Published On: Thu, Mar 19th, 2015

শেষ হলো স্বপ্নযাত্রা

Share This
Tags

bd india

মেলবোর্নে শেষ হলো একটি স্বপ্নযাত্রা। সবকিছুর শেষ আছে। তেমনই শেষ হলো টাইগারদের বিশ্বকাপ স্বপ্নযাত্রাও। আর সেই স্বপ্নযাত্রার শেষে নেই কোনো গ্লানি। না আছে কোনো লজ্জা। আছে কেবল ক্রিকেটবিশ্বকে নিজেদের জাত চেনানোর গৌরব। যে গৌরবে এবারের বিশ্বকাপে সমীহ জাগানিয়া একটি দল হিসেবেই কোয়ার্টার ফাইনালে খেললো টাইগাররা। সেখানেই বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের কাছে হারতে হলো। সেই হারটা ১০৯ রানের। ৪৫ ওভারে ১৯৩ রানে শেষ টাইগাররা। নিজেদের দিনে ভারত দেখালো, তাদের জয়যাত্রার চাকায় পিষ্ট হতে পারে যে কেউ। এটা স্রেফ বাংলাদেশের দিন ছিল না। সেমিফাইনালে উঠে গেলো ভারত।
এক শহর থেকে আরেক শহরে ছুটোছুটি। এক অর্জন থেকে আরেক অর্জনের হাতে হাত রাখা। এভাবেই এবারের বিশ্বকাপটা কেটেছে টাইগারদের। একেবারে স্বপ্নের মতো এক সফর যেন। সেই সফরের শেষ ম্যাচে কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে হয়তো লড়াই করা হয়নি চোখে চোখ রেখে। কিন্তু চ্যালেঞ্জটা কমও দেয়নি ভারতকে। বোলিংয়ে ভারতের মতো ব্যাটিং পাওয়ারকে ৩০২ রানের মধ্যে আটকে রাখাও ছিল বড় ব্যাপার।
সেই রানের জবাবে শুরুর কিছুক্ষণ পরই পথ হারিয়েছে বাংলাদেশ। তামিম ইকবালের ব্যাটিং দেখে অনেকের মনে পড়ে গেছে ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষের ম্যাচটি। দারুণ কিছু শটে গ্যালারি নাচিয়ে তুলেছিলেন এই হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান। তাতে ৩৩ রান দ্রুতই পেয়ে যায় বাংলাদেশ। এমন চমৎকার শুরুর পর হঠাতই আঁধার ঢেকে ফেলে টাইগারদের। যাদবের বলে উইকেটের পেছনে একটা লো ক্যাচ নেন ধোনি। ২৫ বলে ২৫ রান করে বিদায় নিলেন তামিম। ঠিক পরের বলেই ইমরুল ও সৌম্যের ভুল বোঝাবুঝি। রান আউট ইমরুল (৫)। দুই বলের মধ্যে দু্‌ই উইকেট হারিয়ে হঠাতই বিপদের মধ্যে গিয়ে পড়ে টাইগাররা। সেই বিপদ থেকে আর উদ্ধারই পায়নি মাশরাফির দল।
এরপর একটা ছোটো জুটি হয়েছিল মাহমুদ উল্লাহ ও সৌম্যর মাঝে। কিন্তু এক আঘাতে সেই জুটি ভেঙে দুজনকেই ড্রেসিং রুমে পাঠিয়েছেন শামি। টানা দু্ই ম্যাচে সেঞ্চুরি করা মাহমুদ উল্লাহ আর সাহসী সৌম্য সাহস জোগাচ্ছিলেন টাইগারদের। কিন্তু তাদের ৪০ রানের জুটিটা ভেঙে দেন শামি। মাহমুদ উল্লাহ ২১ ও সৌম্য ২৯ রান করে ফিরেছেন।
তাদের বিদায়ের পর আশার আলোটা ছিল মুশফিক ও সাকিবের ব্যাটে। কিন্তু শর্ট থার্ডম্যানে জাদেজার বলে সহজ এক ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন সাকিব (১০)। ১০৪ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশ মুশফিককে হারায় কিছুক্ষণের মাঝে। যাদবের বলে ধোনিকে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ২৭ রান করেছেন মুশফিক। বাংলাদেশ তখন ধ্বংসস্তুপের মতো।
ম্যাচের সব স্বপ্নই তখন ফিকে হয়ে যায়। সেখান থেকে উত্তরণ আর সম্ভব হয়নি। নাসিরের ৩৫ আর সাব্বিরের ৩৩ কোনো ফল এনে দিতে পারেনি। যাদব ৪, শামি ও জাদেজা ২টি করে উইকেট নিয়েছেন।

