Published On: Fri, Jul 4th, 2014

বাবার চোখের পানি কফিনের ওপর

Share This
Tags

Airport_bg_978950920বাবার চোখের পানি গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে কফিনের ওপর। আর সেই সঙ্গে ঝির ঝিরে হালকা বৃষ্টির পানিতে দুই ছেলের মুখ ভিজে যাচ্ছে। সে কারণে বার বার গামছা দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিচ্ছেন বাবা আব্দুল কুদ্দুস ছৈয়াল।

আর চিৎকার করে কাঁদতে পারার শক্তি নেই বাবার। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। আর চোখের পানিতে চোখ ঝাঁপসা হয়ে যাচ্ছে তার। কফিনে আটকানো ছবির ওপর ঝির ঝিরে বৃষ্টির ধারা প্রাণপ্রিয় দুই সন্তানের মুখ আরো বেশি অস্পষ্ট করে তুলছে যেন!

একবার এক ছেলে মোহাম্মদ মিলন ছৈয়ালের ছবির ওপর, আরেকবার আরেক ছেলে মোহাম্মদ স্বপন ছৈয়ালের ছবিতে গামছা বুলিয়ে বৃষ্টির পানি মুছে দিচ্ছেন বাবা আব্দুল কুদ্দুস ছৈয়াল।

ছোটবেলায় বৃষ্টিতে ভিজে গেলে দুই সন্তানের গা-মুখ মুছিয়ে দিতেন এ ভাবেই যেমনটা এখন তিনি মুছিয়ে দিচ্ছেন তিনি। পরম মমতায়।

এরপর আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেননি বাবা আব্দুল কুদ্দুস। স্বজনেরা কফিনের কাছ থেকে জোর করে একটু ফাঁকে নিয়ে যান তাকে। কফিন দুটি তোলা হয় লাশবাহী গাড়িতে।

লিবিয়ায় নিহত দুই সন্তানের লাশ শুক্রবার সকাল সাতটার দিকে হজরত শাহজালাল (র.) বিমান বন্দরের ৮ নম্বর গেটের বাইরে কফিনে ঢাকা। লাশবাহী গাড়িটি লাশের মাথার কাছে দাঁড়ানো। চলছে বাবার নীরব কান্না আর আত্মীয়-স্বজনদের আহাজারি!

একসঙ্গে রাখা দুটি কফিনে আটকানো দুই ছেলের ছবির ওপর বাবার গামছা দিয়ে বৃষ্টির পানি মুছে দেওয়ার এ দৃশ্য দেখে উপস্থিত সবাই হতভম্ব! এ সময় আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও উপস্থিত লোকজন চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি।

একটু দূরে যারা দাঁড়িয়ে ছিলেন, তারাও সন্তান-হারা বাবার বোবা কান্নায় চোখের পানি ফেলছেন। বৃষ্টির পানিতে অনেকের চোখের পানি মিশে গেলেও কষ্টের ছাপ উপস্থিত সব মানুষের চোখে-মুখে দেখা গেছে।

গত ২১ জুন রাতে লিবিয়ার স্থানীয় সময় রাত সোয়া ১০টায় বেনগাজি শহরের সামা লিবিয়া নামে একটি পানি বিশুদ্ধকরণ কারখানার আবাসিক ক্যাম্পে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মোহাম্মদ মিলন ও মোহাম্মদ স্বপন মারা যান। শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের দুই সন্তান এরা।

এদিকে, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে অপেক্ষার পর শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় টার্কিশ এয়ারলাইন্সের ৭১২/০৩ ফ্লাইটে নিহত দুই ভাইয়ের লাশ ঢাকার শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।

সকাল সাতটার দিকে বিমানবন্দর থেকে তাদের লাশ হস্তান্তর করা হয়।

লাশ দাফনের জন্য সরকার থেকে ৩৫ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয় বাবা আব্দুল কুদ্দুসের হাতে। জানিয়ে দেওয়া হয়, আর্থিক অনুদান হিসেবে দুই ছেলের পরিবারের জন্য আরো তিন লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আজাহারুল হক দাফন সম্পন্ন করার জন্য খরচের ৩৫ হাজার করে দুটি চেক তুলে দিয়ে এ কথা জানান।

এ সময় ওয়েজ ওনার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক (অর্থ ও কল্যাণ) উপসচিব মহসিন চৌধুসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

দুই ছেলের লাশ নিতে বাবা আব্দুল কুদ্দুসের সঙ্গে এসেছিলেন বড় ছেলে জসিম ছৈয়াল। এসেছিলেন চাচা, চাচাতো ভাই এবং অন্য আত্মীয়রা-স্বজনরাও।

গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেই দুই ভাইয়ের লাশ দাফন সম্পন্ন করবেন বলে জানান তারা! এর মাধ্যমেই শেষ হবে স্বপ্ন ছোঁয়ার ব্যর্থ চেষ্টা! –

সুত্র – বাংলা নিউজ ২৪

Leave a comment

You must be Logged in to post comment.