Published On: Wed, Jun 26th, 2013

স্মার্টফোনেই হূদয়ের খোঁজখবর

Share This
Tags

smartহূদরোগ ঝুঁকি আর তার নজরদারিতে নতুন প্রযুক্তির পর্যবেক্ষক তৈরি হচ্ছে। সার্বক্ষণিকভাবে যে আপনার হূিপণ্ডের ভালোমন্দের প্রতি নজর রাখবে, থাকবেও একবারে বুকের ভেতরে, ঘনিষ্ঠ সঙ্গী হয়ে; আর আপনার স্মার্টফোনে জানাবে হূিপণ্ডের ভালোমন্দের খবরাখবর।
গবেষকেরা বলছেন এর ফলে হাসপাতাল কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে হূদরোগীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকার ক্লান্তি ও বিরক্তির পালার ইতি ঘটবে।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা জানিয়েছেন, আগামী এক দশকের মধ্যেই হূিপণ্ডের রক্তনালির মধ্যে বসবে অতিক্ষুদ্র মাইক্রোচিপ। সেখান থেকে তথ্য পাঠাবে স্মার্টফোনে। নজরদারিতে থাকবে হূিপণ্ডের খুঁটিনাটি। গবেষকেরা স্মার্টফোনকে মানুষের প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহারের জন্য স্মার্টফোনের সঙ্গে সম্পর্কিত নানা প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করছেন।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা নতুন স্মার্টফোন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ঘোষণা দিয়েছেন যা মানুষের হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা দিলে সতর্কবার্তা পাঠানোসহ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানা কাজে সাহায্য করতে সক্ষম হবে। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনভিত্তিক এম১০ নামের একটি প্রতিষ্ঠান স্মার্টফোনে তথ্য পাঠাতে সক্ষম এমন ট্যাটু বা উলকি উদ্ভাবন করেছেন। প্রতিষ্ঠানটির গবেষকেরা জানিয়েছেন, পাতলা সিলিকনের তৈরি হূত্স্পন্দন ও রক্তচাপ পরিমাপক এ উলকি শরীরে লাগিয়ে রাখলে তা স্মার্টফোনে বিশেষ সংকেত পাঠাতে পারে। এ উলকি থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে শরীরের বিভিন্ন রোগ বা শারীরিক সমস্যার সমাধান করতে পারবেন চিকিত্সকেরা।
সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তি উদ্যোক্তারা এ বিশেষ উলকি ও স্মার্টফোন প্রযুক্তি শিগগিরই বাজারে আনার পরিকল্পনাও করছেন।
গবেষকেরা আশা করছেন, ক্ষুদ্রাকার এ উলকি বর্তমানে ত্বকে ব্যবহূত হলেও আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই তা হূিপণ্ডে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। হূিপণ্ডের রক্তনালিতে বিশেষ মাইক্রোচিপ বসিয়ে তা থেকে প্রাপ্ত তথ্য স্মার্টফোনে বিশ্লেষণ করে হূিপণ্ডের ওপর নজরদারি করা যাবে বলে আশা করছেন গবেষকেরা।
কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ফুজিত্সু
জাপানের প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফুজিত্সুর গবেষকেরা একটি স্মার্টফোন তৈরিতে কাজ করছেন যা স্মার্টফোনের ক্যামেরায় মুখের ছবি তুলেই ব্যক্তির নাড়ির স্পন্দন জানিয়ে দিতে পারবে। স্মার্টফোনের ক্যামেরা কোনো ব্যক্তির মুখের ওপর পাঁচ সেকেন্ড ধরে রাখলে সঠিকভাবে তাঁর নাড়ির স্পন্দন মাপতে পারবে এ স্মার্টফোন। আগামী বছরের মধ্যেই স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কাজে লাগে এবং নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যযুক্ত এমন ধরনের নতুন স্মার্টফোন বাজারে আনবে প্রতিষ্ঠানটি। গবেষকেরা জানিয়েছেন, স্মার্টফোনের জন্য বিশেষভাবে তৈরি প্রযুক্তিটির মাধ্যমে মুখের ওপর জমা রক্ত স্মার্টফোনের ক্যামেরায় ধরা পড়ে এরপর সে ছবিটি স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে নাড়ির গতি মাপা যায়।