আসলে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ৩০০ রানের বেশি তাড়া করে কেউ জিততে পারেনি। ৩০০ মানে তাই মানসিক বাধা। এই বিশ্বকাপে ৩১৮ রান তাড়া করেও জিতেছে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রতিপক্ষ ভারতের মতো এমন অপরাজেয় ছিল না। এমসিজিতে কোয়ার্টার ফাইনালে তাই বাংলাদেশ আটকে যায় বিরাট সেই বাধার কাছেই। ভারত যে ৬ উইকেটে করেছিল ৩০২ রান।
একটি চিত্র দেখুন। রোহিত শর্মা স্রোতের প্রতিকূলে ব্যাট করে ৯০ রানে দাঁড়িয়ে। রুবেলকে তুলে মারলেন। ইমরুল ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ নিলেন। কিন্তু আম্পায়ার ততক্ষণে জানিয়ে দিয়েছেন ওটা নো বল। ধারাভাষ্যে শেন ওয়ার্ন পর্যন্ত সংশয় প্রকাশ করলেন আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে। কোমরের ওপরের উচ্চতায় বল করেছেন রুবেল। তাই নো এর শিকার। ওই বলে নো ডাকা না হলে রোহিতের ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি হয় না। তার নামের পাশে এই ম্যাচে থাকে না ১৩৭ রানও। ওখানেই তো বাড়তি কিছু রান দিয়ে দিতে হলো বাংলাদেশকে। আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে ক্ষতি হলো টাইগারদের।
টস এই মাঠে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মাশরাফি বললেন, টস জিতলে তিনিও ব্যাট করার সিদ্ধান্তই নিতেন। সেই সিদ্ধান্ত ধোনির। মাশরাফিকে প্রথম বলে চার মেরে শুরু রোহিতের। কিছুক্ষণের মধ্যে মাশরাফি বুঝে গেলেন, এভাবে হবে না। একপ্রান্ত থেকে তাই বল শুরু করালেন নাসিরকে দিয়ে। তার অফস্পিনে একটু একটু করে নিয়ন্ত্রণ আনা গেল ভারতের ব্যাটিংয়ে। অন্যপ্রান্তেও দারুণ ছিলেন বোলাররা। প্রথম ১০ ওভারে ৫১ রান ভারতের। নাসির ৯ ওভারে দিয়েছেন ৩৫ রান মাত্র!
বাংলাদেশি বোলাররা এদিন শুরু থেকেই চমৎকার বল করেছেন। ম্যাচ যত সামনে গড়িয়েছে তাতে বোলারদের আধিপত্য ছিল স্পষ্ট। কেবল উইকেট মিলছিল না। তাও ১৭ ও ১৮ ওভারে হয়ে গেল। সাকিবের ফ্লাইটে ধোঁকা খেয়ে এগিয়ে গিয়ে স্টাম্পিংয়ের শিকার শিখর ধাওয়ান (৩০)। ভাঙলো ৭৫ রানের প্রথম জুটি। পরের ওভারেই রুবেলের শত্রু বিরাট কোহলি আউট। অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়েছিলেন। পরিণতি মুশফিকুর রহিমের তালুবন্দি বিরাট। ৩ রানেই বিদায় তার।
গ্যালারিতে ভারতের সমর্থকদের মাঝেও যে এক টুকরো বাংলাদেশ ছিল, তাতে আনন্দের ঢেউটা আছড়ে পড়ে। ভারতকে চেপে ধরে বাংলাদেশ। টাইগারদের বোলিংয়ের ধার এতটাই ছিল যে ১০০ রান তুলতে ২৬ ওভার পর্যন্ত খেলতে হয় ভারতকে।
তবে রাইনা ও রোহিতের জুটিটা গড়ে ওঠে দারুণভাবে। রাহানেকে তাসকিন বিদায় করে দেবার পর ওই জুটি শুরু। এবং তা ভোগাতে থাকে টাইগারদের। হয়ে যায় ১২২ রানের জুটি। মাশরাফি এদিন তার একমাত্র শিকার বানিয়েছেন রাইনাকে (৬৫)। ১০৮ বলে সেঞ্চুরি করার পর হাত খুলে মারা শুরু করেন রোহিত। ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে ৫০ রান পায় ভারত। শেষ ১০ ওভারে ৯৮। আর বিপজ্জনক রোহিতকে দারুণ এক ইর্য়্কারে তুলে নেন তাসকিন। এরপর ধোনিকেও আউট করেছেন তাসকিন। ১০ ওভারে ৬৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার তাসকিনের। ১টি করে উইকেট মাশরাফি, রুবেল ও সাকিবের।

Leave a comment

You must be Logged in to post comment.