অনুমতি ছাড়া কারো কম্পিউটারে ঢুকলে ১৪ বছর জেল
আপনি যদি অন্য কারো কম্পিউটারে তার অনুমতি ব্যাতিরেকে প্রবেশ করেন বা অন্য কোন ব্যক্তিকে প্রবেশ করতে সহায়তা করেন তাহলে আপনার ৭ থেকে ১৪ বছরের জেল হতে পারে। শুধু তাই নয় এই অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় আপনি জামিনও পাবেন না। এমনকি বিনা পরোয়ানায় পুলিশ আপনাকে গ্রেফতার করতে পারবে। ২০১৩ সালে সংশোধিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ এ এই বিধান করা হয়েছে। আইন বিশেষজ্ঞরা এটিকে একটি বিপজ্জনক আইন বলে অভিহিত করেছেন।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এর মাধ্যমে তরুণ সমাজকে একটি ভীতিকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে। এই আইনের সবচেয়ে বিপজ্জনক হচ্ছে ৫৭ ধারা। এই ধারাকে এমনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে যার কারণে ইন্টারনেটের যে কোন কর্মকাণ্ডকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া সংবাদপত্রের অনলাইনে বা ওয়েবসাইট বা ফেসবুকে বা ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে প্রকাশ বা সম্প্রচার করা কোন কিছু মিথ্যা বলে প্রমাণিত হলে একই দণ্ড হবে। আপনার বিরুদ্ধে যদি মিথ্যা অভিযোগও হয় তবু মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আপনার জামিন মিলছে না।
এই আইনের অপরাধসূমহ
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৪ থেকে ৬৫ ধারা পর্যন্ত কোন কোন কর্মকাণ্ড অপরাধ তার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫৪ ধারায় উল্লেখ রয়েছে, (১) যদি কোন ব্যক্তি কোন কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মালিক বা জিম্মাদারের অনুমতি ব্যতিরেকে-
(ক) তার ফাইলে রক্ষিত তথ্য বিনষ্ট করার বা ফাইল থেকে তথ্য উদ্ধার বা সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে ঐ কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করেন বা অন্য কোন ব্যক্তিকে প্রবেশ করতে সহায়তা করেন;
(খ) কোন কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক থেকে কোন উপাত্ত, উপাত্ত-ভাণ্ডার বা তথ্য বা তার উদ্ধৃতাংশ সংগ্রহ করেন বা স্থানান্তরযোগ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থায় রক্ষিত বা জমাকৃত তথ্য (removable storage medium) বা উপাত্তসহ ঐ কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কের তথ্য সংগ্রহ করেন বা কোন উপাত্তের অনুলিপি বা অংশ বিশেষ সংগ্রহ করেন;
(গ) কোন কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোন ধরনের কম্পিউটার সংক্রামক বা দূষক বা কম্পিউটার ভাইরাস প্রবেশ করান বা প্রবেশ করানোর চেষ্টা করেন;
(ঘ) ইচ্ছাকৃতভাবে কোন কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, উপাত্ত, কম্পিউটারের উপাত্ত-ভাণ্ডারের ক্ষতিসাধন করেন বা ক্ষতিসাধনের চেষ্টা করেন বা ঐ কম্পিউটার, সিস্টেম বা নেটওয়ার্কে রক্ষিত অন্য কোন প্রোগ্রামের ক্ষতি সাধন করেন বা করার চেষ্টা করেন;
(ঙ) ইচ্ছাকৃতভাবে কোন কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম বা নেটওয়ার্কে বিঘ্ন সৃষ্টি করেন বা করার চেষ্টা করেন;
(চ) কোন কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে কোন বৈধ বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কোন উপায়ে প্রবেশ করতে বাধা সৃষ্টি করেন বা করার চেষ্টা করেন;
৫৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে, কোন কম্পিউটার, কম্পিউটার প্রোগ্রাম, কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে ব্যবহূত কম্পিউটার সোর্স কোড, গোপন, ধ্বংস বা পরিবর্তন করেন, বা অন্য কোন ব্যক্তির মাধ্যমে ঐ কোড, প্রোগ্রাম, সিস্টেম বা নেটওয়ার্ক গোপন, ধ্বংস বা পরিবর্তন করার চেষ্টা করেন এবং ঐ সোর্স কোডটি যদি আপাততঃ বলবত্ অন্য কোন আইন দ্বারা সংরক্ষণযোগ্য বা রক্ষণাবেক্ষণযোগ্য হয়, তাহলে তাহার এই কাজ হবে একটি অপরাধ?
৫৭ ধারায় বলা আছে, (১) কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েব সাইটে বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সমপ্রচার করেন, যা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পড়লে, দেখলে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসত্ কাজে আগ্রহী হতে পারেন অথবা যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করা হয়, তাহলে তার এই কাজ হবে একটি অপরাধ?