপ্নের দল হতে গিয়েও পারল না। স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় শেষ হলো তাদের বিশ্বকাপ।