মস্তিষ্কের ক্যান্সার সম্পর্কে ১০ তথ্য
মস্তিষ্কে যখন ক্যান্সারের টিস্যু ও কোষ জন্ম নেয় এবং বাড়তে বাড়তে একসময় বড় আকার ধারণ করে ও মস্তিষ্কের কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করতে শুরু করে, তখন ওই বর্ধিত ক্যান্সারের একত্রিত হওয়া দূষিত কোষগুলোকে বা মাংসপিণ্ডকে ‘ব্রেইন টিউমার’ বলা হয়, যার পরবর্তী পর্যায় হলো মস্তিষ্কের ক্যান্সার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) একটি সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, মস্তিষ্কের ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা খুব বেশি না হলেও প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে এ রোগে ২২ হাজার মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হন এবং এ রোগে প্রতি বছর প্রাণহানির সংখ্যা গড়ে ১৩ হাজার। তাই এই রোগের ব্যাপারে সচেতনতা এখন ভীষণ প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই মস্তিষ্কের ক্যান্সারের বিষয়ে ১০টি তথ্য জেনে নিন এখনই-
১. মস্তিষ্কের ক্যান্সারে আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষের মধ্যে রোগটি শনাক্ত করা সম্ভব হয় যখন তা মাঝামাঝি পর্যায়ে থাকে- অর্থাৎ দেহের অন্য কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গে সৃষ্ট ক্যান্সারের কোষ ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে যখন মস্তিষ্কে এসে পৌঁছায় এবং সেখানে বিস্তৃত হতে শুরু করে, তখন এটি মস্তিষ্কে ক্যান্সারের মাঝামাঝি পর্যায়। এরপর মস্তিষ্কের ক্যান্সারের সবচেয়ে সাধারণ ধরনটি হলো- গ্লিওব্যালাস্টোমা। এটি হলো মস্তিষ্কের ক্যান্সারের একদম প্রাথমিক ও সবচেয়ে সাধারণ পর্যায়।
২. গ্লিওব্যালাস্টোমা অর্থাৎ প্রাথমিক পর্যায়ে মস্তিষ্কের ক্যান্সার শনাক্ত করা সম্ভব হলে প্রাথমিক চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি- সবসহ এই রোগ পুরোপুরি নির্মূল হতে সময় নেয় ১০ মাস থেকে এক বছর। আর মস্তিষ্কের ক্যান্সার যদি মাঝামাঝি পর্যায়ে এসে ধরা পড়ে, তাহলে ক্যান্সারের কোষের আকৃতি ও দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে তা ছড়িয়েছে কিনা কিংবা কতখানি ছড়িয়েছে এবং প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সারের চিত্র- ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে এর নির্মূল হওয়া বা না হওয়ার সম্ভাবনা।
৩. মস্তিষ্কের ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো- তীব্র মাথাব্যথা ও তীব্রতা বাড়তে থাকা, হঠাৎ কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অবশ হয়ে আসা, হাত বা পায়ের পেশিতে দুর্বলতা বা কথা বলায় জড়তা বা হাঁটতে সমস্যা বা দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসার মতো কেন্দ্রীয় স্নায়ুর কার্যক্ষমতা দুর্বল হয়ে যাওয়ার নানা লক্ষণ, আচরণগত পরিবর্তন ইত্যাদি।
৪. মস্তিষ্কের ক্যান্সারের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো মাথাব্যথা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- এই মাথাব্যথা দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর আকার ধারণ করতে থাকে এবং এর স্থায়ীত্বও দিন দিন বাড়তে থাকে। আক্রান্ত অধিকাংশ ব্যক্তির মধ্যেই সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরই এই মাথাব্যথা হতে দেখা যায়।
৫. মস্তিষ্কের ক্যান্সারের চিকিৎসার ধরন নির্ভর করে ক্যান্সারের ধরনের ওপর। প্রাথমিক পর্যায়ের ক্যান্সারের প্রথম চিকিৎসাই হলো অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষের মাংসপিণ্ডটি ফেলে দেয়া এবং তারপর প্রয়োজনীয় কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপির মাধ্যমে ক্যান্সারের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কোষ ও ট্যিসু পুরোপুরি নির্মূল করা। মাঝামাঝি পর্যায়ে মস্তিষ্কের ক্যান্সার শনাক্ত করা হলে এর চিকিৎসার ধরন নির্ভর করে ক্যান্সার কতখানি ছড়িয়েছে, ক্যান্সার আক্রান্ত টিউমার বা মাংসপিণ্ডের সংখ্যা কতগুলো ইত্যাদির ওপর। সে অনুযায়ী অস্ত্রোপচার এবং কেমো বা রেডিওথেরাপি দেয়া হয়। তারপর প্রয়োজনে আরো বড় ধরনের অস্ত্রোপচার করতে হতে পারে।
৬. মস্তিষ্কে অনেক ধরনের টিউমার বা মাংসপিণ্ড তৈরি হতে পারে। তবে সব মাংসপিণ্ড একরকম হয় না এবং সব মাংসপিণ্ড থেকে ক্যান্সারও হয় না।
৭. ২০ বছরের নিচে শিশু, কিশোর-কিশোরীদের মস্তিষ্কেও মাংসপিণ্ড সৃষ্টি হতে পারে, তবে সবসময় তা ক্যান্সার হয় না। সাধারণত ৫ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের মস্তিষ্কের মাংসপিণ্ড বা টিউমার ক্যান্সারের রূপ ধারণ করে থাকে।
৮. মস্তিষ্কের ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হলো তেজস্ক্রিয় বিকিরণ।
৯. পারিবারিক ইতিহাসে পূর্বসূরীদের কারো মস্তিষ্কে ক্যান্সার হলে তা পরবর্তী প্রজন্মকেও ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। মস্তিষ্কে ক্যান্সারের অন্যতম কারণ এটিই।
১০. যদি মস্তিষ্কের ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা সম্ভব হয়, তাহলে সে ক্যান্সার পুরোপুরি সেরে গেলে পরবর্তীতে প্রয়োজনে তার দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অন্যের দেহে প্রতিস্থাপন করায় কোনো বাধ্যবাধকতা থাকে না। কিন্তু যাদের ক্যান্সার শনাক্ত হয় মাঝামাঝি পর্যায়ে এসে, তারা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলেও কখনো নিজের কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান করতে পারবেন না। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানও ক্যান্সারের সুনির্দিষ্ট কারণ বা চিকিৎসা বের করতে পারেনি। তাই যদি শুরু থেকেই সচেতন হওয়া যায়, কেবল তাহলেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেও মৃত্যুর ভয়াল থাবা থেকে ফিরে আসার কিছুটা হলেও সুযোগ থেকে যায়। অতএব? সময় থাকতে আগেই সচেতন হোন।