বর্তমানে বাজারে থাকা স্মার্টফোনের অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে নানা অ্যাপ্লিকেশনের সাহায্যে নানা শারীরিক সমস্যার হাল জানা সম্ভব হয়। অ্যাপলের তৈরি আইফোনের জন্য ‘কার্ডিও’ নামের এ ধরনের একটি অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে। তবে গবেষকেরা আরও গভীরভাবে জানতে এ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ক্যানসারও শনাক্ত করবে স্মার্টফোন
দক্ষিণ কোরিয়ার গবেষকদের ধারণা সত্য হলে খুব শিগগিরই আপনার স্মার্টফোন মুহূর্তেই জানিয়ে দেবে, কী রোগে আপনি আক্রান্ত হয়েছেন। এমনকি ক্যানসারের মতো রোগও নির্ভুলভাবে শনাক্ত করতে পারবে এই স্মার্টফোন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, কোরিয়া অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (কেএআইএসটি) একদল গবেষক দেখেছে, জৈব আণবিক বস্তু শনাক্ত করার কাজে টাচ স্ক্রিন প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। টাচ স্ক্রিনের মাধ্যমে ব্যক্তি ভেদে সুনির্দিষ্ট প্রোটিন ও ডিএনএ শনাক্ত করা সম্ভব। স্মার্টফোনের টাচ স্ক্রিনে কোনো ব্যক্তির ছোঁয়া লাগলে তার শরীরের চার্জের মাধ্যমে তাকে শনাক্ত করা যায়। কারণ একেক মানুষের প্রোটিন ও ডিএনএ একেক রকমের হয়ে থাকে।
লিভারের ক্যানসার নির্ণয়ের জন্য এই প্রোটিনকে শনাক্ত করা যায়। অথচ প্রচলিত প্রযুক্তিতে এই ফলাফল নির্ণয় করতে অনেক বড় বড় যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়। অবশ্য কবে নাগাদ এই স্মার্ট ফোন তৈরি করা সম্ভব হবে, সে ব্যাপারে সঠিক কোনো ধারণা দেননি গবেষকেরা।
দাঁতে বসে শরীরের খবর
কাগজের চেয়েও পাতলা সেন্সর উদ্ভাবন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা। এই সেন্সর ট্যাটু বা উলকির মতো দাঁতে লাগানো হবে। সেন্সরটি শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয়ে চিকিত্সককে সাহায্য করতে সক্ষম। গবেষকদের বরাতে এক খবরে ডেইলি মেইল জানিয়েছে, দাঁতে বসানোর উপযোগী এই তারবিহীন সেন্সর কোনো রোগের প্রাথমিক লক্ষণের তথ্য চিকিত্সকের কাছে পাঠাতে পারবে। এ তথ্য স্মার্টফোনে বিশ্লেষণ করে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত ও রোগ নির্ণয় করতে পারবেন চিকিত্সকেরা। শিগগিরই এ উলকি বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা করেছেন তাঁরা।
যন্ত্র গলবে শরীরের ভেতরে!
কথায় বলে, ‘শরীরের নাম মহাশয়, যা সওয়াবে তা-ই সয়’। তাই বলে শরীরের ভেতর ইলেকট্রনিক যন্ত্র? হ্যাঁ, ২০১২ সালেই যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা এ ধরনের যন্ত্র তৈরিতে সফল হয়েছেন। গবেষকেরা জানান, চিকিত্সার প্রয়োজনে বিশেষ একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র শরীরের নির্দিষ্ট অংশে ওষুধ প্রয়োগের পর আপনা আপনি গলে যাবে। গবেষকেদের দাবি, চিকিত্সা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এ যন্ত্র। সিলিকন ও ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইডের ওপর রেশমের আবরণ দিয়ে তৈরি এ যন্ত্রটি।

         গবেষকেরা এ প্রযুক্তিটি চিকিত্সা ক্ষেত্র ছাড়াও কম্পিউটার ও স্মার্টফোনে ব্যবহার করার কথাও ভাবছেন

Leave a comment

You must be Logged in to post comment.