আজ মহান স্বাধীনতা দিবস
আজ ২৬ মার্চ। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। আজ থেকে ৪৩ বছর আগে ১৯৭১ সালের আজকের দিনটিতেই আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটেছিল বাঙালির সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের। ডাক এসেছিল দেশকে হানাদারের কবল থেকে মুক্ত করার। পাকিস্তানি শোষকের হাত থেকে প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাংলার দামাল ছেলেরা। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। জাতি অর্জন করে একটি দেশ, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত।
গোটা জাতি আজ শোক ও গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে অবনতচিত্তে স্মরণ করবে স্বাধীনতার জন্য আত্মোত্সর্গকারী শহীদদের। শ্রদ্ধা জানাবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, চার জাতীয় নেতাসহ বাংলার অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। পাশাপাশি গোটা দেশ মেতে উঠবে স্বাধীনতার উৎসবে।
জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত’ এ বছরের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। একসঙ্গে তিন লাখ মানুষের সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে গড়বে বিশ্বরেকর্ড।
আজকের দিনটি জাতির জীবনে বিশেষ তাৎপর্যময়। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পরপরই একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে গণধিকৃত যুদ্ধাপরাধীদের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু করেছে। জাতির প্রাণের দাবি ও সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে শুরু হওয়া এই বিচার প্রক্রিয়ায় আটজন চিহ্নিত ও শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। রায় কার্যকর হয়েছে একজনের। চলতি বছরের মধ্যে আরো কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর রায় কার্যকরসহ বিচার শেষ করার প্রক্রিয়াও চলছে। আজকের দিনটিতেও গোটা জাতি মুক্তিযুদ্ধের অগণিত শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি দ্রুত সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও সে বিচারের চূড়ান্ত রায় কার্যকরের মাধ্যমে কলঙ্কমোচন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দাবিতে সোচ্চার থাকবে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরুর পর মধ্যরাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবন থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রপ্তোরের আগ মুহূর্তে দেওয়া সে ঘোষণায় বঙ্গবন্ধু শত্রুসেনাদের বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করতে দেশবাসীকে নির্দেশ দেন। তৎকালীন ইপিআরের ওয়্যারলেস থেকে সে বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয় দেশের সর্বত্র। বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণায় সেদিনই ঐক্যবদ্ধ সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে গোটা জাতি।
পরদিন ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ-অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান (পরবর্তীকালে সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি) বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার আরেকটি ঘোষণা পাঠ করেন।
১৭ এপ্রিল তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার নিভৃত এক আমবাগানে শপথ নেয় স্বাধীন বাংলার অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার। এ আমবাগানকে পরে ‘মুজিবনগর’ নামকরণ করে বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী ঘোষণা করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত এই সরকারের নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক কাঠামো লাভ করে।
অবশ্য পাকিস্তানি হানাদারের কবল থেকে দেশ মুক্ত করার এ প্রতিরোধ লড়াই শুরু হয়েছিল আগে থেকেই। একাত্তরের অগ্নিঝরা উত্তাল মার্চের নানা ঘটনার ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের আহ্বানে গোটা জাতি মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিল। আর ২৬ মার্চের বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণায় সূচনা ঘটে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন। পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে স্বাধীনতার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাঁরা।