মিসরে অভ্যুত্থান,মুরসিকে সরিয়ে দিয়েছে সেনাবাহিনী
গতকাল বুধবার রাতে গণবিক্ষোভের মুখে দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র এক বছরের মাথায় গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে সরিয়ে দিয়েছে সেনাবাহিনী। একই সঙ্গে দেশের সংবিধান স্থগিত করে প্রধান বিচারপতি আদলি মানসুরকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান করা হয়েছে।
গতকাল রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি বলেন, দেশকে বাঁচাতে মুরসিকে সরিয়ে দিয়ে সেনাবাহিনী তাদের ‘ঐতিহাসিক দায়িত্ব’ পালন করেছে। মুরসি ক্ষমতা ভাগাভাগিতে বিরোধীদের দাবি পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন।
সেনাপ্রধান টেলিভিশনে ভাষণ দেওয়ার সময় মুরসিবিরোধী লাখ লাখ উৎফুল্ল মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। তারা স্লোগান দিতে থাকে, ‘জনগণ-সেনাবাহিনী ভাই ভাই।’
প্রায় দুই বছর আগে ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছিল তাহরির স্কয়ার। ব্যাপক গণবিক্ষোভের মুখে তাঁকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল। তাঁর পদত্যাগের পর বাঁধভাঙা উল্লাস করেছিল মিসরের জনগণ।
মুরসিসহ ক্ষমতাসীন ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির কয়েকজন নেতার দেশত্যাগের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সেনাবাহিনী। এর আগে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদসহ রাজধানী কায়রোর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ট্যাংক, সাঁজোয়া যানে সজ্জিত সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
রাষ্ট্রীয় আল-আহরাম পত্রিকায় বলা হয়, স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাতটার দিকে সেনাপ্রধান সিসি প্রেসিডেন্ট মুরসিকে জানিয়ে দেন, তিনি আর মিসরের প্রেসিডেন্ট নেই।
সিসি ভাষণে বলেন, দেশের সংবিধান স্থগিত করা হয়েছে। নতুন করে পার্লামেন্ট নির্বাচন এবং আগাম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সর্বোচ্চ সাংবিধানিক আদালতের প্রধান আদলি মানসুর স্থলাভিষিক্ত হবেন মুরসির।
সেনাপ্রধান যখন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ভাষণ দিচ্ছিলেন, তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিরোধী জোটের নেতা মোহাম্মদ এল বারাদি, আল-আজহারের প্রধান ও কপটিক গির্জার প্রধান। জনতা মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পক্ষে—এমনটা বোঝাতে এই তিনজনকে সেখানে নেওয়া হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে মুরসির কার্যালয় সেনাবাহিনীর এই উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করে এটিকে ‘অবৈধ’ বলে উল্লেখ করেছে। প্রেসিডেন্টের ফেসবুক ও টুইটারে বলা হয়, দেশের স্বাধীন মানুষ এই ক্ষমতাচ্যুতিকে সুস্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করবে। তিনি বেসামরিক-সামরিকসহ সর্বস্তরের মানুষের প্রতি সংবিধান মেনে চলার এবং শান্তিপূর্ণভাবে এই ‘অভ্যুত্থান’ প্রতিহত করার আহ্বান জানান। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর মুরসিকে কোথায় রাখা হয়েছে, সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।