স্পেনের গোল উৎসব; নাইজেরিয়াকে হারিয়েছে উরুগুয়ে
বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেনের বিপক্ষে পরাজয়টাই ছিল তাহিতির সবচেয়ে সম্ভাব্য ফল। প্রশ্ন ছিল শুধুই গোল ব্যবধানটা নিয়ে। বৃহস্পতিবার ফিফা কনফেডারেশনস কাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে লা রোজাদের কাছে ১০-০ গোলে হারল তাহিতি। সঙ্গে সঙ্গেই ইতিহাসের পাতায় নাম ওঠাল তারা। কনফেডারেশনস কাপে এটাই যে সবচেয়ে বড় ব্যবধানের হার! এক যুগেরও বেশি সময় আগে ১৯৯৯ কনফেডারেশনস কাপের সেমিফাইনালে ব্রাজিলের কাছে হেরে (৮-২) এই রেকর্ডের মালিক ছিল সৌদি আরব। সৌদি আরবকে ছাড়িয়ে এবার সবচেয়ে বড় ব্যবধানের লজ্জাজনক হারের রেকর্ড গড়ল তাহিতি।
ফার্নান্দো তোরেস নাকি ডেভিড ভিয়া? কাকে রাখবেন দলে। শেষ পর্যন্ত দুই স্ট্রাইকারকেই দলে রাখলেন ভিসেন্তে দেল ভস্ক। দুজনই হ্যাটট্রিক করে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই দলকে তুললেন সেমিফাইনালে। আজ গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়ার মুখোমুখি হবে স্প্যানিয়ার্ডরা। আর শক্তিশালী উরুগুয়ের বিপক্ষে মাঠে নামবে তাহিতি।
উরুগুয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৭১ শতাংশ সময় বল ছিল স্পেনের দখলে। আর গতকাল নবাগত দল তাহিতির বিপক্ষে এই সংখ্যাটা ছিল ৬৭। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে কি তাহলে তাহিতি কিছুটা ভালো খেলল? স্কোরলাইন দেখে অবশ্য এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যাওয়া একেবারেই অবান্তর। তাহিতির জালে পরশু ১০ বার বল পাঠিয়েছেন তোরেস, সিলভা আর ভিয়ারা। শুরুর ৫ মিনিটেই গোল করে শুরুটা করেছিলেন তোরেস। এরপর ৫৭ মিনিটেই পূর্ণ করেন হ্যাটট্রিক। ৭৮ মিনিটে করেন নিজের চতুর্থ গোলটি। এদিন হ্যাটট্রিক করেন ভিয়াও (৩৯, ৪৯, ৬৪মি.)। এরপর ৩১ ও ৮৯ মিনিটে শেষ গোলটি করেন ডেভিড সিলভা। ৬৬ মিনিটে একটি গোল করেন হুয়ান মাতাও।
বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের কাছে বিশাল ব্যবধানে হারলেও মারাকানা স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছেন তাহিতির আধা পেশাদার ফুটবলাররা। ম্যাচ শেষে পুঁচকে তাহিতির প্রশংসা করেছেন স্প্যানিশ ফুটবলাররাও। বিশ্বসেরাদের বিপক্ষে এর চেয়ে বেশি কোনো প্রত্যাশা কি থাকার কথা ছিল তাহিতিয়ানদের?
নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ৬-১ গোলের হার দিয়ে কনফেডারেশনস কাপ শুরু করেছিল তাহিতি। স্পেনের বিপক্ষেও যে বড় ব্যবধানে হার নিশ্চিত, এটা জেনেই মাঠে নেমেছিলেন তাহিতির ফুটবলাররা। এরপরও শুধুই গোল বার আগলে খেলার চেষ্টা করেননি তারা। যখনই বল পেয়েছেন, চেষ্টা করেছেন আক্রমণের। ম্যাচ শেষে তাই র্যাংকিংয়ের ১৩৮তম দলটির প্রশংসা না করে পারেননি ফার্নান্দো তোরেস। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রায়ই নিচের সারির দলগুলো কোনো আশা বা মানসিক শক্তি ছাড়াই মাঠে নামে। কিন্তু তাহিতি খুবই ভালো একটা উদাহরণ তৈরি করেছে যে, কীভাবে ফুটবল খেলতে হয়।’ এই তোরেসই এদিন সবচেয়ে বেশি সর্বনাশ করেছেন তাহিতির। তার পা থেকেই এসেছে স্পেনের চারটি গোল। ব্রাজিলের ঐতিহ্যবাহী মারাকানা স্টেডিয়ামের সমর্থকরা এদিন পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন তাহিতিকে। তাদের প্রতিটি পাস, প্রতিটি ট্যাকল অভিনন্দিত হয়েছে ব্যাপকভাবে। দুটি নিশ্চিত গোল রুখে দিয়ে তাহিতির ২০ বছর বয়সী গোলরক্ষক মিকেল রচেই সবচেয়ে বেশি হাততালি কুড়িয়েছেন।
এদিকে, কনফেডারেশন্স কাপের বি গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে সুপার ঈগলদের বিপক্ষে পূর্ণ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছেড়েছে কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়রা। শনিবার উরুগুয়ে ২-১ গোলে পরাজিত করে নাইজেরিয়াকে।
খেলার শুরুর থেকেই দুই দল আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের মাধ্যমে নিজেদের পায়ে বল রাখার চেষ্টা করে। খেলার ১৯ মিনিটে উরুগুয়ে এগিয়ে যায়। দিয়েগো ফোরলানের একটি ক্রসকে জালে জড়ান দিয়েগো লুগানো। ম্যাচের ৩৭ মিনিটে ইদিয়ের কাছ থেকে বল পেয়ে লুগানোকে কাটিয়ে উরুগুয়ের জালে বল জড়িয়ে দলকে সমতায় ফেরান জন অবি মাইকেল। দেশের হয়ে ৫০তম ম্যাচে নিজের চতুর্থ গোল করেন চেলসি তারকা। প্রথমার্ধের বাকি সময় আর কোনো গোল না হওয়ায় দুইদল ১-১ এ রিরতির জন্য মাঠ ছাড়ে।
এরপর, দ্বিতীয়ার্ধের ৬ মিনিটের মাথায় উরুগুয়ের তারকা দিয়েগো ফোরলান তার ৯৯তম আন্তর্জাতিক ম্যাচে গোল করে দলকে লিড এনে দেন। তার বা পাশ থেকে কাবানির বাড়িয়ে দেওয়া বলে দ্রুত গতির শটে বল জালে পাঠান।বাকি সময়ে দুই দলই মরিয়া হয়ে চেষ্টা করলেও খেলার স্কোরলাইনে আর কোনো গোল যোগ করতে পারেনি কেউ। ফলে ২-১ স্কোর নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়।